আওয়ার ইসলাম: তারা উভয়ে [ইউসুফ (আ.) ও মিসরের রানি] দৌড়ে দরজার দিকে গেল আর ওই নারী তার [ইউসুফ (আ.)-এর] জামা পেছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে ওই নারীর স্বামীকে দরজার কাছে পেল। নারী (কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিজ স্বামীকে) বলল, ‘যে ব্যক্তি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো বা অন্য কোনো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেওয়া ছাড়া তার আর কী দণ্ড হতে পারে?’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ২৫)
তাফসির : এর আগের আলোচনায় বলা হয়েছিল, মিসরের অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী হজরত ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি ভীষণ আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ওই নারী তাঁর সঙ্গে পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার ফন্দিফিকির করতে থাকেন। একপর্যায়ে দরজা-জানালা বন্ধ এক নিভৃত ঘরে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে আটকিয়ে তিনি পাপকাজে লিপ্ত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু ইউসুফ (আ.) ওই নারীর কুপ্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। ওই নারী তাঁকে পেছন থেকে ধরার চেষ্টা করেন। এতে ইউসুফ (আ.)-এর জামার পেছন দিক ছিঁড়ে যায়। অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী ইউসুফ (আ.)-এর জামা এমনভাবে টেনে ধরেন, যেন কিছুতেই তিনি বাইরে যেতে না পারেন। আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.) নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করতে আপসহীন ছিলেন। ফলে তিনি কিছুতেই ওই নারীর ডাকে সাড়া দেননি। এমনকি তিনি থামলেনও না। জোর করে টেনে ধরায় ইউসুফ (আ.)-এর জামার পেছন দিকে কিছুটা ছিঁড়ে গেল। এভাবেই তিনি বাইরে চলে গেলেন। তাঁর পেছনে চলে এলেন ওই নারীও। বেশির ভাগ ইতিহাসবিদ ওই নারীর নাম ‘জুলায়খা’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই নারীর নাম ‘জুলায়খা’ হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়। ওই নারীর নাম কী ছিল সে বিষয়ে ইতিহাসে একাধিক নাম পাওয়া যায়। তাই নিশ্চিন্তভাবে ইউসুফ-জুলায়খা নাম দিয়ে বিভিন্ন ঘটনা রটানো সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যে ঘর থেকে ইউসুফ (আ.) বাইরে চলে আসতে চাচ্ছিলেন, সেই ঘরের দরজাগুলো তালাবদ্ধ ছিল। তিনি দৌড়ে দরজায় পৌঁছলে নিজ থেকেই দরজাগুলো খুলে নিচে পড়ে গেল (সুবহানাল্লাহ!)। তাঁরা দুজনই ঘর থেকে বের হতেই সেখানে মনিব আজিজকে দাঁড়ানো দেখতে পান। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি স্ত্রী জুলায়খা গল্প বানিয়ে স্বামীকে বলতে শুরু করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধুরন্ধর নারী। তিনি নিজের অপরাধের দায়ভার ইউসুফ (আ.)-এর কাঁধে চাপিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘তোমার কেনা গোলাম হয়েও সে আমার ইজ্জত হরণের চেষ্টা করেছে। এর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। তাকে জেলবন্দি করো অথবা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করো।’
আলোচ্য আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যায়। প্রথমত, যে জায়গায় গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, সেই জায়গা পরিত্যাগ করা উচিত। ইউসুফ (আ.) ওই কক্ষ থেকে পালিয়ে গিয়ে সেই নজির স্থাপন করেছেন। দ্বিতীয়ত, সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা মানুষের আবশ্যকীয় কর্তব্য। কখনো কখনো এর ফলাফল বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না। তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ফলাফল দেওয়ার মালিক আল্লাহ। বান্দার কাজ হলো, নিজের শ্রম ও সাধনাকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করা। ইউসুফ (আ.) আলোচিত কক্ষের সব দরজা-জানালা বন্ধ জেনেও সেখান থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে দৌড় দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা দরজাগুলো খুলে দিয়ে তাঁকে সাহায্য করেছেন। এতে বোঝা যায়, বান্দার পক্ষ থেকে আগে উদ্যোগ ও সর্বোচ্চ সাধনা পাওয়া গেলে আল্লাহর সাহায্য তাত্ক্ষণিকই মেলে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসন্ন। মুমিনদের (সে বিষয়ে) সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : সাফ্ফ, আয়াত : ১৩)
-কেএল