আওয়ার ইসলাম: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। সম্প্রতি সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিলেও আবারও করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল-কলেজ খোলার কথা ৩০ মার্চ। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩০ মার্চের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের করোনার টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্যবিধি গাইডলাইনও জারি করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে মে মাসে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। অবশ্য ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিন ধার্য হলেও এদিন পবিত্র শবেবরাতের ছুটি থাকবে।
এসব প্রস্তুতির মধ্যেই করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী। আমাদের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যনিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বন্ধ হলেও বিকল্পভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির গাইডলাইন মেনে নতুনভাবে ক্লাস শুরু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। এর পর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে যে বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি আছে তাদের পরামর্শ ক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেব।
এদিকে এখনো টিকার আওতার বাইরে রয়েছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৮ বছর থেকে এর বেশি বয়সী শিক্ষক, অন্যান্য জনবল ও শিক্ষার্থী অন্তত ৫২ লাখ ১০ হাজার। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ লাখকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন ৫ লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী। অনাবাসিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ পরিকল্পনার বাইরে আছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষকের টিকাদান চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার শিক্ষকের টিকাদান শেষ হয়েছে। দেশে অর্ধ লাখ কিন্ডারগার্টেন স্কুল থাকলেও এর শিক্ষকরা টিকাদানের বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধার মধ্যে নেই বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ শিক্ষার্থী আছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ লাখেরই বয়স ১৮ বছরের ওপরে। তারা সবাই টিকার বাইরে থাকছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী এবং ৪০ বছরের নিচে থাকা শিক্ষক ও অন্য জনবল। একইভাবে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরাও রয়েছেন টিকার বাইরে। সেই হিসাবে নতুন করে করোনার ঊর্ধ্বমুখিতার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ছিল, ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও সমমানের ক্ষেত্রে ৬০ কর্মদিবস ক্লাস হওয়ার পর দুই সপ্তাহ প্রস্তুতির সময় দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ৮০ কর্মদিবস ক্লাস হওয়ার দুই সপ্তাহ প্রস্তুতির সময় দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে তাদের পরীক্ষা। সে অনুযায়ী তাদের সিলেবাস চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণায় এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাসের আনন্দ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। কয়েক মাস করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করায় চলতি বছরের শুরু থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি উঠতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে। এ নিয়ে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সংক্রমণ ফের বৃদ্ধির এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আন্তর্জাতিক মানদ- হচ্ছে পর পর দুই সপ্তাহ যদি সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকে। আমাদের এখানে প্রায় ১০ শতাংশ সংক্রমণের হার। তবে এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফের বছরজুড়ে বন্ধ থাকবে, এমনটা হতে পারে না। আমাদের এর মধ্যেই চলতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ পরিস্থিতি জোনভিত্তিক পরিসংখ্যান করতে হবে। যেখানে সংক্রমণ হার কম এসব জায়গার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই স্বাভাবিক চলছে। আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আইডল হতে পারে। সরকারকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পালনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
-কেএল