মোস্তফা ওয়াদুদ: স্বপ্নচারী লেখক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন বলেছেন, প্রকাশকরা যে গতিতে চলছে সেটা বেশ আশাব্যঞ্জক। কারণ প্রকাশকদের সে যুগ আর এ যুগের মাঝে অনেক তফাৎ পরিলক্ষণ করা যাচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সেই ৯৩-৯৫ সালের সময়ে যখন আমি বাংলাবাজারে চাকরি করতাম। তখন দেখেছি একটি ১০০০ পৃষ্ঠার বই প্রকাশিত হলে প্রথম দিকের পৃষ্ঠাগুলো থাকতো হোয়াইট কাগজের। আর শেষের দিকের কিছু পেজ থাকতো অফ হোয়াইট। বাকিগুলো সব হলুদ। সে তুলনায় বর্তমানের প্রকাশকগণ অনেকটা নতুন ধারায় বই বের করছেন এবং বাজারে তার বিক্রিও বাড়ছে। এখন দশ হাজার বই বিক্রি করা বইয়ের সংখ্যা অনেক।
তিনি বলেন, কেউ যদি শুরুতেই গাড়ির গতি ১২০ চাপতে থাকেন তাহলে সেটা এক্সিডেন্ট এর সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়াটাই অনেক সুবিধার।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ এ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় কথা বলেন। বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামি পুস্তক প্রকাশক সমিতি (বিসিপ) যদি কলকাতার মেলায় অংশ নেন-তাহলে এটা একটি আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়। কারণ এখন অনেক হিন্দু পাঠকও ইসলামি বই পড়ে। কলকাতায় অনলাইনে বইমেলায় অংশ নিবেন (বিসিপ) এমন বিষয়কে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করে মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামি পুস্তক প্রকাশক সমিতি (বিসিপ) এর উদ্যোগে বিসিপ-ওয়াফি ‘১ম অনলাইন ইসলামি বইমেলা ২০২০’- এর সফল উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ১৬ জানুয়ারি (শনিবার) সকাল ১১ টায় রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার ড্রীম-২০ চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামি পুস্তক প্রকাশক সমিতি (বিসিপ)।
বিসিপ এর আহবায়ক মুহা. মাহমুদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শায়খ উবায়দুর রহমান নদভী, শায়খ মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, শায়খ ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভী, সিরাত লেখক মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি জহিরউদ্দীন বাবর, আওয়ার ইসলাম সম্পাদক মাওলানা হুমায়ুন আইয়ুব, মাওলানা মিরাজ রহমান, মুফতি মহীউদ্দীন কাসেমী, গার্ডিয়ান প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল মাসউদসহ বিসিপের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এ সময় মুফতি মুহীউদ্দীন কাসেমী বলেন, প্রকাশকদের মাঝে অসুস্থ প্রতিযোগিতা না করা উচিত। কারণ একজন প্রকাশক ঘোষণা করলেন একটি বই মার্কেটে আনবেন। ঠিক তার কয়েক মিনিট কিংবা কয়েক ঘন্টার মাঝেই আরেকজন প্রকাশক ঘোষণা দেন সেও ঐ বইটি মার্কেটে আনবেন। এটা অসুস্থ প্রতিযোগীতা। এর বিকল্প হিসেবে আপনি আরও আগে বা আরো পরে ঘোষণা দেন। তাহলেই আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা হবে না।
আরেকটি হলো, একই বই কয়েকজন প্রকাশক অনুবাদ করে মার্কেটে ছেড়েছেন। তারপরও আরেকজন প্রকাশক সেটি মার্কেটে আনার ঘোষণা দেন। এটা ঠিক না। নতুন নতুন বই প্রকাশনা প্রয়োজন।
কথা বলেছেন জাফর বিপি। তিনি বলেন, অনেক প্রতিভা আছে মূল্যায়ন না করার কারণে অকালে ঝড়ে পড়ে। সুতরাং বাণিজ্যিক দিক লক্ষ না করে বরং বইয়ের মানের ভিত্তিতে লেখককে মূল্যায়ন করা উচিত। প্রকাশকরা যদি লেখকের জনপ্রিয়তার প্রতি লক্ষ রাখে তাহলে অনেক লেখক অকালে ঝড়ে পড়বে।
গার্ডিয়ান প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর মোহাম্মদ বলেন, খুব হাপিত্যেশ বিরাজ করছে হৃদয়ে। নিজের চিন্তাটা কিভাবে সুন্দর করে ঘুরিয়ে পেছিয়ে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা যায় সেটার ফিকির করছি। কিন্তু দর্শন জাতীয় কোনো বিষয় আমরা পাঠকের সামনে হাজির করতে পারছি না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামি পুস্তক প্রকাশক সমিতির সদস্য রয়েছে দেশের স্বনামধন্য প্রায় ৩৫টি প্রকাশনী। এর মাঝে মাকতাবাতুল হাসান, হাসানাহ, বইপল্লি, গার্ডিয়ান, বইঘর, কানন, ইত্তিহাদ,শব্দতরু, সমকালীন, পথিক, সমর্পণ, নবপ্রকাশ, নাশাত, কালান্তর প্রকাশনী, প্রচ্ছদ প্রকাশন, মুসলিম ভিলেজ, রাহনুমা প্রকাশনী, দ্য সুলতান, আর-রিহাব, প্রজন্ম, বায়ান, হুদহুদ, মাকতাবাতুল আশরাফ রয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামি পুস্তক প্রকাশক সমিতি (বিসিপ) এর সদস্য সকল প্রকাশনীকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ক্রেস্ট প্রদান করেন আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিবৃন্দ।
এমডব্লিউ/