মুহাম্মদ নাজমুচ্ছাকিব।।
ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষাদানের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।স্বাধীনতার পরে এটাই বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।১৯৮৬ সালের ২৮জুন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮ টি অনুষদের অধিনে ৩৪ টি বিভাগ রয়েছে।এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানব।
সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলার মুসলমান ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আন্দোলন করে আসছিল।আর এই লক্ষ্য নিয়েই ১৯২০ সালে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী চট্রগ্রামের পটিয়াতে ‘মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার জন্য ফান্ড গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে মাওলানা শওকত আলি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এর ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯৪১ সালে মাওলা বক্স কমিটি ‘ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক লার্নিং’ প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। ১৯৪৬-৪৭ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন কমিটি এবং ১৯৪৯ সালে মাওলানা আকরাম খাঁ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। ১৯৬৩ সালের ৩১ মে ড. এস. এম. হোসাইন-এর সভাপতিত্বে "ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন" গঠন করা হয়।
এরপর আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সহ নানামূখি কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার কার্যক্রম বন্ধ থাকে।স্বাধীনতা পর ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৭ সালে প্রফেসর এম.এ বারীকে সভাপতি করে ৭ সদস্যের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কমিটি ঘটন করা হয়।১৯৭৭ সালের ২০ অক্টোবর কমিটি নিন্মোক্ত অনুষদ ও বিভাগকে সুপারিস করে।
সেখানে বলা হয় যে, থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ এর অধিনে ১. আল কুরআন ও উলুমুল কুরআন। ২. উলুমুত তাওহীদ ওয়াদ দা’ওয়াহ। ৩. আল হাদীস ওয়া উলুমুল হাদিস। ৪. আশ-শারীয়া ওয়া উলুমুস শারীয়া। ৫. আল ফাল সাফাহ ওয়াত তাসাউফ ওয়াল আখলাক।
মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীন
১. আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ২. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ৩. ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ৪. অর্থনীতি, ৫. লোক প্রশাসন, ৬. তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, ৭. ভাষাতত্ত্ব, এবং বাণিজ্য বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ১. পদার্থ বিজ্ঞান, ২. গণিত, ৩. রসায়ন, ৪. উদ্ভিদবিদ্যা, ৫. প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়।
১৯৭৭ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল মক্কায় অর্গানাইজেশিন অব ইসলামিক কাউন্সিল (ওআইসি) এর উদ্যগে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করা তে এই সুপারিশের ভিত্তিতে ২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ঝিনাইদহ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শন্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৭৫ একর জমিতে রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পরের বছর ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এরপর ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ড.এ এন এম মমতাজ উদ্দিন চৌধুরিকে কে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয় এবং দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে মোট ৩০০ জন ছাত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্র শুরু হয়।
১৮ জুলাই ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকার এক আদেশের মাধ্যমে কুষ্টিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজিপুর এর বোর্ড বাজারে স্থান্তর করা হয়।কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ এর ছাত্ররা তুমুল আন্দোলন শুরু করে এবং কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ এ বেশ কিছু ছাত্র গ্রেফতার হয়।পরবর্তীতে মন্ত্রী সভার সুপারিশে বোর্ড বাজার থেকে কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই ভবনে থিওলজি অনুষদ মেডিকেল স্কুলে মানবিক ও সামাজিক অনুষদ এবং শহরের অন্যান্য ভবনে শিক্ষা ও প্রসাশনিক কার্যক্ক্রম চলতে থাকে।১৯৯০-৯১ সেশনে আরো ৫ টি বিভাগ যোগ করা হয় এবং ছাত্রীদের ভর্তি এর সুযোগ দেওয়া হয়।১৯৯৩ সাল থেকে পিএইডি ডিগ্রি প্রদান শুরু হয়।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ আমরা আমাদের এই স্বাধীন সুজলা সুফলা মনোরম ক্যাম্পাস পেয়েছি।আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গর্ব করি।বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা আরো উন্নত করার জন্য মাননীয় রাষ্ট্রপ্রতির নেক দৃষ্টি কামনা করছি।
তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল
লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
-এটি