মাওলানা মুহাম্মদ আবু সালেহ।।
নামাজ প্রিয়তম রবের নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। ফরজ, ওয়াজিবের পাশাপাশি আমাদেরকে দান করা হয়েছে বিবিধ নফল নামাজ। এসব নফল নামাজেরও রয়েছে বহুবিদ ফায়দা এবং ফজিলত। এসব ফজিলত বর্ণিত হয়েছে কুরআনুল কারিম এবং হাদিসে নববীর বিভিন্ন কিতাবে। বস্তুতঃ বক্ষমান নিবন্ধ নফল নামাজের ফজিলত বিষয়ক নয়; বরং মসজিদের পাশাপাশি আমাদের বসবাসের ঘরগুলোতেও যে সুন্নত, নফলসহ কিছু কিছু নামাজ আদায় করা ফজিলতপূর্ণ এবং বরকতময়, হাদিসের আলোকে সে বিষয়টি তুলে ধরাই উদ্দেশ্য। প্রসঙ্গতঃ ঘরে ফরজ নামাজ নয়, সুন্নত বা নফল নামাজ আদায়ের কথাই এসেছে হাদিসের কিতাবগুলোতে। সঙ্গত কারণে নফল নামাজের গুরুত্ব বিষয়ক একটি হাদিস দিয়ে আলোচনা শুরু করা বিধেয় মনে করছি। প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
আনাস ইবনু হাকীম আদ্-দাব্বী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি যিয়াদ অথবা ইবনু যিয়াদের ভয়ে মদিনায় চলে আসেন এবং আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনুহর সাথে সাক্ষাত করেন। আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনুহ আমাকে তাঁর বংশ পরিচয় দিলেন এবং আমিও আমার বংশ পরিচয় দিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে যুবক! আমি কি তোমার কাছে হাদিস বর্ণনা করব না? জবাবে আমি বলিঃ হ্যাঁ, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন!
বর্ণনাকারী ইউনুস বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এ হাদিস সরসরি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষের ‘আমালসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম তাদের সালাত সম্পর্কে হিসাব নেয়া হবে। তিনি বলেনঃ আমাদের মহান রব্ব ফেরেশতাদের বান্দার সালাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করবেন, দেখো তো, সে তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছে, না কি তাতে কোন ত্রুটি রয়েছে?
অতঃপর, বান্দার সালাত পূর্নাঙ্গ হলে পূর্নাঙ্গই লিখা হবে। আর যদি তাতে ত্রুটি থাকে তাহলে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, দেখো তো আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কি না? যদি থাকে, তাহলে তিনি বলবেনঃ আমার বান্দার ফরয সালাতের ঘাটতি তার নফল সালাত দ্বারা পরিপূর্ণ করো। অতঃপর সকল আমলই এভাবে গ্রহন করা হবে (অর্থাৎ নফল দ্বারা ফরযের ত্রুটি দূর করা হবে)। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৮৬৪
সুবহানাল্লাহ! এ হাদিসের ভাষ্যে স্পষ্ট যে, নফল নামাজ, নফল রোজা, নফল আমল, নফল দান সাদাকাহ কিয়ামতের কঠিন হিসাবের দিনে বান্দার ফরজ আমলগুলোর ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। আর নামাজের হিসাব নেয়া হবে সর্বাগ্রে। নামাজের হিসাব যার মিলে যাবে অন্যান্য হিসাবও তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আরও স্পষ্ট করে বললে, সহজ করে দেয়া হবে। এ কারণে নফল নামাজ বেশি বেশি আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া বুদ্ধিমান প্রত্যেকেরই দায়িত্ব হওয়া উচিত নয় কি?
