আওয়ার ইসলাম: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে এক মেয়ে শিক্ষার্থীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মী আটকের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দুজনেই হাবিপ্রবির শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, মোঃ দেলোয়ার হোসেন ( ১৫ ব্যাচ) ও ছাদিয়া (ছদ্মনাম)। অভিযুক্ত মোঃ দেলোয়ার হোসেন হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী মোঃ ফারুক হোসেন।
নিরাপত্তাকর্মী মোঃ ফারুক হোসেন জানান, " বুধবার ( ৩১ মার্চ) আনুমানিক বিকাল ৫ টায় অভিযুক্ত মেয়ে ফিসারিজ টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রিয়াজুল ইসলামের সাথে দেখা করতে ওয়াজেদ ভবনে প্রবেশ করতে চান।
কিন্তু তিনি না থাকায় আমি তাকে ভিতরে ঢুকতে নিষেধ করি। পরে ছাদিয়া (ছদ্মনাম) ওয়াসরুমে যেতে চাইলে আমি নিচ তলার উত্তর দিকে যেতে বলি। এর কিছুক্ষণ পরে অভিযুক্ত ছেলে ( মোঃ দেলোয়ার হোসেন) এসে পুনরায় ফিসারিজ টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রিয়াজুল ইসলামের সাথে দেখা করতে চান। আমি পুনরায় তাকেও বলি স্যার চলে গেছেন।
পরে অভিযুক্ত ছেলে ১৩৬ নাম্বার ল্যাবে যেতে চাইলে আমি তাকে ভিতরে যেতে অনুমতি দেই। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অভিযুক্ত মেয়ে ওয়াশরুম থেকে না ফেরায় আমি একজন আনসার সদস্যকে ওয়াজেদ ভবনের ভিতরে পাঠাই। তিনি ১৩৬ নাম্বার রুমে গিয়ে দেখেন অভিযুক্ত ছেলেটি নেই। পরে আনসার সদস্য ফিরে এসে আমাকে জানালে আমি তাকে প্রবেশ পথে রেখে মেয়েটি যেদিকে গেছে সেই পাশে যাই। ওয়াশরুমের সামনে যেতেই ওয়াশরুমের ভিতর থেকে অভিযুক্ত ছেলে ও মেয়ের গুনগুন শব্দ শুনতে পারি।
এর কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত মেয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে আমি তাকে প্রশ্ন করা শুরু করলে তিনি আমার সাথে অশোভনীয় আচরণ করেন। এসময় অভিযুক্ত ছেলে একই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওয়াজেদ ভবনের নিচ তলা থেকে দৌঁড় দিয়ে দ্বিতীয় তলায় চলে যান। এসময় তাকে থামতে বললে তিনি কথা না শুনেই উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে চলে যান। এসময় তাকে ধরতে গিয়ে অভিযুক্ত মেয়ে ওয়াজেদ ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এসময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ খালেদ হোসেনকে ফোন দিলে তিনি সহকারী প্রক্টর মোঃ শিহাবুল আওয়াল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসার মোঃ মাহমুদুল হাসনকে পাঠায় দেন। কিছুক্ষণ পরে তারা ওয়াজেদ ভবনের সামনে আসলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সকল তথ্য নেন "।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসার মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, " আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর অভিযুক্ত দুইজনকেই অত্যান্ত উত্তেজিত অবস্থায় দেখতে পাই। অভিযুক্ত ছেলেটি সেসময় দৌঁড় দেয়ার কারণ হাঁপাতে দেখেছি । এর কিছুক্ষণ পর সেখানে কিছু ছাত্রলীগের কর্মী এসে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। "
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, " আমি মাস্টার্সের কাজে দুপুর তিনটা থেকেই ল্যাবে ছিলাম। তবে আমার গার্ল ফ্রেন্ড ( অভিযুক্ত মেয়ে ) রেজাউল ইসলাম স্যারের কাছে মাস্টার্সে ভর্তি হবেন জন্য দেখা করতে আসছিলেন। কিন্তু স্যার না থাকায় সে ফিরে চলে যায়। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাদিয়াকে (ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামের সামনে থেকে আটক করা হয়। এসময় আমিও তখন আমার কাজ শেষে বের হওয়ায় আমাকেও আটক করা হয়, যা আমি চক্রান্ত বলে মনে করছি। আমি ক্যাম্পাস রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বিধায় আমাকে একটি পক্ষ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো চেষ্টা করছে। "
এমন ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদুল আলম রনি বলেন, " ঘটনাটি আমি আজকে শুনেছি। দীর্ঘদিন ধরে হাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের কমিটি না দেয়ার কারণে অনেকেই ছাত্রলীগের নাম নিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে এই দরনের অপকর্মে জড়িত প্রমানিত হলে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে বিচার করবেন এটাই আশাকরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখতে ক্যাম্পাসে প্রশাসনের তৎপরতা আরো বাড়ানো দরকার।
আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হাবিপ্রবি শাখার পক্ষ থেকে এই অপ্রীতিকর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। "
আবার উক্ত ঘটনা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটির সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য শোনার পর বলেন, " যেহেতু তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই প্রশাসন ঘটনার সত্যতা যাচাই করে যাতে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে। তবে ছাত্রলীগের এমন কর্মকান্ডে আমরা ব্যথিত। করোনা পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাস খুললেই হাবিপ্রবির বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেয়া হবে।"
এনটি