আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, মুরশিদাবাদ এবং ওয়েস্টবেঙ্গলের প্রায় ৮০ হাজার কওমি ছাত্র যার লেখা বই পড়ে ইংরেজি ভাষা শিখছে তিনি হলেন এমলাক স্যার। তিনি লিখেছেন আরবি ভাষার উপর এক যুগান্তকারী কিতাব। এখানে আজকে কওমি প্ল্যাটফর্ম ও ইংরেজি ভাষা এ বিষয়ে কিছু বলব।
কওমি জগতে এমলাক স্যারের এই ভাষাজ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার গল্প শুনতে চাইলে স্যার বলেন, ২০১৪ সালের কথা। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর সাবেক মহাসচিব হযরত মাওলানা আ. জাব্বার জাহানাবাদী রহ. বেফাকে তার অফিস রুমে বসে আছেন। আমি সালাম দিতেই উত্তর দিয়ে আমাকে ভিতরে ডাকলেন। সামনের দুইজন ভদ্র লোকের পাশে একটি খালি চেয়ারের দিকে ইংগিত করে আমাকে বসতে বললেন। এই দেখাটা হয়েছিল হযরতের সাথে আমার বেশ কয়েক বছর পর। আমি ইংরেজি ভাষা নিয়ে কাজ করছি শুনে হুযুর অত্যন্ত খুশি হলেন এবং সাথে সাথে নিজ পবিত্র জবান থেকে আমাকে এভাবে প্রস্তাব করলেন, মাওলানা, বেফাকের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটা কোর্স করা যায় কি? সেই দিনটি ছিল আমার লাইফের একটি টার্নিং পয়েন্ট।
বললাম, জ্বি হুযুর! ইনশা আল্লাহ আমি করব। হুযুর সুন্দর করে বলে দিলেন, সপ্তাহ ১০দিন পরে আসুন এবং কাজ শুরু করে দিন। জাহানাবাদী হযরতের নামের নিচে আমার নাম ছেপে শুরু হলো বেফাকের ব্যানারে যায়েদ, ওমর ও বকরদের জন্য আরবির আদলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোর্স। পরিমিত আরবি নাহু ছরফের আলোকে আমার পাঠদান পদ্ধতি দেখে কোনো কোনো কোর্সে আলহামদুলিল্লাহ ১০০ জন ছাত্রও হয়ে যেত। যতদূর মনে পড়ে হযরত অসুস্থ বিছানায় শুয়ে ছিলেন। আমি কাছে গিয়ে ফ্লোরে বসে মাদানী নগর মাদরাসায় শাবান মাসে একটি কোর্স করার আগ্রহ প্রকাশ করলে বিছানা থেকে উঠে চেয়ারে বসে নিজ হাতে মাদানী নগর মাদরাসার প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা ফয়যুল্লাহ সন্দিপী সাহেব দা.বা. এর নিকট একটি চিঠি লিখে কম্পোজার দিয়ে কম্পোজ করিয়ে নিজে কারেকশন করে বেফাকের প্যাডে সাইন ও সীল মেরে আমাকে মাদানী নগর পাঠিয়ে ছিলেন। সেখানে আমার তিনটি কোর্স হয়েছে। সারা বাংলাদেশ থেকে ছাত্র ভাইয়েরা এসেছে। আলহামদু লিল্লাহ বেশকিছু ছাত্র ইংরেজি ভাষার দিশা তারা পেয়েছে। আজ ফরিদাবাদ ৬বছর ও জামিআ রাহমানিয়ায় ৩বছর যাবৎ নিয়মিত ক্লাস করানোর পাশাপাশি সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমি নিজে কোর্স করাচ্ছি এবং আমার মানহাজে আরো অনেক জায়গায় আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ কোর্স করাচ্ছেন।
[caption id="" align="aligncenter" width="720"] গত বছরের কোর্সের শিক্ষার্থীদের একাংশ।[/caption]
যেসব স্থানে কোর্স হচ্ছে সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করা হল। ১. গাজিপুরের দেশীপারা মাদরাসায়) টাঙ্গাইল ৩. সিরাজ গঞ্জ ৪. ঢাকা উত্তরা আরো বিভিন্ন স্থানে। আলহামদু লিল্লাহ! এ বছর আমার কোর্স ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৪ দিন জামিয়া কারিমিয়া, রামপুরা, ঢাকা এবং রমযানের প্রথম ২০ দিন দারুল উলূম দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ কোর্স অনুষ্ঠিত হবে।
কোর্সের বৈশিষ্ঠসমূহ: ১. আমার লেখা তিনটি বইয়ের মধ্যে লেটস লার্ন ইংলিশ ভার্সন ওয়ান বইটি পরিপূর্ণ তামরিনের সাথে মুখস্থ করানো হবে।
২. লাইফ অব ইংলিশ (১৮০০টি ইংরেজি মাছদারের কিতাব) থেকে ৩-৪শ মাছদার মুখস্থ করানো হবে এবং সেগুলো দিয়ে মাজি ও মুযারের জুমলায় খবারিয়্যাহ- জুমলায় ইনশাইয়্যাহ (প্রশ্ন) এসবাত- নাফি, মার‚ফ-মাযহুলের হাজার হাজার বাক্য অনুশীলন করানো হবে।
৩. একজন ছাত্র প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কী প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর কেমন হয় এমন ২৭১ টি প্রশ্ন- উত্তর হিফজ খানার ছাত্রদের মতো করে মুখস্থ করানো হবে ইনশা আল্লাহ।
৪. লেটস লার্ন ইংলিশ ভার্সন ২ (উচ্চ লেভেলে কিতাব) মোটামুটি বুঝিয়ে দেয়া হবে।
৫. আসর থেকে মাগরিব লেখা অনুশীলন করানো হবে।
৬. প্রতিদিন স্পিকিং প্রাক্টিসের পাশাপাশি লিসেনিং প্রাক্টিস করানো হবে।
৭. ইনশা আল্লাহ কোর্স শেষে তালীমী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে উত্তীর্ণ ছাত্রদেরকে সনদ দেয়া হবে।
৮. ইংরেজি ভাষা নিয়ে কাজে আগ্রহীদেরকে পূর্ণ সহোযোগিতা করা হবে।
৯. কিভাবে ইংলিশে স্পীচ ডেলিভার (বক্তৃতা দেয়া) শেখানো হবে।
১০. কথায় স্মার্ট করা হবে।
আমি কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষক মহোদয়গণদের নিকট বিনয়ের সাথে আরজ করছি যে, ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য বাজারে অনেক বই আছে। আলহামদুলিল্লাহ! আমিও কিছু বই তৈরী করেছি যা ৬ বছর যাবৎ ফরিদাবাদ ও ৩ বছর যাবৎ রাহমানিয়ায় পড়ানো হয় এবং আরো শতশত মাদরাসায় দাখেলে নিসাব। আমি কোর্সে এগুলোই পড়াই।
এখন আমার কথা হলো- আমার কোর্সে কী পড়ানো হবে? একজন ছাত্র কতটা এসতেফাদা অর্জন করতে পারবে? আসলেই কি এই কোর্সে তার উপকার হবে কি না? সেটা আমার লেটস লার্ন ভার্সন ওয়ান বইখানি- ই বলে দেবে। আমি সত্যের নিরিখে এর বিচার বিবেচনা আপনাদের উপর ন্যাস্ত করে দিলাম।