সুফিয়ান ফারাবী
স্পেসাল করেসপন্ডেন্ট>
স্বপ্নের মডেল মসজিদ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। অধিকাংশ উপজেলায় ইতোমধ্যে মূল স্ট্রাকচার কমপ্লিট হয়েছে। আধুনিক এসকল মসজিদগুলোতে থাকবে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক পৃথক নামাজের স্থান, সু-বিশাল গবেষণাগার, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অতিথিশালাসহ আরও নানান সুযোগ-সুবিধা।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে সর্বোমোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মিত হবে। নিয়োগ দেওয়া হবে ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ আরো বেশ কিছু পদে। যদি এ সম্পর্কিত কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যেহেতু মুজিববর্ষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ৫০ টি ও জুনের মধ্যে সর্বোমোট ১০০টি মসজিদ উদ্বোধনের কথা জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তাই ধারণা করা হচ্ছে অতি শিগ্রই নিয়োগের কথাও বিবেচনা করা হবে।
এদিকে মডেল মসজিদগুলোতে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের নিয়োগের দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে। কিন্তু নিয়োগ সার্কুলারের উপর নির্ভর করছে সবকিছু। সার্কুলারে কওমি আলেমদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে কিনা এ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। মডেল মসজিদ নিয়োগে কওমি সনদ কাজে লাগানো যাবে কিনা, এর নিশ্চয়তা মিলছে না এখনই।
যোগ্য আলেমদের দেখতে চাই: মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ
শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, মডেল মসজিদ গুলোতে আমি যোগ্য ব্যক্তিদেরকে দেখতে চাই। কওমি হোক বা আলিয়া হোক, তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে যোগ্যতা, আমল, পরহেজগারিতার দিক থেকে কওমি আলেমরা এগিয়ে। সুতরাং মডেল মসজিদ গুলোর সার্কুলারে অবশ্যই কওমী আলেমদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি যখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি শুরু করি, তখন কওমি মাদ্রাসার সার্টিফিকেট দিয়েই চাকরি শুরু করেছিলাম। আল্লাহর মেহেরবানীতে এটা সম্ভব হয়েছিল। সুতরাং সার্কুলারে সরাসরি দাওরায়ে হাদীস উল্লেখ না থাকলেও যদি শুধুমাত্র সমমান উল্লেখ থাকে, তাহলেও আশা করছি কওমি আলেমদের সুযোগ থাকবে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলিয়া পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত বলে মনে করেন আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
কওমি আলেমদের সম্মানজনক কর্মসংস্থান সময়ের দাবি: মিছবাহুর রহমান চৌধুরী
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মিছবাহুর রহমান চৌধুরী জানান, যখন থেকে মডেল মসজিদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তখন থেকেই আমরা কওমি আলেমদের প্রাধান্য দিতে বলেছি। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে একমত আছেন। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রায় এক বছর ধরে বোর্ড মিটিং হচ্ছে না। যদি বোর্ড মিটিং হয় তাহলে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব।
তিনি বলেন, এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে কওমি আলেমদের সম্মানজনক কর্মসংস্থানের। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বহুদিন কওমি মাদরাসার আলেমরা বঞ্চিত থেকেছেন। এখন মডেল মসজিদগুলোতে কওমি আলেমদের প্রাধান্য দেয়া দরকার। কেননা ইমামতিতে তারা অধিক দক্ষ ও জনসমর্থিত। কওমি আলেমরা যেন মডেল মসজিদ গুলোতে নিয়োগ পান এ নিয়ে যা যা করা দরকার আমি করব। এবং এই দাবি নিয়ে আমরা গণভবনে যাব।
মডেল মসজিদ গুলোতে কওমি আলেমরা সুযোগ পাবে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলেননি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। তবে সুযোগ থাকার আভাস দিয়েছেন তিনি।
অতিরিক্ত সচিব আনিস মাহমুদ বলেন, আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের চারজন ইমামই কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। তারা যখন নিয়োগ পান তখন কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ছিল না। এখন যেহেতু স্বীকৃতি হয়েছে, তাই কওমি আলেমদের মডেল মসজিদ গুলোতে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আশা করছি কওমি আলেমরাও সুযোগ পাবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের যে আলেম সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, মর্যাদাশীল এবং যোগ্য তাদেরকে বেছে নেয়ার প্রত্যাশা আমাদের।
আমাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী মুজিববর্ষে ১০০টি মডেল মসজিদের কাজ সম্পূর্ণ করে উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সারাদেশের অন্যান্য প্রকল্পের মতো মডেল মসজিদের কনস্ট্রাকশনের কাজও কিছুটা ধীরগতিতে এগোয়।
যার ফলে মুজিববর্ষে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের টার্গেট নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। আগামী ফেব্রুয়ারি ও জুন মাসে ৫০টি করে মোট ১০০টি মসজিদের কাজ সম্পন্ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন তারা। পর্যায়ক্রমে ৫৬০ টি মডেল মসজিদের কাজ শেষ হবে।
-এএ