কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর
‘কাদিয়ানি ফেৎনার ভয়াবহতা ও উলামায়ে কেরামের জিম্মাদারি শীর্ষক’ আলোচনা সেমিনারসহ কাদিয়ানি বিরোধী সেমিনারের প্রচারণা করায় গোপালগঞ্জে হামলার শিকার হয়েছেন এক যুবক। আহত যুবকের নাম ওমর ফারুক। তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার কুশলী গ্রামের মো. আব্দুল খালেকের ছেলে। ভাগ্যক্রমে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বলে জানা যায়।
আহত ওমর ফারুক আওয়ার ইসলামকে জানান, আজ রোববার ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে স্থানীয় মল্লিকের মাঠ ও সিঙ্গিপড়ার মাঝে ফাঁকা রাস্তায় দু’টি আলাদা বাইকে করে চারজন আরোহী এসে হেলমেট পরা অবস্থায় আমার রাস্তা আগলে ধরে এবং হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে ও টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।
তিনি জানান, এ সময় তারা এ বলে হুমকি দেয় যে, ‘তুই আবদুল্লাহ (ছদ্মনাম; এখানে স্থানীয় এক কাদিয়ানির নাম বলা হয়েছিল। তবে সঙ্গত কারণে আওয়ার ইসলাম নামটি প্রকাশ করতে পারছে না।) ও তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে এ সমস্ত কর্মকাণ্ড করছিস? তোকে জানে মেরে ফেলবো। দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবো।’ তারা আমার মাথা থেকে টুপি নিয়ে টুপি পদদলিত করে এবং রুমাল কেড়ে নিয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে এ সময় রাস্তায় গাড়ি চলে আসলে আক্রমণকারীরা আমাকে রেখে দৌড়ে পালায়।
তিনি আরো জানান, যদি তখন গাড়ি চলে না আসতো তারা আমাকে হত্যা করে ফেলতো। তাদের আচরণে তেমন আবাসই পাওয়া যাচ্ছিল। তারা চাচ্ছিল একজনকে মেরে কাদিয়ানী বিরোধী সবাইকে ভীত করে দিতে। সাবধান করে দিতে। তবে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার প্রাণও যদি চলে যায় আমি আমার নবীর ইজ্জত রক্ষায় কাজ করে যাবো। যতদিন বেঁচে থাকবো নবীর দুশমনদের বিরোদ্ধে কাজ করে যাবো। আল্লাহ যতদিন হায়াত রেখেছেন এর বেশি তো চেষ্টা করলেও বাঁচতে পারবো না।
স্থানীয় আলেম, গােগালগঞ্জ, ভবানিপুরের ইসলামপুর মাদরাসার শিক্ষক মুফতি রহমাতুল্লাহ তার আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ার ইসলামকে বলেন, ওমর ফারুক পেশায় একজন প্রচারক। বিভিন্ন প্রোগ্রাম, সম্মেলন সমাবেশ যে কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে তিনি মাইকিং করে থাকেন। অনেক সময় ধর্মীয় বিষয়গুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে সাওয়াবের নিয়তে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে প্রচার করে থাকেন।
মুফতি রহমাতুল্লাহ আরো জানান, এর আগে তিনি গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার গহরডাঙ্গা মাদরাসার উদ্যোগে আয়োজিত খতমে নবুওয়ত সম্মেলনে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রচার তিনি করেছিলেন। আজও তিনি ইসলামপুর মাদরাসা ভবানীপুরে আয়োজিত খতমে নবুওয়ত বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসব প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় তিনি আজ হত্যাচেষ্টার শিকার হলেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এদিকে গোপালগঞ্জ সদর উলামা পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা ফখরুল আলম, গোপালগঞ্জ সদর উলামা পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল ও খতমে নবুওত মারকায ঢাকা’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি শুয়াইব ইবরাহীম, গোপালগঞ্জ সদর উলামা পরিষদের সদস্য মুফতি আব্দুস সামাদ ও মুফতি আহমাদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে আওয়ার ইসলামকে জানানো হয়, এ ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে অনতিবিলম্বে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করা না হলে কঠিন বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হবে এবং এর কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার কাদিয়ানী সম্প্রদায় ও প্রশাসনকে বহন করতে হবে। আমরা শান্তি প্রিয়। শান্তি পছন্দ করি। শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করলে আমরা বসে থাকবো না।
অপরদিকে আহত ওমর ফারুককে দেখতে গিয়ে গওহরডাঙ্গা মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ও শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর নাতি মাওলানা উসামা আমিন ওমর ফারুকের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সময় নেন। পাশাপাশি তিনি তার ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে আহ্বান জানান।
-কেএল