আবদুর রশীদ।।
বাস্তবতার এই ক্ষণিকের দুনিয়া প্রতিটি সৃষ্টি সূচনায় থাকে শক্তিশালী ও তেজস্বী এবং প্রতিটি সৃষ্টিই একদিন সব শক্তিমত্তা হারিয়ে ঘটে তার সমাপ্তি৷ বাস্তবতার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সত্য ও কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে মৃত্যু৷ এমন হাজারো বিষয় বা বাস্তবতা রয়েছে যা থেকে মিথ্যা দিয়ে আর অস্বীকার করে পার পাওয়া সম্ভব হলেও মৃত্যু নামক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা থেকে কোনোরূপ অজুহাত ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পালিয়ে বাঁচা সম্ভব নয়৷ এটা এমন এক কঠিন বাস্তবতার সারি, যে সারিতে সমস্ত সৃষ্টিকে শামিল হতে হয়৷
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে ৷ (সূরা: আল-ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যু নামক বাস্তবতা এত কঠিন এবং এতই করুণ যে, যা ক্ষণস্থায়ী জগতে জুড়ানো হাজার স্মৃতি, স্নেহময়ী তৈরি করা বন্ধন, লালন করা সুউচ্চ স্বপ্ন ও ন্যায়-অন্যায়ভাবে অর্জন করা ক্ষমতার বাঁধ এক নিমিষেই ধ্বংস করে দেই৷ এত মায়া জুড়ানো সবকিছুর পরিসমাপ্তি একমাত্র মৃত্যুই ঘটিয়ে থাকে৷ এর পরও দেখো মানুষের উচ্ছাভিলাষীতার কোনো কমতি নেই বরং আরো বেড়েই চলছে৷
মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী ৷ (সূরা: আল-ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
দুনিয়ার মোহে পড়ে অনেকে কতই না হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠে যেন দুনিয়াটা তাদের জন্য চিরস্থায়ী৷ এই দুনিয়া আসলে কারো একার সম্পত্তি হয়নি কখনো৷ লোভ আর হিংসার বসে বলে থাকে এটা আমার, ঐটা আমার৷ অতচ আদৌ তাদের একার কিছু হবে না৷ আর এটাই দুনিয়ার রীতি৷ আহা! কত মানুষ মিথ্যে ক্ষমতার পোশাক পড়ে দেখায় দাপট, সরদার নামক খেতাব লাগিয়ে নিরীহদের উপর করে কত নির্যাতন আর উচ্চাভিলাষীতার রং মেকে হয়ে উঠে কত না হিংসাপরায়ণ। আসলে এ সবের কি মূল্য যদি একবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়?
এই দুনিয়া একটি পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে যার প্রস্তুতি যত ভালো হবে তত বেশি তার ভালো ফলাফল হবে ৷ মহান আল্লাহ্ তা'আলা পরকালীন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অনেক আগেই ফাঁস করে দিয়েছেন৷ এখন যার প্রস্তুতি যত ভালো হবে সে তত বেশি পরকালীন সাফল্য লাভ করতে পারবে৷ একজন পথচারী সূদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গোন্তব্যে পৌঁছাতে তার যাত্রায় পানির গুরুত্ব যত বেশি ৷ ঠিক পরকালীন সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে যাত্রায় থাকা সহীহ আমলের গুরুত্ব তত বেশি ৷ পানি ছাড়া যেমন জীবন কল্পনা করা যায় না তেমনি সহীহ আমল ছাড়াও পরকালীন মুক্তি আশা করা যায় না৷
ভাই, ছেড়ে দাও না সব ছলনা! একবার চোখ বন্ধ করলে তুমি দেখবে তোমার মৃত্যুর খবর মুহূর্তের মধ্যে যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে তখন তোমার প্রতিবেশী আর আত্মীয়-স্বজন ছুটে আসবে তোমায় শেষবার দেখতে৷ একদিকে তোমার বন্ধুরা তোমার গুনাগুনের গল্প করবে আর অন্যদিকে তোমার শত্রুরাও তোমার সমালোচনায় ব্যস্ত থাকবে৷
কেউ তোমার জন্য দোয়া আর কান্নায় রত থাকবে আবার কেউ তোমার মৃত্যুতে উল্লাস করবে আর অভিশাপ দিবে৷ তোমায় দ্রুত কবরে দিয়ে আসতে যত তাড়াহুড়া চলবে যেন তুমি ইতিপূর্বে কারোর কেউ ছিলে না৷ তিন দিন হয়তো বা সপ্তাহ পার হলে দেখবে তোমার সব কিছু তোমায় ভুলে যাবে৷ এমনকি তোমার রুমটাও তোমার জন্য খালি পড়ে থাকবে না৷ তোমার পাশে বলতে কিছুই থাকবে না আর ৷ শুধু তোমার কিছু স্মৃতি দুনিয়ায় থেকে যাবে আর তাও কালক্রমে হারিয়ে যাবে৷
মৃত্যু যখন সুনিশ্চিত আর এতসব কিছু যখন ধোঁকা তবে কেনই বা ছলনার মোহে পড়ে থাকবে অনন্তকালের যাত্রাকে উপেক্ষা করে? আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক, আমিন।
লেখক: ইংরেজি বিভাগ (৪র্থ বর্ষ), শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম৷
-এটি