শুধু মসজিদেই সব নামাজ নয়, ঘরেও আদায় করা চাই কিছু নামাজ; ঘরে নফল নামাজ কল্যাণ বয়ে আনে
আমরা সাধারণতঃ ফরজের আগে ও পরে নফল, সুন্নতসহ প্রায় সকল নামাজই মসজিদে আদায় করে থাকি। আসলে উপমহাদেশের মুসল্লিদের সিংহভাগ মসজিদেই বলতে গেলে এই দৃশ্য চোখে পরে। অধিকাংশ মুসল্লিদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা সব ধরনের নফল ও সুন্নত নামাজ মসজিদে আদায়েই অভ্যস্ত।
শুধু অভ্যস্তই নন, বরং অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, ফরজ নামাজ আদায় শেষে কেউ মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে তাকে রীতিমতো তিরস্কারের সম্মুখীনও হতে হয়। অনেকেই এটিকে ভিন্নভাবে দেখে থাকেন। কেউ কেউ এর জন্য শাসনও করে থাকেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে বাধ্যও করে থাকেন মসজিদেই সুন্নত আদায় করতে।
সাধারণ মুসল্লিদের পাশাপাশি অনেক আলেম উলামাকেও নিয়মিত সুন্নত ও নফলসহ অধিকাংশ নামাজ মসজিদে আদায় করতে দেখা যায়। অবস্থার এখানেই শেষ নয়, বরং ফরজ নামাজ আদায়ের স্থান থেকে সামান্য এদিক-সেদিক সরে গিয়ে বাকি নামাজ আদায় করতেও রাজি নন অনেকেই। অথচ, ফরজ নামাজ আদায়ের পরের সুন্নত নামাজগুলোর মাঝে সামান্যতম সময়ের বা স্থানের দূরত্ব অবলম্বন করার যে নির্দেশ হাদিসে রয়েছে তার প্রতিও দেয়া হয় না কোনোই গুরুত্ব।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পছন্দনীয় ছিল, ফরজ নামাজের পরে সম্ভব হলে যেন স্থান পরিবর্তন করে বাকি সুন্নত নামাজ আদায় করা হয়। তাঁর নিকট এটাও পছন্দনীয় ছিল যে, ঘরেও যেন আদায় করা হয় কিছু নফল এবং সুন্নত নামাজ। বিষয়গুলো তুলে ধরতেই আজকের আলোচনা। আল্লাহ তাআ'লা আমাদেরকে তাঁর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পছন্দনীয় পদ্ধতি অবলম্বনে নামাজের মাধুর্য্য আস্বাদনের তাওফিক দান করুন।
ফরজ এবং সুন্নত নামাজের মধ্যে তফাৎ সৃষ্টি করণ
জুমুআর নামাজের পর সুন্নাত আদায়ের মাঝে পার্থক্য বা তফাৎ সৃষ্টি সম্পর্কে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর খিলাফত কাল। একবার তার পাশে জুমুআর নামাজ আদায় করা মাত্র একজন সুন্নত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, এরূপ করো না। আমাদেরকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, কথার মাধ্যমে অথবা মসজিদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে উভয় নামাজের মধ্যে তফাৎ সৃষ্টি করতে। -সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ৮৮৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক বঙ্গানুবাদ হাদিস নং ১৯১২, ইসলামীক সেন্টার কর্তৃক বঙ্গানুবাদ হাদিস নং ১৯১৯
ফরজ নামাজ আদায় করে সুন্নত আদায়ের পূর্বে স্থান পরিবর্তন করা
ফরজ নামায ও নফল নামাযের মাঝে কোন কথা বলে কিংবা স্থান পরিবর্তন করে একটা ভেদ তৈরী করা মুস্তাহাব। আলেমগণ এর হিকমত উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: যাতে করে মুসলমান তার সিজদার স্থানের সংখ্যা বাড়াতে পারে; যেন হাশরের দিন এ স্থানগুলো তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।
হাদিসে এসেছে- ফরজ নামাযের পর যে ব্যক্তি নফল নামায পড়তে চায় সে যেন স্থান পরিবর্তন করে নেয়। আমাদের জানা মতে দুই নফল নামাযের ব্যাপারে এমন কিছু বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ যদি দুই নফল নামাযের মাঝেও সেটা করতে চায়, যেমন- যে ব্যক্তি চার রাকাআত নফল নামায পড়তে চায়, সে যদি প্রথম দুই রাকাআত আদায় করার পর স্থান পরিবর্তন করে- যাতে করে তার সিজদার স্থান বৃদ্ধি পায় তাতে কোন সমস্যা নেই।
