মুফতি আহসান শরিফ
আজ শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। মুমিনহৃদয় এগারো মাস অপেক্ষায় থাকে রমজানের। কখন দেখবে আকাসে সরু বাঁকা চাঁদের হাসি। আসবে রমজান। আসবে তারাবি। হৃদয়আবেগের সবটুকুন মিশিয়ে শুনবেন খতমে তারাবির মধুর তিলাওয়াত। আস্বাদন করবেন রাত জেগে ইবাদতের অসামান্য স্বাদ।
রমজানকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয় মুসলিমবিশ্ব। জামা, টুপি, তাসবিহ, জায়নামাজ, মসজিদ, নামাজের ঘর এবং হাট বাজারেও দেখা যায় এ প্রস্তুতির ছোঁয়া। ব্যবসা, কাজকর্ম বা দুনিয়ার সব জামেলা চুকিয়ে মুমিন বান্দা নিজেকে মগ্ন করেন রমজানের ইবাদতে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। বলতে থাকতেন, আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগ না রামাদান। মাবুদ, রজব এবং শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন। রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াত দীর্ঘ করুন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের জন্য অধীর আগ্রহে কেন থাকতেন? কেনইবা রমজান আগমনের অপেক্ষা করতেন? মনের অকৃত্রিম আকাঙ্খা রমজান আসুক, আমি তা পেয়ে যাই। কারণ, মহান আল্লাহ রমজান মাসকে নিজের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সাধারণত আমরা মনে করি রমজানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছে। এ মাসে তারাবিহের নামাজ রয়েছে, এ সব। প্রকৃতপক্ষে এর তাৎপর্য এখানেই শেষ নয়। রোজা, তারাবিহ এ সব ইবাদত তো অবশ্যই। তবে এ ইবাদতের মূলে অন্য একটি মহান বিষয় লুকিয়ে আছে, তা হচ্ছে মহান আল্লাহ এ মাসকে নিজের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এতে যে সব বান্দা এগারো মাস পার্থিব ব্যস্ততায় গাফলতের নিদ্রায় বিভোর থাকে এবং আমার থেকে দূরে থাকে, এ এক মাসে আমি তাদেরকে আমার নৈকট্য দান করি। আমি তাদেরকে বলি বান্দা, তোমরা আমার নৈকট্য থেকে বহু দূরে সরে পড়ে ছিলে, দুনিয়ার ধ্যান, খেয়াল নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। তোমাদের চিন্তা চেতনা, তোমাদের কাজকর্ম, তোমাদের দৌঢ়ঝাপ, সব দুনিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ছিল। এখন আমি তোমাদেরকে একটি মাস দান করছি, এ মাসে তোমরা আমার নিকট এসে যাও এবং সঠিকভাবে জীবন যাপন কর। এতে আমি তোমাদেরকে নৈকট্য দান করব। কেননা, এটি আমার নৈকট্য অর্জনের মাস।
রমজানের চাঁদ দেখাও একটি ইবাদত। ইফতারের সময় শুরু হলেই ইফতার করা এবং সাহরির শেষ সময়ে সাহরি খাওয়া এগুলো ইবাদত। ইফতারির সময় হয়ে গেলে বিলম্ব করা অনুচিত। এভাবে সময় হাতে রেখে আগে আগে সাহরি খেয়ে নেয়াও উত্তম নয়।
রমজানের বিশেষ ফজিলত: এ মাসে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদিকে বিশেষ পাঁচটি বিষয় দান করেছেন, যা অন্য কোন উম্মতকে দেননি। বাইহাকি ৩৬০২ নং হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আগের কোন উম্মতকে দান করা হয়নি।
রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়ে বেশি ভাল লাগে। রোজাদারের প্রতি আল্লাহ এত বেশি খুশি হন, তার কোন কিছুই আল্লাহর কাছে খারাপ লাগে না। রোজাদার আল্লাহর প্রিয় হন বলে তার সব কিছুই আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়।
রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করতে থাকে।
রোজাদারের জন্য মহান আল্লাহ প্রতিদিন জান্নাতকে নতুনরূপে সাজাতে থাকেন। রমজান মাসে বড় বড় শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়। এতে অন্য মাসের মতো এ মাসে শয়তান ধোকা দিতে সক্ষম হয় না।
রমজান উপলক্ষে রোজাদারদেরকে ক্ষমা করা হয়। বিশেষ করে শেষ দিনে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। এ ছাড়া রমজান মাসে নেক আমলের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের একটি ওমরা অন্য মাসে একটি হজের সমতূল্য সওয়াব। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসে বর্ণিত রমজানের এসব ফজিলত পাওয়ার জন্য রোজা সহিহভাবে আদায় করতে হবে। রোজার হক পুরোপুরিভাবে আদায় করতে হবে। মিথ্যা কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। পরনিন্দা, পরসমালোচনা, পরের হক নষ্ট করা, গালি দেয়া, গান শোনা, চোখের অপব্যবহার এবং সবরকম অপকর্ম ও অনর্থক কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা পারবো তো, নিজের জীবনকে নবীজীর আদর্শে ঢেলে সাজাতে? রমজানের ফজিলত লাভে ধন্য হতে? মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা, ঝাউচর, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
-এটি