মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

অসুস্থতাও আল্লাহর নেয়ামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।তাশরীফ আহমদ।।

আমরা অধৈর্য হয়ে পরি, আমাদের মনের বাসনা যে সুখময় মূহুর্তগুলো যেন চিরস্থায়ী হয়। অথচ আনন্দের সেই মূহূর্তগুলোতে আমরা আল্লাহকে ভুলে যাই। ছন্নছাড়া এই জীবন যখন রবের থেকে বিমুখ হয়ে যায় তখন তিনি সামান্য কিছু ক্ষতি-নামক নেয়ামত পাঠান। অসুস্থতা তার মধ্যে একটি।

ক্ষতি আবার নেয়ামত? চলুন স্পষ্ট হ‌ই। সুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে অসীম এক নেয়ামত। কিন্তু কখনো কখনো সুঠাম দেহের তাগড়া এই শরীর আমাদেরকে ভুলিয়ে দেয় রবের ডাকে সাড়া দেয়ার কথা।আমরা দুনিয়ার আনন্দ উল্লাসে মেতে আল্লাহকে ভুলে যাই। তখন আল্লাহ আমাদেরকে এমন কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন যার বদৌলতে আমরা পুনরায় রাব্বুল আলামীনকে ডাকি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল এক এহসান, ফিরে আসার একটা সুযোগ। কিন্তু আফসোস আল্লাহর উত্তম এই পরিকল্পনাকে আমরা অনেকেই মানতে নারাজ। সামান্য বা খুব বেশি অসুস্থ হলে আমরা বলি 'আল্লাহ এত কষ্ট আর ভালো লাগে না এর চেয়ে ভালো আমাকে মৃত্যু দান করুন'। (নাউ'যুবিল্লাহ)

ওয়াল্লাহি, একজন মুমিন কখনো এরূপ মন্তব্য করতে পারে না। অসুস্থতার সাময়িক এই কষ্ট মৃত্যুর যন্ত্রনার কাছে কিছুই না। অসুস্থ হলে আমরা হতাশ হয়ে পরি, পেরেশান হয়ে যাই। না প্রিয় ভাই ও বোন! মুমিন বান্দা অসুস্থ হলে অজানা এক শান্তি অনুভব করার কথা, আশে পাশের সহস্র মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে বেছে নিয়েছেন এই নেয়ামত দান করবেন বলে। হয়তো রাব্বুল আলামীন ঐ ব্যক্তির ডাক, তাঁর কাছে বারংবার চাওয়াটা পছন্দ করেছেন তাই সাময়িক কিছু পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। আল্লাহ বলেন - ‌“এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরিক্ষা করবো কিছুটা ভয়,ক্ষুধা,মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল ফসলাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের" [আল বাকারাঃ১৫৫]

দেখেন একজন ব্যক্তি যে কখনো আল্লাহ কে স্মরণ করে না,নামাজ পড়ে না, অথচ ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা আয় করে, কখনো রোগাক্রান্ত হয়না এর মানে কি এই যে আল্লাহ তার উপর খুব খুশি? আল্লাহর আনুগত্য যেটা সবচেয়ে বড় রহমত তার ভেতর তো সেটাই নেই।

একজন লোক যে আল্লাহর জন্য পাগল-পারা। কখনো নামাজ ছুটে না কিন্তু ব্যবসায় মন্দা,রোগ ব্যাধি লেগেই থাকে,একের পর এক কষ্ট, তার মানেই কি আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট?

না আমরা ভাই। সবসময় এমনটা হয় না। তার ঐ সুখ সেটা কিছু সময়ের, অপরজনের ঐ দুঃখ তাও কিছু সময়ের। এর মানে আবার এই নয় যে, আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকে সবসময় অশান্তিতে রাখেন আর যাকে অপছন্দ করেন তাকে শান্তিতে রাখেন। বস্তুত যে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলে এবং তারপরে গিয়ে আনন্দের জীবন-যাপন করে সেই প্রকৃত সুখী। আবার যে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলে আবার কষ্টেও আছে নিশ্চয়ই সেটা তার জন্য পরিক্ষা, এবং সে যদি সবরকারী হয় অচিরেই সে সুসংবাদ ও পুরস্কারপ্রাপ্ত হবে। (আল্লাহু আ'লাম) আল্লাহ বলেন - “নিশ্চ‌ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে" [সূরা আল ইনশিরাহ্:৫]

অসুস্থ হলে আমরা যেন ভেঙে না পরি। আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামত আমরা যেন আলিঙ্গন করে নেই,আমরা যেন আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভিযোগ না করি। আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত কিছু বান্দাকে আল্লাহ দুনিয়াতেই দুঃখ কষ্টের মাধ্যমে তার গুনাহের হালকা শাস্তি দিয়ে থাকেন তাকে দুনিয়াতেই পরিশুদ্ধ করে দেন, বস্তুত এটাতো শাস্তি নয় বিশাল এক অনুগ্রহ। সেই ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার জন্য হয়তো আর বাঁধাই থাকবে না। রোগের মাধ্যমে তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের গুনাহ্ মোচন করে দেন।

রাসূল (সা:) বলেন - “কোনো মুসলিম যখন কোনো কষ্টের মুখোমুখি হয়, তখন আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহসমূহ এমনভাবে ঝেড়ে ফেলে দেন, যেমন গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়।”[বুখারী: ৫৬৪৭]

"রাসূল (সা:) একদা আয়েশার (রা.) কাছে গেলেন। দেখলেন আয়েশা কপালে একটি জলপট্টি দিয়ে আছেন এবং ব্যথার প্রকোপে কাঁপছেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে তোমার আয়েশা?’ বলেন, ‘জ্বর হয়েছে। আল্লাহ দ্রুত আরোগ্য দান করুন।’ রাসূল (সা:) বলেন, ‘জ্বরকে মন্দ বলো না। এটি বনি আদমের গুনাহকে এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে আগুন শুকনো লাকড়িকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়।" [মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৫]

আল্লাহ আমাদের জন্য উত্তম পরিকল্পনা করে রেখেছেন যা হয়তো আমাদের চিন্তাতেও আসে না। আমাদের জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং সবর করতে হবে। আল্লাহ আমাকে এবং আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