মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তাওবা নিয়ে প্রহসন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শায়খ মাহমুদুল হাসান

মনসূর বিন আম্মার বলেন আমার এক পাপাচারী বন্ধু ছিল। এক সময় সে তওবা করল। তাকে তাহাজ্জুদ ও ইবাদতে নিমগ্ন দেখতাম। একদা তাকে কিছুদিন দেখতে না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানলাম, সে অসুস্থ। তার বাড়িতে গেলাম। ঘর থেকে তার মেয়ে বেরিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করল :
-কাকে চান? -অমুককে।

অতঃপর মেয়েটি আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল। ঘরে ঢুকে দেখলাম, সে মেঝেতে শুয়ে আছে। তার চেহারা খুবই কালো, বিমর্ষ ও বিষন্ন। চোখ গর্তে ঢুকে গেছে। ঠোঁট দু’টো বেশ ভারি হয়ে গেছে। তাকে দেখে আমি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম।

বললাম-বন্ধু, বেশী বেশী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়। সে চোখ খুলল। বাঁকা চোখে একবার আমাকে দেখল। তারপর হুঁশ হারিয়ে ফেলল। আমি দ্বিতীয়বার বললাম, -ভাই, বেশী বেশী কালেমা পড়।

তৃতীয়বার বললাম। সে তখন চোখ খুলে বলল, -মনসূর, আমার আর এ কালেমার মাঝে পর্দা পড়ে গেছে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। বন্ধু, তোমার নামায-রোযা, তাহাজ্জুদ-তিলাওয়াত কোথায়?

-ওসব তো ছিল লোক দেখানো। আমার তওবা ছিল প্রহসন। মানুষের কাছে আলোচিত ও প্রশংসিত হওয়ার জন্য আমি ইবাদত করতাম। নির্জনে দরজা বন্ধ করে, পর্দা ঝুলিয়ে মদ পান করতাম, অপরাধ করতাম। রাব্বের নাফরমানি করতাম। দীর্ঘ সময় এমনটা করে করে আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলাম। তখন আমি আমার মেয়েকে বললাম, আমাকে কুআন শরীফ দাও।

সে কুরআন এনে দিলো। তা হাতে নিয়ে বললাম, হে আল্লাহ, এ কুরআনের শপথ, তুমি আমাকে এ-রোগ থেকে মুক্তি দাও। আমি আর কখনো পাপের পথে ফিরে যাব না।

আল্লাহ দয়া করে আমাকে আরোগ্য দান করলেন। আমার দুর্ভোগ লাঘব করলেন। কিন্তু আমি সুস্থ হয়ে আগের পাপাচারে ফিরে গেলাম। আমার ও রাব্বের মাঝে যে অঙ্গীকার হয়েছিল, শয়তান তা ভুলিয়ে দিলো। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলো। আমি আবার মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম।

আমার পরিবারকে বললাম, বাড়ির মাঝে আমাকে রেখে এক জিলদ কুরআন শরীফ এনে দাও। কিছুক্ষণ কুরআন পড়লাম এবং উপরে তুলে বললাম, হে আল্লাহ, এ পবিত্র কোরআন তোমার কালাম। এর সম্মানে আমার দুর্ভোগ মুছে দাও।

আল্লাহ আমার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন। সমস্যা সমাধান করলেন। আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম। কিন্তু সুস্থ হয়ে আমি আমার ওয়াদার কথা ভুলে গেলাম। আবার পূর্বের অনাচারে ফিরে গেলাম। ডুবে গেলাম পাপের পাথারে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আবারও পূর্বের মতো বাড়ির মাঝে এনে রাখা হলো।

যেমনটা তুমি এখন দেখতে পাচ্ছ। যথারীতি কুরআন শরীফ এনে দেয়া হলো। পড়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু হরফগুলো আমার কাছে অস্পষ্ট ও ঝাপসা ঠেকল। বুঝতে পারলাম, আল্লাহ আমার ওপর রাগান্বিত হয়েছেন। তাই মাথা উঁচু করে বললাম, হে আল্লাহ, হে নভোমÐলের অধিপতি, কুরআনের সম্মানে আমাকে মুক্তি দাও।

তখন কোনো এক অদৃশ্য ঘোষকের ঘোষণা শুনতে পেলাম, অসুস্থ হলেই তওবা কর, আবার সুস্থ হলেই পাপাচারে ফিরে যাও। কতবার তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যখনই তুমি বিপদে পড়েছ, অসুস্থ হয়ে পড়েছ; আমাকে ডাকার সাথে সাথেই উদ্ধার করেছি তোমাকে, সুস্থ করে তুলেছি। কিন্তু তুমি বারবার পাপের পথে পা বাড়িয়েছ। তোমার কী মৃত্যুভয় নেই? মৃত্যু কি তোমাকে গ্রাস করবে না? যখন তুমি অনাচারে হাবুডুবু খাবে, তখন কি মৃত্যুদূত তোমার কাছে আসবে না?

মনসূর বিন আম্মার বলেন, তার কথা শুনে, তার অবস্থা দেখে, আমার দু’চোখে অশ্রু টলোমলো করছিল। সরে এলাম তার পাশ থেকে। তার ঘরের দরজা পর্যন্ত এসে পৌঁছতেই আমাকে সংবাদ দেয়া হলো যে, তার জীবন-প্রদীপ চিরদিনের জন্যে নিভে গিয়েছে। মারা গেল সে। পাপের পঙ্কিল চেহারা নিয়ে।

লেখক: ব্রিটেনের বাংলাদেশি ইসলামি স্কলার ও মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব শায়খ মাহমুদুল হাসান।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