সুলতান মাহমুদ বিন সিরাজ।।
আলেম লেখক ও সমাজকর্মী
২০১৮ সালের রমজান মাসের কথা। সে রমজানে ছিলাম ঢাকায়। অধিকাংশ তারাবিহ নামাজ পড়া হয়েছে জামিয়া বারিধারার মসজিদে। উদ্দেশ্য, আল্লামা কাসিমী রাহিমাহুল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, দু'আ ও বরকত নেয়া। একদিন তার একেবারে পাশাপাশি তারাবীহ আদায় করার সুযোগ হয়েছিলো। দেখলাম জামাত শুরু হওয়ার আগে তিনি আসলেন এবং সুন্নাত, এশা, তারাবীহ ও বিতরের নামাজ অত্যন্ত খুশু-খুজুর সাথে প্রায় ২ঘণ্টা দাঁড়িয়েই শেষ পর্যন্ত আদায় করলেন। প্রতি দু’রাকাত পরপর তাঁর দিকে তাকাতাম আর দেখতাম, মাওলার প্রতি তাঁর গভীর ধ্যান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
ভাবলাম, একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ কীভাবে পারেন এতো সময় ধৈর্য সহকারে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে! যেখানে তিনি ২৪ ঘণ্টা হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন!
নামাজ শেষ করে হুজুর জায়গায় বসে পড়লেন। আর আমরাও তাঁকে ঘিরে বসে পড়লাম কাসিমী পুষ্প থেকে একটু সুবাস নিতে। সালাম-মোসাফা করলাম। কৃতজ্ঞতায় আমার দু’চোখ থেকে অশ্রু বের হতে শুরু করলো। তিনি নসিহত শুরু করলেন। এদিকে আমার লুকোচুরি কান্না দেখে তিনি নিজ ইচ্ছায় পিঠে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘বাজি! নাম কী? কী করো?’ আমি বললাম, সুলতান মাহমুদ। ছাত্র জমিয়ত করি। তিনি বললেন, ‘কাজের নাম ইসমে আজম। কাজ চালিয়ে যাও। তোমাকে দেখে অনেক ভালো ছেলে মনে হচ্ছে। আল্লাহ তোমাকে দীনের খাদেম হিসেবে কবুল করুন।’ অভিভূত হলাম! শুকরিয়া আদায় করলাম বিনয়াবনত হয়ে।
খানকার একজন আল্লামা কাসিমীকে খুব কাছ থেকে দেখার মানসে এ রাত মসজিদেই থেকে গেলাম। যা দেখলাম, এক কথায় তিনি শুধু ময়দানের বীর-ই না, হাদিসের দরসে প্রাজ্ঞ হাদিস বিশারদ-ই না, দীন ইসলাম রক্ষায় উম্মাহর একজন দরদী রাহবার-ই না, খানকায় একজন হক্কানী, রাব্বানী পীরও। সারারাত মাওলার সাথে প্রেম বিনিময় করলেন। যাঁর প্রশংসা করার সামান্যতম যোগ্যতা নেই আমার।
জাতির এ দুর্দিনে, উম্মাহর ক্রান্তিকালে তাঁর শূন্যতা অবর্ণনীয়। বিয়োগব্যথা পাথর চাপা দিয়ে রেখে সবার কাছে দুআ চাই, আল্লাহ যেনো তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন। আমাদেরকে তাঁর সঠিক উত্তরসুরী বানান। আমিন।
ওআই/মোস্তফা ওয়াদুদ