প্রশ্ন: জনাব আমার এক লক্ষ টাকার সুদী লেনদেন আছে। ইমাম সাহেব থেকে সুদের ভয়াবহতার বয়ান শুনে আমি অনুতপ্ত হই। এবং নিজেকে সুদ মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর হই। সুদ থেকে মুক্তি পেতে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাউকে অংশীদার বানাতে চাইলে, একজন অংশীদার খুঁজে পাই।
আমার দোকানের কম্পিউটার, সিপিইউ, ইপসন প্রিন্টার, তোশিবা ফটোকপি প্রিন্টার মেশিন, ১৩০ ওয়ার্ডের একটি সোলার প্যানেল ও একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা যার মূল্য প্রায় ২ লক্ষ টাকা। আমার অংশীদারের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে ২ লক্ষ টাকার মালামাল এর অর্ধেক শেয়ার লাভ লোকসানের ভিত্তিতে প্রদান করি। (প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে আমরা আয়-ব্যয়ের হিসাব করব। এখনো পর্যন্ত আমাদের হিসাব করার সময় হয়নি। অর্থাৎ মাস পূর্ণ হয়নি। মাস পূর্ণ হলে আয় ব্যায়ের হিসাব করে লাভ লোকসানের ভিত্তিতে লাভ লস উভয়ের মাঝে সমভাবে বন্টিত হবে।)
এখন জানার বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়াকে কেউ সুদি প্রক্রিয়া বলে দ্বিতীয়পক্ষ আমার শেয়ারদার একজন আলেমেদ্বীনকে সুদ খেয়েছে মর্মে ইমামতির পদ থেকে বিদায় করতে পারবে কিনা? তার পেছনে নামাজ পড়া সহীহ হবে কিনা? ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
পূর্ব অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, প্রতিমাসে গড়ে অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় হয়। ৪০০০ টাকা ভাড়া ও দোকানের কাগজ কালি বাবদ খরচ হয়। অপারেটর বাবদ ৫০০০ টাকা খরচ হয় । বাকি উদ্বৃত থাকে আনুমানিক ৭০০০ টাকা। সুতরাং আশা করা যায় অর্ধেক শেয়ার হিসেবে দ্বিতীয় পক্ষ কে আনুমানিক ৩৫০০ টাকা বা এর কম বেশি (আয় ব্যায়ের অনুপাতে) প্রতিমাসে হিসাব করে ১ থেকে ৫ তারিখে মধ্যে আমরা মোনাফা বন্টন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
নিবেদক
মোহাম্মদ হাশেম কিবরিয়া
মাইসছড়া, মহালছড়া, খাগড়াছড়ি, পার্বত্য জেলা।
জবাব: অর্থদাতা ও গ্রহীতার মাঝে সম্পাদিত উক্ত চুক্তিটিকে শরিয়তের পরিভাষায় মুশারাকা বা পার্টনাশীপ চুক্তি বলে। আর মুশারাকা চুক্তির ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, পারষ্পরিক সম্মতিক্রমে লাভ্যাংশের হার (যেমন ১০% ২০%) নির্ধারিত হতে হবে। লাভ্যাংশের বিশেষ অংক (যেমন ৩০০০০/= ৪০০০০/=) কিংবা ধারণাবশত নির্ধারণ করা বৈধ নয়। আর ব্যবসা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হলে তার দায়ভার মূলধন অনুপাতে প্রত্যেককে বহন করতে হবে। অর্থাৎ একজনের বিনিয়োগ যদি মূলধনের এক দশমাংশ হয় তাহলে সে লোকসানের এক দশমাংশ বহন করবে। সমান সমান হলে সমান সমান লোকসান বহন করবে। সেচ্ছায় বা শর্ত করে কোন এক শরিকের উপর ক্ষয় ক্ষতির দায়ভার চাপানো বৈধ নয়।
