সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দিয়ারে ইয়াসিন গণহত্যার ৭৩ বছর: শত শত শহীদের তালিকার সন্ধান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওলিউর রহমান।।

দিয়ারে ইয়াসিন গণহত্যার কথা মনে আছে? ৭৩ বছর আগে কুদসের পশ্চিমাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী ইয়াহুদিদের পরিচালিত ভয়ঙ্কর গণহত্যার কথা? অবশ্য জায়নবাদীরা ফিলিস্তিনে এত বেশি গণহত্যা চালিয়েছে এবং প্রত্যেকটাই এত ভয়ঙ্কর যে, ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল ১ দিনে ৩০০ মানুষ হত্যার ঘটনাটি কারো হয়ত আলাদা করে মনে নাও থাকতে পারে।

সেদিনের সকালটি দিয়ারে ইয়াসিনবাসীর জন্য ছিল বিভীষিকাময়। ভোরের আলো ফোটার আগেই জনপদে ঢুকে পড়েছিল শ' য়ে, শ' য়ে ইয়াহুদি। হাতে দা, বল্লম, ছুরি, কুঠার। কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকজনের ধর থেকে কল্লা নামিয়ে দিল সন্ত্রাসীরা। ত্রাস ছড়িয়ে পড়ল জনপদজুড়ে। সেদিন একযোগে ফিলিস্তিনের বেশ কয়েকটি উপত্যকায় হামলা চালানো হয়েছিল। তবে দিয়ারে ইয়াসিনে সংগঠিত হওয়া পাশবিকতা-বর্বরতা হতভম্ভ করে তুলেছিল জনপদবাসীকে।

এ ঘটনার একমাস পরে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে গভীর ষড়যন্ত্র এবং আদিবাসীদের উৎখাতের মাধ্যমে দখলকৃত ভূমি নিয়ে ইয়াহুদিদের দীর্ঘকালের পরমাখাঙ্ক্ষা "ইসরায়েল'' রাষ্ট্র ঘোষিত হয়। সহজেই অনুমান করা যায়, ৯ এপ্রিল ফিলিস্তিনে চালানো গণহত্যা ছিল দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরাসরি মাঠ দখল করা। অবশ্য এর আগে-পরে আরও অগণিত গণহত্যা জায়নবাদীরা ঘটিয়েছে ফিলিস্তিনে। ফলে একসময়ের ভূমিপুত্ররা এখন সেখানে মানবেতর শরণার্থী-জীবন কাটায়।

দিয়ারে ইয়াসিনে সেদিন ছুরি দিয়ে গলা কেটে জবাই করে, দা দিয়ে অঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করে, বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং কুঠার দিয়ে লাকড়ি ছেড়ার মতো কুপিয়ে ৩০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গুণে গুণে ২৫ জন গর্ভবতী নারীর পেট কেটে ফেলা হয়। ২৫ টি শিশুকে গলা কেটে জবাই করা হয়। ৯ তারিখ ভোর থেকে ১০ তারিখ দুপুর পর্যন্ত চলে এ বীভৎস হত্যাযজ্ঞ।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইসরায়েলের ষষ্ট প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিনের নেতৃত্বে সেদিনের গণহত্যা পরিচালিত হয়েছিল। ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইয়াহুদি রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্রে যেহেতু তদানীং পরাশক্তিগুলোর সরাসরি মদদ ছিল তাই ভয়ঙ্কর এই গণহত্যার বিরুদ্ধে তেমন প্রতিবাদ হতে দেখা যায়নি। বরং এই গণহত্যার অন্যতম কুশলী বেগিনকে পরবর্তীতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।

আজ দিয়ারে ইয়াসিন গণহত্যার ৭৩ বছর পূর্ণ হল। পৃথিবী ভুলে গেলেও ফিলিস্তিনিরা ভুলতে পারে না ভয়াবহ সেই কালো দিনটির কথা। কেবল গণহত্যা নয়; প্রতিটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাই উপত্যকাবাসী লিখে রাখে ডায়েরির পাতায়। উত্তরসূরীদেরকে দিয়ে যায় শহিদদের নামের তালিকা সংরক্ষণের এবং সংযোজনের গুরু দায়িত্ব। যুগ যুগ ধরে চলছে এই কর্মধারা।

গণহত্যার চাক্ষুস সাক্ষী মুহাম্মদ রিদওয়ান নামের একজন বৃদ্ধ ফিলিস্তিনি ৭৩ বছর ধরে সংরক্ষণ করে চলেছেন দিয়ারে ইয়াসিনের সেদিনের শহিদদের নামের তালিকা। সম্প্রতি খোঁজ মিলেছে বিবর্ণ সেই অমূল্য তালিকাটির।

আল জাজিরা আরবি থেকে অনুবাদ

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