সা’দ ইবনু ইসহাক্ব ইবনু কা’ব ইবনু ‘উজরাহ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী ‘আবদুল আশহালের মাসজিদে এসে সেখানে মাগরিবের সলাত আদায়ের পর দেখলেন, সলাত শেষে লোকেরা সেখানেই (সুন্নাত) সলাত আদায় করছেন। তখন তিনি বললেনঃ এটাতো ঘরের সলাত। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩০০
হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফরজ নামাজ আদায়ের পর তোমরা আগে-পিছে বা ডানে-বামে স্থান পরিবর্তন করতে অক্ষম হয়ে যাও? -সুনানে আবু দাউদ: ৮৫৪
ইমাম সাহেবের স্থান পরিবর্তনের জন্য স্বতন্ত্র হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-
হযরত মুগিরা ইবনে শোবা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম যে স্থানে ফরজ নামাজ আদায় করেছেন, সেখান থেকে স্থানান্তর হওয়া ছাড়া তিনি অন্য নামাজ শুরু করবেন না। -সুনানে আবু দাউদ: ৬১৬. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪২৮
মসজিদে যাওয়ার পর সময় থাকলে দু’রাকাত সুন্নত পড়ে বসার কথা বলা হয়েছে হাদিসেঃ
মসজিদে প্রবেশের পরে সময় থাকলে দু’রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে নিয়ে বসা উত্তম। কারণ, এটির নির্দেশ এসেছে হাদিসে। একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-
মসজিদে যাওয়ার পর সময় থাকলে দু’রাকাত সুন্নত পড়ে বসার কথা জোর দিয়ে বলেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমরা যাকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখূলিল মসজিদের নামাজ বলে থাকি। এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবি হযরত আবু কাতাদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ছাড়া বসবে না। -সহিহ বোখারি: ১১৬৭, সহিহ মুসলিম: ৭১৪
ঘরেও আদায় করো কিছু নামাজ; ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না
জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ, ঘর-বাড়িতেও আদায় করতে বলা হয়েছে কিছু নামাজ এবং ঘর ও বসতবাড়িগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে। যারা সুন্নত, নফলসহ সকল নামাজ মসজিদকেই বেছে নেন এবং মসজিদকেই একমাত্র নামাজের স্থান জ্ঞান করে থাকেন; পাশাপাশি অজ্ঞতাবশতঃ অন্য মুসল্লিগণ বাসায় গিয়ে সুন্নত কিংবা নফল আদায়ের জন্য ফরজ নামাজের পরে মসজিদ থেকে বের হলে যারা বাঁকা চোখে তাকান, তিরষ্কার করতেও ছাড়েন না- তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ নিঃসৃত বাণী এবং আমল বর্ণিত হয়েছে নিচের হাদিসগুলোতে। বর্ণিত হয়েছে-
ঘরে সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাজের কিছু অংশ তোমরা তোমাদের ঘরসমূহে আদায় করো আর ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না। -সহিহ বোখারি: ৪২২, সহিহ মুসলিম: ৭৭৭
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাকে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নফল নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বর্ণনা দিলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে যুহরের পূর্বে ৪ রাকাআত পড়ে মসজিদে রওয়ানা করতেন আর মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করে আবার ঘরে ফিরে এসে দুই রাকাআত পড়তেন।
তিনি মানুষের সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করতেন অতঃপর ঘরে ফিরে দু’রাকাআত পড়তেন। মানুষের সঙ্গে ইশার নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরে দুই রাকাআত পড়তেন। –সহিহ মুসলিম: ৭৩০
হাদিসে নফল নামাজ বলতে আসলে কোন নামাজকে বুঝানো হয়েছে?
