দান করে কতজনই। কিন্তু আখেরাতের জন্য দান কয়জনের ভাগ্যে জুটে? আর সেটাও যদি হয় কোনো দম্পতির মাধ্যমে। তাহলে কতইনা সুখকর সংবাদ সেটা। হ্যাঁ! এমনই এক চমৎকার বিষয়ের জন্ম দিয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার বলিদাপাড়া এলাকায়। সেখানের একটি মাদরাসায় স্বামী দিয়েছেন চারতলা ভবন। আর তাঁর স্ত্রী দিয়েছেন একই মাদরাসায় লাখ টাকার গবেষণা গ্রন্থ। মাদরাসার একজন শিক্ষক মাওলানা ফারুক নোমানী লিখে পাঠিয়েছেন বিস্তারিত-মোস্তফা ওয়াদুদ
পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দান হলো গ্রন্থদান। সাধারণ দান ক্ষণস্থায়ী আর গ্রন্থদানের উপকারিতা স্থায়ী। এটা জ্ঞান অর্জন ও তা বিতরণের একটি অন্যতম মাধ্যম। এই ঘুণেধরা সমাজের বুকে এখনো কিছু বিদ্যানুরাগী আলোকিত মানুষ আছেন, যারা নিবৃত্তে নির্জনে মানবোন্নয়নের জন্য জ্ঞান চর্চার উপকরণ বিতরণ করেন। শিক্ষা ভবন, গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, গ্রন্থাগারে গ্রন্থদান কর্মসূচীর মাধ্যমে যারা শিক্ষার বাণী ছড়িয়ে দিতে চান প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রফেসর ড. শাহীনারা বেগম ও তাঁর স্বামী ইঞ্জিনিয়ার রওশন কবির এমনই প্রচারবিমূখ দানবীর দম্পতি।
দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসিমুল উলুম (কওমি মাদরাসা) বলিদাপাড়া, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ -এ আজ ‘গ্রন্থদান কর্মসূচী’ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঝিনাইদহ -৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনার, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কালীগঞ্জ পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। প্রধান মেহমান ছিলেন, কালীগঞ্জে ধর্মীয় শিক্ষা বিকাশের পথিকৃৎ আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল মুবিন। এছাড়া স্থানীয় বিদ্যানুরাগী, সমাজসেবক ও সুধী সমাজগণ উপস্থিত ছিলেন।
ড. শাহীনারা বেগম ও তার তিন বন্ধু মিলে এ প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর জন্য দান করেন লক্ষাধিক টাকার গবেষণা গ্রন্থ। তিনি সরকারি বাংলা কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। তার আলোচনায় তিনি বলেন-‘আমাদের পরিবারটি বিদ্যানুরাগী পরিবার। ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন পাবলিক লাইব্রেরীতে বই দান করেছি। তবে আমার মনের একটি আশা ছিলো- কুরআন, হাদীস বিষয়ক উচ্চতর জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার জন্য যদি কিছু বই কোথাও দিতে পারতাম! আমরা তিন বন্ধু মিলে মিশর, লেবানন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে ছাপা উন্নতমানের উচ্চতর কিছু কিতাব সংগ্রহ করে দিয়েছি। এগুলো থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করবেন ও তা বিতরণ করবেন। নিজেরা আলোকিত হবেন। সমাজ আলোকিত করবেন। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
অবশ্য এর কিছুদিন আগে তাঁর স্বামী ইঞ্জিনিয়ার রওশন কবির উচ্চতর জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার জন্য এ মাদরাসায় চারতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন শিক্ষা ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন।
এছাড়াও তিনি শিবনগর হাফেজি মাদরাসার দুইতলা ও আড়পাড়া এতিমখানার তিনতলা বিশিষ্ট শিক্ষা ভবন নির্মাণ করেছেন। তার তত্ত্বাবধানে ফয়লা গ্রামে হজরত আলী মাদরাসায় তিনতলা বিশিষ্ট আলীশান মসজিদ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রচারবিমুখ এ দানবীর ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেছেন এলজিইডি অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদ থেকে। তবে বর্তমানে তিনি ওয়াল্ড ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
প্রফেসের ডক্টর শাহীনারা বেগম প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা ওসমান গণীর কাছে হস্তান্তর করেন লক্ষাধিক টাকার গ্রন্থ। মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ফারুক নোমানীর সঞ্চলনায় অনুষ্ঠিত এই গ্রন্থদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদরাসার সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জালাল উদ্দীন।
এমডব্লিউ/