উপরোক্ত নীতিমালার আলোকে প্রশ্নোক্ত চুক্তিটিতে ধারণা বশত ‘আনুমানিক ৩৫০০ টাকা বা এর কম বেশি (আয় ব্যায়ের অনুপাতে)’ এভাবে না করে লাভ্যাংশের হার (যেমন ১০% ২০% বা ৫০%) নির্ধারিত করে নিলে সঠিক হয়ে যাবে। এবং ভবিষ্যতে পার্টনারশিপের মধ্যে ঝগড়া এড়াতে সহায়ক হবে।
আপনার প্রশ্নের “এখন জানার বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়া কে কেউ সুদি প্রক্রিয়া বলে দ্বিতীয়পক্ষ আমার শেয়ারদার একজন আলেমেদ্বীনকে সুদ খেয়েছে মর্মে ইমামতির পদ থেকে বিদায় করতে পারবে কিনা? তার পেছনে নামাজ পড়া সহীহ হবে কিনা?” উল্লেখিত অংশটি অস্পষ্ট হওয়ায় এ অংশের উত্তর দিতে পারছি না। মেহেরবানি করে স্পষ্ট প্রশ্ন করলে ভালো হয়।
প্রিয় ভাই, ইসলামে জীবিত প্রাণির ছবি উঠানো নিষেধ। আপনার প্রতিষ্ঠানটির অনেক কাজের একটি কাজ যেহেতু ছবি উঠানো তাই যথাসম্ভব ছবি উঠানো বাদ দিয়ে এর সাথে অন্য আরো জায়েয ব্যবসা সংযুক্ত করতে পারেন। ছবি, ভাস্কর্যের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা একদম স্পষ্ট। হারাম। উল্লেখিত ব্যবসার লাভ্যাংশ জায়েজ হলেও কারণটি গুনাহের। তাই এ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
রেফারেন্স:
(১ ) مصنف ابن أبي شيبة (১০/ ৪৮৬)
حدثنا عبد الصمد بن عبد الوارث ، عن شعبة ، قال : سألت الحكم ، وحمادا وقتادة ، عن رجلين اشتركا ، فجاء أحدهما بألفين، وجاء الآخر بألف فاشتركا واشترطا ، أن الوضيعة بينهما والربح نصفين ، فقال : الربح على ما اشترطا عليه والوضيعة على المال.
(২) الدر المختار ৮/২৮৪ سعيد.
(وكون الربح بينهما شائعا) فلو عين قدرا فسدت (وكون نصيب كل منهم معلوما) عند العقد. ومن شروطها: كون نصيب المضارب من الربح،
(৩) الهداية ৬/১৬৮ مكتبة البشرى.
ومن شرائطها ان يكون الربح بينهما مشاعا لا يستحق أحدهما منه دراهم مسماة.
(৪) رد المحتار ৮/২৮৪
وفى البحر: الرابع ان يكون الربح بينهما شائعا كالنصف والثلث لا سهما معينا يقطع الشركة.
(৫) بدائع الصنائع ৫/৮৩
إذا عرف هذا فنقول إذا شرطا الربح على قدر المالين متساويا أو متفاضلا فلا شك انه يجوز ويكون الربح بينهما على الشرط سواء شرطا العمل عليهما أو على أحدهما والوضيعة على قدر المالين متساويا ومتفاضلا لان الوضيعة اسم لجزء هالك من المال فيتقدر بقدر المال
(৬) الفتاوى الهندية ২/৩২৬ زكريا.
الفصل الثاني في شرط الربح والوضيعة وهلاك المال ) لو كان المال منهما في شركة العنان والعمل على أحدهما إن شرطا الربح على قدر رءوس أموالهما جاز ويكون ربحه له ووضيعته عليه وإن شرطا الربح للعامل أكثر من رأس ماله لم يصح الشرط ويكون مال الدافع عند العامل بضاعة ولكل واحد منهما ربح ماله ، كذا في السراجية . ولو شرطا العمل عليهما جميعا صحت الشركة ، وإن قل رأس مال أحدهما وكثر رأس مال الآخر واشترطا الربح بينهما على السواء أو على التفاضل فإن الربح بينهما على الشرط ، والوضيعة أبدا على قدر رءوس أموالهما ، كذا في السراج الوهاج .
(৭) فتاوی محمودیۃ ২৮/৩৬৫
উত্তর লিখনে
আবুল ফাতাহ কাসেমি
উস্তাদ, জামিয়া কারীমিয়া আরাবিয়া রামপুরা, ঢাকা
-এটি