নাজমুল হাসান সাকিব।।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মুমিনের কর্ম ও গুণাবলী বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রায় সাত থেকে আটটি আয়াত বা কর্মসূচির বিবরণ দিয়েছেন। উক্ত কর্ম ও গুণাবলীর অন্যতম তৃতীয় একটি হলো- তারা রাগান্বিত হয়েও মাফ করে।
এটি সচ্চরিত্রতার উত্তম নমুনা। কেননা, এক বর্ণনায় এসেছে, কারো প্রতি ভালোবাসা অথবা কারো প্রতি ক্রোধ যখন প্রবল আকার ধারণ করে; তখন সুস্থ বিবেকবান, বুদ্ধিমান মানুষকেও অন্ধ করে দেয়।
সে বৈধ-অবৈধ, সত্য-মিথ্যা ও আপন কর্মের পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করার যোগ্যতাটুকুও হারিয়ে ফেলে। কারো প্রতি ক্রোধ হলে সে সাধ্যমতো তার থেকে ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ তায়ালা মুমিনের কর্মসূচির বর্ণনা দিয়েছেন এই বলে যে, তারা ক্রোধের সময় কেবল বৈধ-অবৈধের সীমায় অবস্থান করে'ই ক্ষান্ত হয় না বরং প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা মাফ করে দেয়।
উদাহরণত কোন এক এলাকার জনসাধারণ ওই এলাকার কোন নেতৃস্থানীয় কাউকে গালমন্দ করল। আর এতে সে ভীষণ কষ্ট পেলো। যার ফলে সে অত্যান্ত রাগান্বিত হয়েছে। আবার এলাকার নেতা বা নেতৃস্থানীয় হিসেবে প্রয়োগ করার ক্ষমতাও আছে। কিন্তু লোকটি তার প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকা সত্যেও তা দমন করে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাহলে আল্লাহ তায়ালার কথা অনুযায়ী ওই লোকটি প্রকৃত মুমিন। যদিও সমান সমান বদলা জায়েয, যা মুমিনের সপ্তমগুণ।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- অর্থাৎ- তারা অত্যাচারিত হয়ে সমান সমান প্রতিশোধ গ্রহণ করবে এবং এতে সীমালংঘন করে না। সমান সমান প্রতিশোধ গ্রহণ করে; কিন্তু ক্ষমা করেনা। আবার বেশি সীমালঙ্ঘনও করেনা।
এটি প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় গুণের ব্যাখ্যা ও বিবরণ। তৃতীয় গুণটি ছিল এই যে, তারা শত্রুকে ক্ষমা করে, তবে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে মাফ করলে অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। তখন প্রতিশোধ গ্রহণ করা'ই উত্তম বিবেচিত হয়। আয়াতে এরই বিধান বর্ণিত হয়েছে, মন্দের প্রতিফল অনূরূপ মন্দ'ই হয়ে থাকে।
তোমার যতটুকু আর্থিক অথবা শারীরিক ক্ষতি কেউ করে, তুমি ঠিক ততটুকু ক্ষতিই তার করো। তবে শর্ত হলো, তোমার মন্দ কাজটা যেন পাপ না হয়। উদাহরণতঃ তোমাকে কেউ জোর পূর্বক মদ পান করিয়ে দিলো, এখন তোমার জন্য তাকে মদ পান করিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না। শরীয়ত যদিও সমান সমান প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু এরপর এ কথাও বলেছেন, যে ব্যক্তি মাফ করে এবং আপোষ নিষ্পত্তি করে। তার পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্বে। এতে নির্দেশ রয়েছে যে, মাফ করাই উত্তম। পরবর্তী দুই আয়াত এরই আরো বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমা ও প্রতিশোধ গ্রহণের সুষম ফায়সালা: হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পূর্ববর্তী মনীষীগণ এটা পছন্দ করতেন না যে, মুমিনগণ পাপাচারী লোকদের সামনে নিজেদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করবে। ফলে তাদের দৃষ্টতা আরো বেড়ে যাবে।
সেক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেয়া'ই উত্তম। আর ক্ষমা করা উত্তম যখন অত্যাচারী অনুতপ্ত হয় এবং তার পক্ষ থেকে অত্যাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী এবং কুরতুবী রহ. এটিই পছন্দ করতেন। তারা বলেন ক্ষমা ও প্রতিশোধ দুটি'ই অবস্থা ভেদে উত্তম। যে ব্যক্তি অনাচার করার পর লজ্জিত হয় তাকে ক্ষমা করা উত্তম। আর যে ব্যক্তি জেদে-ক্রোধে এবং অত্যাচারে অটল থাকে তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া উত্তম।
বয়ানুল কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা'য়ালা আলোচ্য আয়াত দুটিতে খাঁটি মুমিন ও সৎকর্মীদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। এ বাক্যে বলা হয়েছে যে, তারা ক্রোধের সময় নিজেদের কে হারিয়ে ফেলে না বরং তখনও ক্ষমা ও অনুকম্পা তাদের মধ্যে প্রবল থাকে। ফলে তারা ক্ষমা প্রদর্শন করে।
আবার এ বাক্যে বলা হয়েছে, কোন সময় অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রেরণা তাদের দিলে জাগ্রত হলেও তারা এতে ন্যায়ের সীমালংঘন করে না; যদিও ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম।
লেখক: শিক্ষার্থী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
-এটি