মোস্তফা ওয়াদুদ: দারুল উলুম দেওবন্দ। উম্মুল মাদারিস। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। মাদরাসায় পড়াশুনা করে আর দেওবন্দে পড়ার ইচ্ছা রাখে না-এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সেটা বাংলাদেশ কিংবা ভারতের ছাত্র হোক। পাকিস্তানের কিংবা আমেরিকার হোক। লন্ডনের কিংবা কানাডার। উত্তর আফ্রিকা কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা; সবখানেই দেওবন্দের প্রভাব রয়েছে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস এর কারণে সবকিছু উলট-পালট হয়ে গিয়েছে। পাল্টে গেছে বিশ্বের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি। তাই অস্বাভাবিক রীতিটিই বেছে নিয়েছে উম্মুল মাদারিস দারুল উলুম দেওবন্দ। ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। এ বছর নতুন কোন শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি নিবেনা দেওবন্দ মাদরাসা। দেওবন্দ মাদরাসা চলমান পরিস্থিতিতে এমন চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
যে প্রতিষ্ঠানে পড়ার স্বপ্ন থাকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের। সে প্রতিষ্ঠানে যখন ভর্তি বন্ধ! তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু দু:খ ও মনোকষ্টের কারণ হবে শিক্ষার্থীদের। তবে দেওবন্দের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভাবনা কী? বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন তারা? নিজেদের কথাগুলো শেয়ার করেছেন আওয়ার ইসলামের কাছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি সাজিয়েজেন আমাদের নিউজরুম মোস্তফা ওয়াদুদ।
ফরিদাবাদ মাদরাসার তাকমিল জামাতের ছাত্র মুহাইমিনুল ইসলাম। মুহাইমিনুল ইসলাম ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে মেশকাত জামাতে সারাদেশে বেফাকে সিরিয়াল পেয়েছে। ক্লাসেও মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। দেওবন্দে এ বছর ভর্তি হতে পারবে না জেনে খুবই মর্মাহত তিনি।
আওয়ার ইসলামকে তিনি জানান, দেওবন্দে ভর্তি বন্ধ। বিষয়টি জানা ছিলো না। আপনার থেকেই জনতে পারলাম। জানিনা এর মাঝে কি কল্যাণ আছে? বিশ্বব্যাপী এমন এক ভাইরাসের সৃষ্টি হল, যার কারণে মানুষ মানুষের সান্নিধ্য থেকে দূরে চলে যেতে চায়। কাছে আসতে চায় না কেউ কারো। সেই তাইসির জামাত থেকেই স্বপ্ন দেখতাম দেওবন্দ মাদরাসায় পড়ার জন্য। কিন্তু এ বছরেই করোনাভাইরাসের মত বিপত্তি দেখা দিল। দেওবন্দে যেতে পারব না বলে খারাপ লাগছে। তবে আশা ছাড়ছি না। আগামী বছর আল্লাহ চাহে তো আবার দেওবন্দে যাওয়ার চিন্তা করবো ইনশাআল্লাহ।
মুহাইমিনুল ইসলাম এর মত দুঃখের সঙ্গে কথা বলেছেন, রাজধানীর বারিধারা মাদরাসার ছাত্র মাহমুদুল হাসান। বারিধারা মাদরাসা থেকে প্রতিবছরই অসংখ্য ছাত্র দেওবন্দ মাদরাসায় গমন করে থাকে। কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে দেওবন্দে যেতে না পেরে অত্যন্ত মর্মাহত ও ব্যতীত তারা।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার তাকমিল জামাতের ছাত্র মোহাম্মদ নজিবুল্লাহ। শায়খুৃল হাদিস পিতার একমাত্র পুত্র মোহাম্মদ নজিবুল্লাহ। জন্মের পর থেকেই পুত্রকে দেওবন্দের পড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু এ বছর আর পূরণ হচ্ছে না সে স্বপ্ন। এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত নজিবুল্লাহর মত তার বাবাও।
কথা বলেছিলাম জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমীর সঙ্গে। মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী দারুল দেওবন্দে মসজিদে কদীমের ইমাম ছিলেন। অত্যন্ত সুনামের সাথে পড়ে এসেছেন তিনি।
আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, ‘এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে শুধু দেওবন্দ কেন! সারা বিশ্বই একরকম পাল্টে গেছে। তবে দেওবন্দের এ সিদ্ধান্ত চিরস্থায়ী নয়। পুনরায় আবার হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভর্তি নেওয়া শুরু করবে দেওবন্দ। আমরা এ প্রত্যাশাই করি।’
এমডব্লিউ/