স্নেহার্দ্র সুইজা: শাকের মধ্যে লালশাককে বলা যায় সবচেয়ে জনপ্রিয়। সারাবছরই এই শাক পাওয়া যায়। তবে শীতকালে ব্যাপকহারে চাষাবাদ হয়। খেতে সুস্বাদু। অনেকে ভাজি, ভর্তা বা ঝোল রান্না করে খেয়ে থাকেন। তাছাড়া চিকিৎসকরাও বেশি বেশি লালশাক খেতে বলেন। কেন বলেন? কি আছে এর ভেতর? আসুন জেনে আসি উপকারী এ লালশাকের বিশেষ কিছু উপকারিতা-
এক- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকের পুষ্টিগুণ ক্যালসিয়াম ৩৭৪ মিলিগ্রাম, শর্করা ৪.৯৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ৫.৩৪ মিলিগ্রাম, স্নেহ ০.১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪২.৯০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১১.৯৪ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ ১.০৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি।
দুই- দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে: লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড় গঠনে বেশ উপকারী। তাই দাঁতের সুস্থতা, হাড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।
তিন- দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে: লালশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুব উপকারী। এই শাক বিদ্যমান ভিটামিন-এ রেটিনার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে আপনার খাবারের মেনুতে রাখুন লালশাক। এই শাকের ভেতর যে ভিটামিন-সি রয়েছে তা দাঁতের সমস্যা ও মাড়ি ফোলা দূর করতে সাহায্য করে।
চার- হজম শক্তি বাড়ে: লালশাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্ট যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
পাঁচ- রক্তশূন্যতা দূর করে: রক্তশূন্যতা রোধ করতে লালশাক খুব উপকারী। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। লালশাক শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিশুসহ যাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে তাদের সবারই এই শাকটি খাওয়া খুবই দরকার।
ছয়- ক্যান্সারকে দূরে রাখে: লালশাকের এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া অ্যামাইনো অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ই, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন-সি শরীরে উপস্থিত একাধিক টক্সিক উপাদান দূর করে। সেই সঙ্গে ক্যান্সার কোষ যাতে জন্ম নিতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
সাত- কিডনি সমস্যা দূর করে: কিডনির ফাংশন ভালো রাখতে ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে লালশাক খুব ভালো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত লালশাক খেলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে, তেমনি অন্যদিকে রক্তে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
আট- চুল পড়া কমে: চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লালশাক অনেক উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে মিনারেল ও পুষ্টি যোগায়।
নয়- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: লালশাকের বিটা ক্যারোটিন হ্নদরোগের ঝুঁকি কমায়। এই শাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করতেও লালশাকের ভূমিকা অনেক।
দশ- এছাড়া এই শাক ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস সমিতির গাইড বইয়েও বেশি বেশি লালশাক খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
-কেএল