আওয়ার ইসলাম: দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন ও শায়খুল হাদিস,হযরত মাওলানা মুফতি সাইদ আহমাদ পালনপুরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, উস্তাদরা তিন প্রকার-
এক- আগত সবক মুতালাআ করে সবকে হাজির হয়ে বিভিন্ন শুরুহাতের বক্তব্য অগুছালোভাবে বলতে থাকেন৷ কী দিয়ে কথা শুরু করলেন? আর কী দিয়ে শেষ করলেন? ছাত্র উস্তাদ কেউ জানেনা৷
দুই- মুতালাআ করার পর মেধাকে কাজে লাগিয়ে একটি সারনির্যাস তৈরি করেন৷ প্রয়োজনে তা নিজে নোট করে ফেলেন৷ অপ্রয়োজনীয় কথা, নুকতা বা'দাল ওকু'(লেখকের বিভিন্ন অহেতুক মাকসাদ বয়ান করা) ও তালিবে ইলমের বোধগম্য বিষয় নয়, এমন কথাকে এড়িয়ে সহিহ ও তত্ত্বনির্ভর কথা তালিবে ইলমদের কাছে পেশ করেন৷
তিন- সময়কে অহেতুক কাজে নষ্ট করে,গল্প-সল্প ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনের অযুহাতে শেষ করে সবকে যাওয়ার আগে এক নযর কিতাব ও হাশিয়া দেখে গিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় পাঠ দান করেন৷ আবার কেউ কেউ সবকে বসে হাশিয়া দেখা শুরু করেন৷
হজরত রাহিমাহুল্লাহ বলেন, তাদের অবস্থা হলো, কিছু মুতালাআ করে তালিবে ইলমদের সামনে গিয়ে বমি করে দেয়া আরকি!
আশা করি, বুঝতে বাকী নেই দ্বিতীয় প্রকারের উস্তাদকেই বলা হবে যোগ্য উস্তাদ৷ আর এমন উস্তাদকে প্রচুর মুতালাআ, মেহনত, রোনাজারী ও মুনাজাত করতে হয়৷
মনে রাখতে হবে, উস্তাদ যতবেশি যোগ্যতা সম্পন্ন হন তার ছাত্ররাও ততবেশি যোগ্যতা সম্পন্ন হয়৷ নিজের অযোগ্যতাকে ঢেকে রেখে যোগ্য উস্তাদ হওয়া যায় না৷ ছাত্ররাও বুঝে নেয় কোন উস্তাদ যোগ্য আর কে অযোগ্য? তালিবে ইলমকে যোগ্য করে তুলতে হলে উস্তাদ 'মাহিরে ফন' (শাস্ত্রজ্ঞ) হতে হবে৷ যে ফনের পাঠ দান করবেন সে ফন ভাল করে আত্নস্থ না করে কেবল উর্দু বা বাংলা শরাহ দেখে কিতাব হল করে দরস দান করা যোগ্য উস্তাদের পরিচয় হতে পারে না, পারে না৷ সে ফনের মুহাক্কাক ও সাহিবে ফন লেখকের কমপক্ষে দশটি কিতাব আপনার মুখস্ত থাকতে হবে৷ আরবি যোগ্যতা আপনার শতভাগ থাকতে হবে৷ নিকটতম আকাবিরে দেওবন্দের দারসি তাকরির ছেপে এসেছে৷ তাদের সাথে তুলনা করুন আমাদের দারস, দেখবেন কতটা মূর্খতা নিয়ে আমরা বসবাস করি৷
তাদের লিখিত কিতাব না দেখে, তাদের দারসি তাকরির মুতালাআ না করে, তারা যে সকল কিতাব দেখে দারস পেশ করেছেন, সরাসরি সেগুলো আমরা কয়জন মুতালাআ করি? সেসকল কিতাব মুতালআ করে আমরা কয়জন দারস দিতে পারব? মুহাদ্দিস আর আল্লামার রমরমা বাজারে এমন কয়জন আছেন? তাদের কিতাবই আমরা কতজন মুতালআ করি? হিফযুন নুসুস আমাদের কতটুকু আছে? সনদসহ কয়টা হাদিস আমাদের মুখস্ত আছে? ফাতহুল বারি আগাগোড়া মুতালাআ আমরা কয়জন করেছি? ফায়জুল বারি ও মআরিফুস সুনানের নিগুড় তথ্য আমরা কয়জন অনুধাবন করি? ইলমে সরফ ও নাহুর স্বপ্নদ্রষ্টাদের কিতাব কী আমরা খুলে দেখেছি? কীভাবে আমরা নিজেদেরকে যোগ্য মনে করি?
আসলে আমাদের আরো অনেক এগিয়ে যেতে হবে৷ ইলম অর্জন করুন দুনিয়া আপনার পদচম্বন অবশ্যই করবে৷
ইয়াহইয়া বিন মুআজ রাজি রাহ.-এর উক্তি অন্তরে বসিয়ে নেন, من اراد الدنيا فعليه بالعلم ومن اراد الاخرة فعليه بالعلم ইলম অর্জন করো ভাল করে দুনিয়াও পাবে আখেরাতও পেয়ে যাবে৷ [হিলইয়াতুল আউলিয়া ৪/৪৪১]
আর দুনিয়া না পেলে আফসোস কীসে? হিজরতের আগে ও মক্কা বিজয়ের আগে ইন্তেকালকারী সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা বেশী কেন? দুনিয়া ভোগ না করা তার অন্যতম কারণ৷ এজন্য মুহতামিম ও নাযিমে তা'লীমাতের সমালোচনা না করে আমরা মুতালআ শুরু করে দিলে আমরা মুতাবাহহির ফিল উলুম হলে আমাদের তালিবে ইলমরাও পড়াশোনা শুরু করবে৷যোগ্য হওয়ার জন্য তারা পাগলপারা হয়ে যাবে৷
মনে রাখতে হবে কানুন প্রয়োগ ও প্রহার করে ছাত্রদেরকে যে পরিমাণ যোগ্য করে তুলা যায়,উস্তাদরা যোগ্য, মুতালআ প্রেমিক ও মাহিরে ফন হলে আরো শতভাগ বেশি যোগ্য করে তুলা যায়৷
-কাউসার লাবীব