মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি।।
মাতৃভাষা ব্যবহার এবং এর মর্যাদা রক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন হয়েছে। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন চলমান বিশ্বের স্মরণীয় ঘটনা। দিনটি ছিল বাংলা ১৩৫৮ সালের ৮ ফাল্গুন। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার দৃপ্ত শপথ নিয়ে বাংলার অকুতোভয় বীর সন্তানরা এই দিনে নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়।
রচনা করে এক সূর্যস্নাত রক্তিম ইতিহাস। বরকত, সালাম, রফিক ও আবদুল জব্বারের মতো অনেক তরুণের জীবনের বিনিময়ে সেদিন বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার রক্ষিত হয়েছিল। ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য যারা জীবন দেয় তারা শহীদ। তাদের প্রতিদান হলো জান্নাত। মহানবী সা. ঘোষণা করেন, ‘নিজের মাল রক্ষার জন্য যার জীবন গেল সে শহীদ, আপনজনকে বাঁচানোর জন্য যার জীবন গেল সে শহীদ, নিজ ধর্ম রক্ষার জন্য যার জীবন গেল সে শহীদ, নিজের জীবন ও মর্যাদা রক্ষার জন্য যার জীবন গেল সে শহীদ। ’ সুনানে আরবায়া। মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার।
তদানীন্তন পাক স্বৈরশাসক বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায়ভাবে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছিল। কার্যত বাংলাভাষী মানুষ অন্যায্য সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। পুলিশি ১৪৪ ধারা ও কঠোর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ ভেঙে জীবনের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা আপন ন্যায্য অধিকার রক্ষা করে। মাতৃভাষা নিয়ে এ আন্দোলনেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বীজ বপন হয়েছিল। রচিত হয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে তারা শহীদের মর্যাদা পাবেন। দেশ, জাতি, জানমাল, ধর্ম ও অধিকার রক্ষার জন্য ত্যাগ, বিসর্জন ও যথাযথ পদক্ষেপে এগিয়ে আসা প্রতিটি ধর্মে একান্ত বাধ্যতামূলক বিষয়। এসব ক্ষেত্রে অবহেলার সুযোগ ইসলামে নেই। হজরত মুসা (আ.) তাঁর উম্মতদের নিয়ে আপন জন্মভূমি আল্লাহদ্রোহী জালিমদের কবল থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
সুরা মায়েদা। হজরত ইবরাহিম (আ.) আপন সন্তান ও পরিবারের আবাসস্থল পবিত্র নগরী মক্কার নিরাপত্তার জন্য পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। সুরা ইবরাহিম। মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আপন জন্মভূমি পুনরুদ্ধার করেছিলেন। সুরা আল ফাতহ। এসব ইতিহাস আমাদের ইমানি চেতনায় আলোর সঞ্চার করে, নিজের দেশ, জাতি ও অধিকার রক্ষার মহান দায়িত্ববোধে উজ্জ্বল দিগন্ত সৃষ্টি করে। প্রমাণ করে দেশ ও জাতির অধিকার রক্ষার গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। তবে ইসলাম অন্যায়-অত্যাচার ও হিংসা-বিদ্বেষকে সমর্থন দেয় না। তাই আমাদের সব সময় ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে হবে।
সত্যের পথে জানমাল ও জীবন বিসর্জনের আদর্শ সমুন্নত করতে হবে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে অনৈতিক কোনো কাজে জড়িত হওয়া মোটেও সমীচীন হবে না। এই দিনে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। মহান প্রভুর কাছে তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করি। একুশের যে সফলতা আমাদের অর্জিত হয়েছে তা যেন ইসলামের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি, এ দেশের মুসলমানদের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি মহান আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।
লেখক: গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
-এটি