শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

আপোষহীন বীর ছিলেন আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাবীব আনওয়ার।।

মহান আল্লাহ তা'আলা এই ধরাপৃষ্ঠে এমন কিছু ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ প্রেরণ করেছেন, যারা তাঁদের যুগান্তকারী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। যাদের জ্ঞানের মশাল থেকে শতসহস্র জ্ঞান পিপাসুরা তাদের আহার সংগ্রহ করেন। যাদের হাতের ছোঁয়ায় চোখের দর্শনে মহাপাপীর মনেও খোদার প্রেমের আলো জ্বলে উঠে। অন্ধকার ছেড়ে হিদায়েতের পথে চলে আসে। যারা হাজার বছর বেঁচে থাকেন, মানুষের মানসপটে।

যাদের অবদান আর অমরকীর্তি পরবর্তী প্রজন্ম স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে। যারা পথহারা মানুষকে দিয়েছেন পথের সন্ধান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিয়েছেন ইসলামের পথ নির্দেশিকা। যারা নিজেদের সর্বস্ব বিলীন করে দেশ-জাতীর কল্যাণে কাজ করে গেছেন নিঃস্বার্থভাবে। শিরক-বিদআত ও ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী প্রতিহত করে আল্লাহর দ্বীনকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সংগ্রামে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন। যারা সুন্দর পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে তোলেন তাদের চরিত্রের মাধুর্যতা দিয়ে।

চারপাশের পরিবেশ পরিচিত সবকিছু পাল্টিয়ে দেয় তাদের অসাধারণ প্রতিভা দিয়ে! উদারতা, দানশীলতা, আপোষহীনতা, সাহসিকতা, বিচক্ষণতা, উত্তম গুণাবলী, সামাজিক অবদানসহ সর্বক্ষেত্রে যাদের অবদান মানুষকে মুগ্ধ করে তোলে। বিজাতীয় সংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে পতনোন্মুখ জাতিকে ফিরিয়ে আনা ও চিন্তানির্ভর চেতনাসমৃদ্ধ সুস্থ-সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া, জনসাধারণকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া, তরুণ সমাজকে অধঃপতনের দ্বারপ্রান্ত থেকে তুলে এনে সত্য-সুন্দর ও মুক্তির রাজপথে পৌঁছে দিতে যাদের চিন্তা-চেতনা, মন-মননে বয়ে যায় নির্মল চিন্তা ধারা তাঁদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ.।

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. ছিলেন একজন আদর্শ ও দক্ষ মুহতামিম, দাওয়াতের ময়দানে একজন দরদী দায়ী, সমাজসেবার ময়দানে ছিলেন জনদরদী সেবক আর রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলেন প্রজ্ঞা সম্পূর্ণ আপোষহীন ও স্পষ্ট ভাষী নিবেদিত প্রাণ দেশ প্রেমিক।

তাই তিনি একাধারে দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর এর নায়েবে আমির, দেশের প্রবীণ রাজনৈতিক প্লাটফর্ম জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা ও তুরাগ সোবাহানিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক, কওমী মাদরাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড হাইয়াতুল উলিয়ার কো-চেয়ারম্যান ও বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পরিচালক, উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

উস্তাদদের মুখে শুনেছি, আল্লামা কাসেমী রহ. এর সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, মনকাড়া মুচকি হাসিতে যে কারো মন কাঁড়তো। তাঁর মন মননে ছিল না কোন বিদ্বেষ। ছিল না কারো প্রতি আক্রোশ বা আক্রমণাত্মক । প্রান্তিকতা ও হীনমন্যতার উর্ধ্বে ছিলেন তিনি। চিন্তার দৈন্য থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল তার অবস্থান। সত্যই আকাবির ও আসলাফের বাস্তব নমুনা ছিলেন আল্লামা কাসেমী রহ.।

আল্লামা নূর হুসাইন রহ. প্রখর মেধা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, সূক্ষ্ম চিন্তা ও বহু গুণে গুণান্বিত এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর ধৈর্য্য, কর্মদক্ষতা এবং স্থিরতা ছিল পাহাড়ের ন্যায়। পাহাড় যেমন তার আপন স্থানে অবিচল, তদ্রুপ তিনিও ধৈর্য্য ও নিজ কর্মে ছিলেন অটল। যার জলন্ত প্রমাণ, তাঁর দ্বীনী খেদমতের সূচনা এবং শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রান্তিকতা ও চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র সত্বেও ধৈর্য্যের সাথে দ্বীনের খেদমতে অটল থাকা। যার নজির খুঁজে পাওয়া বিরল। তাঁর অনুপম আদর্শ ও হৃদয়ের স্বচ্ছতা, সততা পথহারা পথিকদের জন্য মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

বিভিন্ন জনের মুখে শোনা আল্লামা কাসেমী রহ. এর উপমার বাস্তবতা দেখেছি গত ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে। হজরতকে ঐদিন প্রথম দেখলেও হজরতের সাহসিকতা, আপোষহীনতা, ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার গল্প শুনেছি অনেক। বিশেষ করে ১৫ নভেম্বর হজরতের বিনয়ী আচরণ দেখেছি খুব কাছ থেকে। এতবড় একজন ব্যক্তি অথচ, খুব সাদামাটা তার পোশাক। একটি চেয়ারে করে দুজন খাদেম নিয়ে যাচ্ছে, কাউন্সিল রুমের দিকে। হজরত মাথা নিচু করে বসে আছেন। শুধু ঠোঁট দুটো হালকা নড়ছে। কাউন্সিল রুমেও খুব বিনয়ের সাথে বসে ছিলেন। এমন কী মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পরও হজরত ছিলেন খুব স্বাভাবিক। অতি আনন্দ বা খুব দায়িত্বের চাপ কোনটাই হজরতের চেহারায় পরিলক্ষিত হয়নি! হজরতের এমন বিনয় দেখেছি আর মুগ্ধ হয়েছি।

প্রিয় পাঠক! কত বড় চিত্তের অধিকারী হলে এমন উদারতা, নম্রতা দেখাতে পারেন চিন্তার রুদ্ধদ্বার কক্ষকে উন্মুক্ত করে গবেষণা করা আমাদের অতীব প্রয়োজন। শুধু আমি নয়, তাঁর এমন অসংখ্য উত্তম গুণাবলীর কারণে অসংখ্য মানুষ ভালোবাসতেন তাঁকে। আমি তাঁর ভালোবাসায় মুগ্ধ ও সিক্ত। কারণ, তিনি ছিলেন হিংসা, অহংকার ও অহমিকা থেকে মুক্ত। হাসিমুখে জাদুময়ী বাক-শৈলীতে মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ প্রতিভার অধিকারীও ছিলেন তিনি।

বহুগুণের অধিকারী এই মহান ব্যক্তিত্ব আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ইংরেজি রবিবার তাঁর জীবনের ব্যস্ততম ৭৪ টি বসন্তের ইতি ঘটিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁর চলে যাওয়াতে আমরা শোকাহত। আল্লাহ রব্বুল আলামীন হজরতকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করুন! এবং তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলোকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তি তৈরি করে দিন। আমিন!

লেখক: শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