ফরহাদ খান নাঈম ।।
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভালো ঘুম হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা ও শরীরচর্চার মতো এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এমন অনেক কারণ আছে। মানুষ অতীতে যেমন ঘুমাতো, এখন নানা কারণে সেভাবে আর ঘুমায় না। আর তাই মানুষ সাম্প্রতিক বিভিন্ন নতুন নতুন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছে।
অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের স্থুলতা বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী কারণ। ঘুম কম হলে শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ঘুমায় তাদের তুলনায় যারা নিয়মিত ঘুমায় না তাদের ওজন উল্লেখজনকভাবে বেড়ে যায়। সেখানে দেখা গেছে, কম ঘুমের কারণে বাচ্চাদের ওজন ৮৯% ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ওজন ৫৫% বৃদ্ধি পায়। তাই শরীরের অপ্রয়োজনীয় ওজন কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, যারা ভালো ঘুমাতে পারে না, তারা বেশি বেশি খাবার গ্রহণ করে। ফলে তাদের শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে রুচির হরমোন স্থিতিশীল থাকে না, ফলে খাবারে রুচির নিয়মতান্ত্রিকতা ব্যাহত হয়। অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরে গ্রেলিন (রুচিবর্ধক এক প্রকার হরমোন) এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে; আর লেপটিন (রুচিদমনকারী হরমোন) এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
ঘুম মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পর্যাপ্ত ঘুম হলে কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়; ফলে কাজের ফলপ্রসুতা দ্বিগুণ হয় ও সফলতার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। মানুষের চৈতন্যবোধ বাড়াতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। আর অপর্যাপ্ত ঘুম হলে মানুষ এ সব থেকে বি ত হয়। গবেষণায় উঠে এসছে, এ্যালকোহল যেভাবে মানুষের মুস্তিষ্ককে বিকল করে দেয়, তেমনি করে অপর্যাপ্ত ঘুমও মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। অপরপক্ষে যারা ভালো ঘুমান তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
পর্যাপ্ত ঘুম ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভালো পারফরমেন্স করতে সাহায্য করে। বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের একটি দলের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, যারা অপেক্ষাকৃত বেশি ঘুমায়, তাদের স্পীড, নির্ভুল নির্ণয়, তড়িৎ প্রতিক্রিয়া ও মানসিক ভারসাম্য তুলনামূলক অনেক ভালো। ২৮০০ জনেরও বেশি মহিলার উপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের ¯øথ গতি, মুষ্টি শক্তিহীনতা এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার জটিলতার জন্য তাদের অপর্যাপ্ত ঘুমই দায়ী।
অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রায় ১৫টি গবেষণায় একই ফলাফল উঠে এসেছে যে, যারা প্রতি রাতে গড়ে ৭ - ৮ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের তুলানায় যারা কম ঘুমায় তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
ঘুম কম হলে রক্তে সুগার বেড়ে যায় ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যায়। স্বাস্থ্যবান কতিপয় যুবকের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, এক নাগাড়ে ৬ রাত ৪ ঘণ্টা করে ঘুমানোর কারণে তাদের শরীরে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা গেছে। আবার টানা এক সপ্তাহ বেশি ঘুমানোর কারণে তাদের এই লক্ষণগুলো দূর হয়ে গেছে। যারা প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
অপর্যাপ্ত ঘুমের সাথে হতাশার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, শতকরা ৯০ ভাগ লোক যারা কম ঘুমান, তারা মানসিক ডিপ্রেশন তথা হতাশায় ভুগছেন। আর এতে করে আত্মহত্যার পরিমাণ উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাল্পতার রোগ রয়েছে, তাদের হতাশায় ভোগার পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর কম ঘুম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। টানা ১৪ দিনের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমান তাদের তুলনায় যারা ৭ ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের সাধারণ ঠাÐা-কাশি বেশি হয়। যাদের ঠাÐা-কাশি লেগেই থাকে, তারা প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে ঘুমালে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ও সুন্দর সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া নিশ্চিত করে। অপর্যাপ্ত ঘুম ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক মিথষ্ক্রিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। যারা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ঘুমায়, তাদের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। গবেষকগণ বিশ^াস করেন, যারা কম ঘুমায় তারা একঘেঁয়ে আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চার সাথে সাথে পর্যাপ্ত ঘুমও অতীব জরুরি। পর্যাপ্ত ও নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম ছাড়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা অসম্ভব।
হেলথলাইন থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ।
-এটি