আওয়ার ইসলাম: করোনা সংক্রমণ রোধে গণপরিবহনে যাত্রীসংখ্যা সীমিত করার পর দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীর সাধারণ যাত্রীরা। এ নিয়ে দিনভর হাজারো মানুষের হুড়োহুড়িও হয়েছে। যেখানে ছিল না সামাজিক দূরত্ব কিংবা সুরক্ষার কোনো বালাই। একই ধরনের দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অন্যান্য নগর-মহানগরের যাত্রীরাও। সকালে অফিস শুরুর সময় এবং বিকেলে অফিস শেষে বাসে উঠতে 'যুদ্ধ' করতে হচ্ছে তাদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সবচেয়ে সংকটে পড়েছেন নারী যাত্রীরা।
এ পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা দুপুরের দিকে রাজধানীর নিকুঞ্জের সামনে রাস্তায় নেমে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেন। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় গতকাল বুধবার থেকে অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের বাস-মিনিবাস। বন্ধ রাখা হয়েছে আগামী ১১ এপ্রিলের পরের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রিও। এছাড়া আজ থেকে লঞ্চ চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে।
এদিকে শবেবরাতের ছুটির পর গতকাল বুধবার ছিল প্রথম কর্মদিবস। সকালে সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে ও সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীর উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বাস এলে তাতে উঠতে যাত্রীরা দৌড়ে পিছু নেন। কিন্তু শুরুর স্টপেজ থেকেই অধিকাংশ বাস অর্ধেক আসনে যাত্রী পাওয়ায় পরবর্তী স্টপেজগুলোয় আর দরজা খোলেনি। অপেক্ষমাণ যাত্রীরাও উঠতে পারেননি।
সকালে রাজধানীর জিগাতলায় সরেজমিনে এ চিত্র দেখা দেখা যায়। মোহাম্মদপুর ও বছিলা থেকে যে বাস বিভিন্ন গন্তব্যে চলে, সেগুলো জিগাতলা হয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, 'সিটি', 'রমজান', 'মিডলাইন', 'প্রজাপতি' বাসগুলো জিগাতলায় আসছিলই নির্ধারিত সংখ্যারও বেশি যাত্রী নিয়ে। এতে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। তারা অফিস যাওয়ার বাস পাননি। তবে দুপুরের দিকে অধিকাংশ বাসই খালি দেখা যায়।
বিকেলে অফিস ছুটির পর ফের ভোগান্তি শুরু হয়। সরেজমিনে ফার্মগেট এলাকায় দেখা যায়, মতিঝিল, গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী কোনো বাসই ফার্মগেটে দাঁড়াচ্ছে না।
বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ঢাকার মিনিবাসে অনুমোদিত আসন সংখ্যা ৩১। বড় বাসে ৫০। তবে মিনিবাসে ইঞ্জিন ওপরসহ সব মিলিয়ে ৫০ জন যাত্রী বসার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি নির্দেশনার কারণে ২৫ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাচ্ছে না। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়াও বন্ধ। সাধারণ সময়ের অর্ধেক হয়ে গেছে গণপরিবহনের সামগ্রিক যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা। কিন্তু অফিস-আদালত সব খোলা থাকায়, যাত্রীর সংখ্যা একজনও কমেনি। এ কারণেই দুর্ভোগ হচ্ছে। গত বছর লকডাউনের পর গণপরিবহন অর্ধেক আসন খালি রেখে চলেছিল আড়াই মাস। তখন যাত্রী ছিল না বলে এতটা সংকট হয়নি।
সংকট আরও বেড়েছে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন সুবিধা বন্ধ হওয়ায়। গতকাল বিআরটিএ বিজ্ঞপ্তি জারি করে, আগামী দুই সপ্তাহ রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অ্যাপ বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মোটরসাইকেল চলছে 'ক্ষ্যাপে' কিন্তু তাতে যাত্রীদের খুব একটা লাভ হয়নি। মোটরসাইকেল পেতেও রাস্তায় অপেক্ষা ও ভাড়া দরদাম করতে হচ্ছে। জিগাতলা থেকে ফার্মগেটে লেগুনায় ভাড়া ১৫ টাকা। অ্যাপে মোটরসাইকেলে ভাড়া আসত ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। গতকাল লেগুনা অর্ধেক খালি রেখে চলাচল শুরুর পর, মোটরসাইকেল চালকদের ১৫০ টাকা ভাড়া চাইতে দেখা গেছে।
জিগাতলায় 'সিটি' বাসের অপেক্ষায় থাকা চাকরিজীবী রুহুল আমিন খোমেনি বললেন, তিনি মতিঝিল যাবেন। জিগাতলা থেকে মতিঝিলের বাস ভাড়া ২০ টাকা। রিকশা ভাড়া ৭০-৮০ টাকা। মোহাম্মদপুরের দিক থেকেই সব বাস যাত্রী পূর্ণ হয়ে আসায় তাতে উঠতে পারছেন না। সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও, বাস কোম্পানি নিচ্ছে দ্বিগুণ- ৪০ টাকা। তারপরও বাসে উঠতে গেলে দেখা যাচ্ছে, সিট নেই। রিকশা চাইছে ১৫০ টাকা। তা হলে নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী কোথায় যাবে?
মিরপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, কলেজ গেট, আবদুল্লাহপুর, জসীমউদ্দীন, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, চিটাগাং রোড, সানারপাড়, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ এবং শনির আখড়া এলাকায়ও দেখা গেছে একই চিত্র। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও এসব স্টপেজে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন অফিসগামী অনেকে। আবার অনেককে যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই রওনা হতে দেখা গেছে।
-কেএল