আওয়ার ইসলাম: মওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নাদভী রহ. এক ইতিহাস তৈরি করেছেন। প্রায় দুই শতাধিক আরবি ও উর্দু গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার বহু বই বিশ্বখ্যাত। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে তার বইগুলো। তার নাম যেমন ভারতের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই তার নাম ও কাজ সম্পর্কে জানে।
অমাদের আলোচ্য গ্রন্থ ‘ইনসানি দুনিয়া পর মুসলমানও কে আরুজ ও যাওয়ালকা আছর’ এটির তেলুগু ভাষায় অনুবাদ। এ কিতাবটি সর্ব প্রথম আলী মিয়া নদভী আরবি ভাষায় রচনা করেন। নাম ছিলো ‘মাজা খাসিরাল আলাম বি ইনহিতাতিল মুসলিমিন’। এ বইটি যখন রচনা করেন, তার বয়স ৩২ বছর থেকে বেশি ছিলো না। তখন তিনি যুবক ছিলেন। তার যৌবনের দিনগুলিতে লেখা তার এ গ্রন্থ থেকে অনুমান করা যায়, বয়সের তুলনায় তার বুদ্ধি, চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিতে কোনো দিকদিয়ে পিছিয়ে ছিলেন না।
মুসলমানদের উত্থান-পতনের বিষয়টি কোনও নতুন বিষয় নয়। মুসলমানদের পতনের পরে পাঁচ শতাব্দীরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। আল্লামা সাকিব আরসালানের ‘লিমাজা তাআখখারনা ওয়া তাকাদ্দামা গায়রানা’ গ্রন্থটিও এ বিষয়ে একটি ভাল বই। তবে বিশ্বখ্যাত লেখক সৈয়দ কুতুব রহ. স্পষ্টভাবে বলে গেছেন, এই বিষয়ে যত পুরাতন ও নতুন লিখিত বই আছে, তারমধ্যে মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর কিতাবের মত আর কোনো কিতবা চোখে পড়েনি। তার গ্রন্থটি বিশ্বে সবচেয়ে বড় একটি জায়গা জোড়ে সমাদৃত হয়ে আসছে। এই বইটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেকে এমনও বলেন, লেখক যদি এই বইটি ব্যতীত অন্য কোনও বই নাও লিখতেন, তারপরও তার নামটি ইতিহাসের পাতাই নয়, বরং মানুষের মুখে মুখে থাকতো।
মাওলানা নাদভীর মতে, মুসলমানের এই অবস্থান ও মর্যাদা কেবল সম্মান ও স্বাতন্ত্র্যের বিষয়ই নয়, এটি একটি দায়িত্ব। এ কর্তব্য এমন মাহান আমানত, যা গ্রহণ করতে আসমান, জমিন, গাহাড়-পর্বত অস্বীকার করেছে। কিন্তু এ মহান আমানতের দায়িত্ব নিয়েছে। এ আমানতের দায়িত্ব হলো যারা ইসলামের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, তাদের কাছেও এর দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার সামনে তারা সাক্ষী দিবে, রাসুল সা. এর মাধ্যমে যে দায়িত্ব তাদের দেয়া হয়েছে, তারা তা পূর্ণ করেছে। বার্তা অন্য মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
মুসলমানদের আসল কাজ হলো, মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা। শুধু আল্লাহর দেয়া আদেশ ও আইন মান্য করাই তাদের কাজ নয়, বরং বিশ্ববাসীর কাছে আল্লাহর আইন ও আদেশকে পৌঁছে দেওয়াও তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর যদি মুসলমানরা তা না করে তবে এটি মুসলমানদের জন্য একটি অপরাধমূলক কাজ বলে গণ্য করা হবে।
হাদীসে বর্ণিত আছে, নৌকায় আরোহণ করা কোনো ব্যক্তি যদি নৌকায় গর্ত তৈরি করতে শুরু করে, তখন নৌকায় থাকা লোকদের সবার কর্তব্য তাকে বিরত রাখা। না হয় নৌকায় থাকা সবাই পানিতে ঢুবতে হবে। আজ মুসলমানরা তাদের এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে, এর ফলে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পুরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মুসলিম বিশ্বের একটি কর্তব্য রয়েছে। আর এ বিষয়েটিই আলোচ্য গ্রন্থটির মূল কেন্দ্রবৃন্দ ও মৌলিক বিষয়। অর্থাৎ ইসলামের আলো ও ইসলামি আইনের সুগন্ধ দ্বারা সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করা ইসলামি নেতৃত্বের কর্তব্য। অন্যথায় পৃথিবীর অঘটন ও দুর্নীতির দায়ও মুসলমানদের উপরই পড়বে।
মাওলানা আলী মিয়া এই বইটির উদ্দেশ্য এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমার এ গ্রন্থটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো মুসলিমরা যেনো তাদের অবহেলা থেকে বেড়িয়ে আসে। সে সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করা, তাদের মধ্যে চিন্তা ও সংস্কারের চেতনা জাগানো। একই সাথে, বিশ্বকে ভবিষ্যত খারাপ অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করা, যারা কারণে দিন দিন মুসলমানদের নেতৃত্ব হারিয়ে গিয়েছিলো। (পৃষ্ঠা-১৩)।
মাওলানা আলী মিয়া নাদভীর এ বৈশিষ্ট্য ও অনন্যতা রয়েছে, তাঁর চিন্তাধারার আসল কেন্দ্র কেবলমাত্র মুসলমানরাই না, বরং পুরো মানবতা। তার চিন্তায় গোটা মানবজাতির জন্য প্রেম ও ভালোবাসা পরিলক্ষিত হয়। গোটা মানব জাতির কাছে ঐশ্বরিক বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব তার জীবনের শেষ প্রহর প্রর্যন্ত করে গিয়েছেন। আর এজন্যই মানবতার মহান নবী হযরত রাসুলে আকরাম সা. এর ব্যক্তিত্ব নিয়ে আরবি ও উর্দুতে একাধিক গ্রন্থ লিখে গেছেন। সূত্র: আরমোগান বাংলা সাইট
-এটি