উল্লেখ্য, নফল মানে অতিরিক্ত। ফরজ এবং ওয়াজিব ছাড়া বাকি সব সুন্নতও মুস্তাহাব নামাজকে হাদিস ও ফিকহের গ্রন্থাদিতে নফল নামাজের অধ্যায়ের অধীন করা হয়েছে। যদিও আমাদের সমাজে নফল বলতে স্বতন্ত্র কিছু ইবাদতকে বুঝানো হয়। এগুলো মূলত মুস্তাহাব আমল।
ঘরে নফল নামাজ কল্যাণ বয়ে আনেঃ
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا قَضَى أَحَدُكُمُ الصَّلاَةَ فِي مَسْجِدِهِ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ نَصِيبًا مِنْ صَلاَتِهِ فَإِنَّ اللَّهَ جَاعِلٌ فِي بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْرًا " .
আল্লাহর ইবাদত-আনুগত্য যেখানে করা হয়, সেখানে রহমতের ফেরেশতারা আসা যাওয়া করেন। এতে সেখানে কল্যাণ নেমে আসে। হযরত জাবির রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করলে ঘরে আদায়ের জন্য একটি অংশও যেন সে রেখে দেয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা নামাজের ফলে তার ঘরে কল্যাণ দান করবেন। -সহিহ মুসলিম: ৭৭৮
সহিহ মুসলিম এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহু মুসলিমে আল্লামা নাওয়ারি বলেন, নিয়মিত নফল (পাঁচ ওয়াক্তের সুন্নত) নামাজসমূহ ঘরে আদায় করা জমহুর উলামার মতে মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। -শারহু মুসলিম: ঌ/৬
আল্লামা মানাবি বলেন, নফল নামাজ মসজিদে আদায় করা থেকে ঘরে আদায় করা উত্তম। তা মসজিদে হারামে হলেও। -ফয়জুল কাদির: ১/৪১৮
বিখ্যাত ফিকহবিদ ইবন কুদামা বলেন, নফল নামাজ ঘরে আদায় করা উত্তম। এ কারণে যে, এতে ইখলাস বা একনিষ্ঠতা উত্তমরূপে হাসিল হয়। রিয়া বা প্রদর্শনীর মানসিকতা থেকে পরিত্রাণ লাভ হয়। -আল মুগনি: ১/৪৪২
একটি ভ্রান্তি নিরসন
পরিশেষে, একটি কথার পুনরোল্লেখ না করে পারছি না- দ্বীন মেনে চলার প্রতি আগ্রহ, উদ্দীপনা এবং জজবা যখন স্তিমিত, ঈমানের তেজোদ্বীপ্ত বণ্হি যখন ক্রমান্বয়ে নিভূ নিভূ, পার্থিব লোভ, লালসা, মোহ এবং অলসতার নিদ্রায় যখন বিভোর অধিকাংশ মানুষ- দ্বীনের এই ক্রান্তিলগ্নে মসজিদে যেতে উৎসাহিত করা কিংবা মসজিদের পবিত্র অঙ্গনে, আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে আরও কিছুটা বেশি সময় সেখানে অবস্থান করার বিপক্ষে আমরা কখনো নই।
মোট কথা, ফরজ নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করার জন্য প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিরই আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে, যথারীতি মসজিদে উপস্থিত হওয়া। দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতে আদায় করার ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। এতদসত্বেও ঘর-বাড়িতে নফল ও সুন্নত নামাজ আদায় জায়েজ বরং, হাদিসের আলোকে উত্তম আমল হওয়ার বিষয়টি অনেকেরই হয়তো সঠিকভাবে জানা না থাকার ফলে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা এড়ানো যায় না, মূলতঃ সেই ভ্রান্তি নিরসনকল্পেই অত্র নিবন্ধে সামান্য এই আলোকপাত।
ইসলামের প্রতিটি বিষয় সহিহভাবে জেনে উত্তমরূপে তার উপরে আমল করার তাওফিক আমাদের প্রত্যেককে দান করুন মহান দয়ালু প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা।
-এটি