দরজায় কড়া নাড়ছে কওমি মাদরাসার বিভিন্ন জামাতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। এবার কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাবর্ষের সময় কম হলেও কমেনি পরীক্ষার সিলেবাসের পরিমাণ। তাই অল্প সময়ে দীর্ঘ এ নেসাব থেকে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কলাকৌশল বিষয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছে পরীক্ষা বিষয়ক শিক্ষাপরামর্শ ‘পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও সেরা ফলাফলের কৌশল’। ধারাবাহিক পর্ব- ৯
লিখছেন দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসার উস্তাযুল হাদিস, দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজেল ‘মাসুম আবদুল্লাহ’।
(গত পর্বের পর)
যোগ্যতার ভিত গড়ার মৌলিক জামাতগুলো অন্যতম মিজান জামাত। তাই এ জামাতের পড়াশোনার মূলমন্ত্র নিজের যোগ্যতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা। শুধু পাঠ্য পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্যে নয় বরং জীবন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্যে এ জামাতের পড়াশোনা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও অনুশীলন নির্ভর। যত বেশি অনুশীলন করা যাবে—তত বেশি ভালো ফলাফল ও সেরা সফলতা অর্জিত হবে এ জামাতে। নিচে এ জামাতে ভালো ফলাফল ও সফলতা লাভের কিতাবভিক্তিক কিছু কৌশল ও করণীয় তুলে ধরা হল—
মিযানুস সরফ
১. পুরো কিতাব বুঝে-শুনে বাংলায় পড়বে। বাংলায় লিখে ঠোঁটস্থ করে নেবে। সুরায়ে ফাতেহার মতো পুরো কিতাব কণ্ঠস্থ ও ঠোঁটস্থ করবে।
২. সংজ্ঞা-প্রকার ও গঠনপ্রণালী বুঝে-শুনে উদাহরণ ও অর্থসহ রপ্ত করবে।
৩. কিতাবে দেয়া শব্দ ও তার বাইরের শব্দ দিয়ে অর্থসহ প্রচুর পরিমান গরদান অনুশীলন করবে এবং খাতায় বেশি বেশি অর্থসহ গরদান লিখবে।
৪. সিগা, বহস, বাব, মাসদার ও অর্থ চেনার ইজরা ও অনুশীলন করবে। এ ইজরা কুরআন শরীফ থেকে করলে ভালো হয়।
৫. বেশি বেশি লিখে অনুশীলন করার পাশাপাশি পরস্পরে ধরাধরি বেশি করবে। এতে ফায়দা বেশি হবে। প্রয়োজনে উস্তাদকে সামনে রেখে ধরাধরি করবে। বিতর্কের মতো গুরুপ গুরুপ করেও সাপ্তাহিক বাহাস করা যেতে পারে। এতেও বেশ ফায়দা হবে।
সফওয়াতুল মাসাদির
১. উস্তাদের দিকনির্দেশনা মতো অল্প অল্প করে নিয়মিত মুখস্থ করা।
২. কঠিন কঠিন শব্দগুলো দিয়ে বেশি বেশি অনুশীলন করা।
৩. পুরো কিতাব মুখস্থ ও অনুশীলন করা সম্ভব না হলে উস্তাদের দিকনির্দেশনা মতো নির্বাচিত অংশ হলেও ঠোঁটস্থ করে নেয়।
৪. শব্দার্থগুলো ঠোঁটস্থ করে নেবে। নির্বাচিত অংশ হলেও মুখস্থ করবে। যাতে বহুল প্রচলিত শব্দ ও তার ব্যবহার-পরিক্রমা তোমার রপ্ত হয়ে যায়।
৫. শব্দ, অর্থ এবং বাব ও বহস ভিত্তিক গরদান হাঁটতে-বসতে পরস্পরে ধরাধরি করবে। যত বেশি বেশি সম্ভব এভাবে অনুশীলন ও চর্চা চালিয়ে যাবে।
এসো আরবি শিখি/আল কিরায়াতুল ওয়াযিহাহ্
১. পুরো কিতাবে দেয়া শব্দার্থগুলো ব্যবহার নীতি-সহ ঠোঁটস্থ করবে।
২. আরবি ইবারতে সঠিক হরকত ও তার সাবলীল অর্থ রপ্ত করবে।
৩. আরবি বাক্যরচনা করার অনুশীলন করবে।
৪. আরবি থেকে বাংলা ও বাংলা থেকে আরবি করার ব্যাপক অনুশীলন করবে।
৫. কিতাবে দেয়া আরবিগুলো মুখস্থ করে নেবে। প্রতিটি পৃষ্ঠা বা প্রাতিটি লাইন কমপক্ষে বিশ-বার করে জোরে জোরে নিজেকে শুনিয়ে শুনিয়ে পড়বে।
৬. কিতাবে উল্লেখিত আরবির আদলে বিভিন্ন আরবি-বাংলা বাক্য বানানোর নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলন করবে। যত বেশি আরবি-বাংলা পরস্পরে ধরাধরি করবে তত বেশি ফায়দা হবে। মুখের জড়তা কাটবে। মেধা বিকশিত হবে। আরবি দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়বে।
৭. কিতাবে দেয়া অনুশীলনগুলো দু’জন দু’জন অনুশীলন করবে। প্রতিদিন নিয়ম করে একটা সময় আত্-তামরীনুল কিতাবি—কিতাব থেকে বলে-লিখে অনুশীলন করবে।
বেহেশতি গাওহার
১. প্রতিটি মাসআলা বুঝে বুঝে পড়বে।
২. সংজ্ঞা, প্রকার ও হুকুমসমূহ ভালোভাবে ঠোঁটস্থ করবে।
৩. লিখে লিখে মুখস্থ করবে।
৫. যে অধ্যায় ও অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে তা বেশি বেশি রপ্ত করবে।
৬. প্রচলিত ও সময়োপযোগি মাসয়ালাগুলো বিশেষ যত্নসহ রপ্ত করবে।
৭. দোয়া-কালাম বিশুদ্ধ হরকত ও অর্থসহ লিখে লিখে মুখস্থ করবে।
তারিখুল ইসলাম
১. কিতাবের প্রতিটি প্রশ্ন ও তার উত্তর বুঝে বুঝে পড়বে।
২. শব্দার্থ মুখস্থ করবে।
৩. সংজ্ঞা, নাম ও সন-তারিখ বিশেষ গুরুত্বসহ রপ্ত করবে।
৪. ঘটনার বিবরণ ও তার সার সংক্ষেপ খাতায় লিখে ঠোঁটস্থ করবে।
৫. যে-সব জায়গা থেকে প্রশ্ন বেশি আসে—যত্নসহ সে-সব জায়গাগুলো বার বার পড়বে ও লিখে মুখস্থ করবে। এ জন্যে বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করা যেতে পারে। (চলবে)
এ আয়োজনের বাকি পর্ব আমাদের ‘শিক্ষাঙ্গন’ ক্যাটাগড়িতে।
-কেএল