ড. শাইখ ইসমাইল আজহারী।।
ভয় একটা আবেগ, যখন ক্ষতিকর কিছু হবার আশঙ্কা থাকে তখন মানুষের এরকম আবেগ আসে। জীবন ধারণের জন্য ভয় একটা অপরিহার্য আবেগ যেটা একটা প্রাণীকে বিপদে প্রাণ বাঁচাতে বা নিরাপদে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এটা তখনই কাজে আসে যখন বিপদ আসলেই উপস্থিত। কিন্তু সত্যিকারের বিপদ যদি না থাকে এবং সারাক্ষণ অকারণ ভয় মন দখল করে থাকে তাহলে সেটা ক্ষতি করে।
ভয় যেভাবে কাজ করে
ভয়ের আবেগ আমাদের বিপদ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত করে। শরীরের বিভিন্ন হরমোন বের হয়। শরীর তখন বেঁচে থাকার জন্য বেশি প্রয়োজন যেসব কাজ কেবল সেসব চালু রাখে (যেযন দৃষ্টি) বাকিগুলো কমিয়ে দেয় (যেমন পরিপাক)। কিছু অঙ্গে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় ( মাংস পেশী, হৃদপিন্ড; যদি পালিয়ে বাঁচতে হয় তাতে প্রস্তুতির জন্য)।
আমাদের মস্তিষ্কেও সেসব এলাকায় হরমোনের প্রভাব বেড়ে যায় যেগুলো তাৎক্ষণিক বিপদে কাজ করে এবং বিপদের স্মৃতি ধরে রাখে। বিশেষ করে ‘এমিগডালা’।
ভয় যেভাবে স্বাভাবিক চিন্তার ধারা বদলে দেয়
ভয়ে এমিগডালা কাজ করে বেশি। ফলাফল হল স্বাভাবিক যৌক্তিক চিন্তা আর আসে না এবং সবকিছুই নেগেটিভ ভাবে চিন্তা আসতে থাকে ( যেমন ভবিষ্যত খারাপ হবে কিংবা কাছের কেও খারাপ আচরণ করবে/ করছে) । শুধু তাই না ঘটনা বা আবেগ গুলোর সূক্ষ্ম অংশগুলো ( ওই সময়, তার দৃশ্য, শব্দ, ঘ্রাণ) সবই স্মৃতিতে গেঁথে যায়। পরে ওই ঘটনার মতো কোন অংশ যেমন দৃশ্য, শব্দ শুনলেই বা ঘটনার কোন অংশ মনে আসলেই পুরোপুরি আগের মতো আবেগ ফেরত আসে।
দুশ্চিন্তা ও ভয়ের শারীরিক ক্ষতি
দীর্ঘস্থায়ী ভয় রক্তচাপ, হৃদরোগ বাড়ায়। ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে মনে কম থাকে। চারপাশে বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেয় না। রাগ বা এরকম আবেগ নিয়ন্ত্রণ হারায়। অন্যের আবেগ বুঝতে দেয় না আর অনেক দিন হলে হতাশা ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত করে।
লেখক: ভাইস প্রিন্সিপাল, জামিয়া আজহারিয়া মাদ্রাসা, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, মহাপরিচালক, সেন্টার ফর সাইকোট্রমাটলজি এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ।
-এটি