মোস্তফা ওয়াদুদ।।
অসহায়ের জন্য কাজ করে এমন সংগঠনের অভাব নেই দেশে। কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে ইভেন্ট খুলে অসহায়দের পাশে দাড়ানোর সংখ্যা অপ্রতুল। আর সেটা যদি হয় কোনো কওমিয়ানের হাত ধরে। তবে খবরটা বেশ মুগ্ধতা ছড়াবে নীলাকাশে। বুকের পাঠাটা বেড়ে যাবে দ্বিগুন।
হ্যাঁ! ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায়ের জন্য শুরু করেছেন ব্যতিক্রমী ইভেন্ট। নাম ‘৫০০ টাকায় ২৫ জন অসহায়ের মুখে আহার’। শুরুটা একা চালু করলেও এখন অনেককেই নিজের চিন্তার সাথী বানাতে পেরেছেন আহমদ শফি।
ইভেন্ট নিয়ে আওয়ার ইসলামের সাথে খোলামেলা আলাপকালে আহমদ শফি বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে আমার বাসার বারান্দায় বসে প্রিয়তমার সাথে গল্প করছিলাম। এ সময় দেখলাম কয়েকজন অসহায় মহিলা একজন লোককে বলছেন, “ভাই আজ ১০ দিন ধরে কিছু খাইনি। যদি কোনো কাজ থাকে তাহলে দিন। কাজের বিনিময়ে পেটে কিছু আহার জুটবে।”
লোকগুলোর কথা আমার হৃদয়কে ভীষণ নাড়া দিয়েছিলো। একজন লোক ১০ দিন না খেয়ে কিভাবে থাকতে পারে! আমি সেদিনের মতো কোনো কাজ ছাড়াই তাদের একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম।
এরপর আমার স্ত্রীর সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলাম। কি করা যায় এমন অসহায় মানুষদের জন্য? পরিশেষে স্ত্রী আমাকে সাহস যোগালেন। কিছু একটা করতে বললেন তাদের জন্য। এরপরই আমি ‘৫০০ টাকায় ২৫ জন অসহায়ের মুখে আহার’ নামে একটি ইভেন্ট খুলি ও আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করি। যেহেতু ৫০০ টাকা দিয়ে পঁচিশজন মানুষের খাবার হয়ে যায়, তাই ইভেন্টের নাম এভাবে দিয়েছি।
ইভেন্টার আহমদ শফি বলেন, প্রথমে এটি আমি একাই শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার সাথে আমার পরিচিত কিছু বড় ভাইকে শরীক করতে পেরেছি।
আহমদ শফি ইভেন্টের কাজের কিছু তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা শুরুতে সপ্তাহের সাত দিনই বিভিন্ন স্থানে অসহায়ের মুখে খাবার তুলে দিতাম। এরপর যখন লকডাউন খুললো তখন ব্যক্তিগত ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন অসহায়দের জন্য খাবার দেয়ার চেষ্টা করি। এ পর্যন্ত রাজধানীর প্রায় ৫০ টি স্পটে অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাটের লঞ্চঘাট, খিলগাঁও বস্তি, মিরপুর বেড়ীবাঁধ, পোস্তগোলার ছিন্নমূল মানুষ, ইয়ারপোর্ট ও বায়তুল মোকাররমে রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায়দের মুখে ইভেন্টের খাবার তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি।
আমার প্রবাসী কিছু ভাই আছেন। যারা অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। একজন আছেন যিনি সব সময় প্যাকেট খরচের ব্যবস্থা করেন। বরাবরের মতো সব সময় তারাই আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যারা আমাদের এ কাজে এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আর নতুন করে তেমন কেউ এখনো হাত বাড়াইনি। তাই আমি বিত্তবানদের কাছে আহবান জানাবো, আপনারা হোক ১ জনের জন্য অথবা ১০/১৫ এবং ২০/২৫ জনের জন্য আহারের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। যার যতটুকু তৌফিক ততটুকু দিয়েই শরিক হোন।
এ পর্যন্ত আমরা প্রায় দশ হাজার মানুষকে আহার দিতে পেরেছি। এতে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় অনেক টাকা। শুরুটা নিজের টাকায় করলেও পরবর্তীতে কাছের কিছু বড় ভাইদের সহযোগিতা ছিলো প্রচুর। যারা এ ইভেন্টের সাথে আছেন, তাদের কয়েকজন হলেন, মোহাম্মদ আবুল হাতেম, তামিম আহমেদ, আসাদুল্লাহ প্রমুখ।
আমরা কাজটি করছি সম্পূর্ণ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে। আর উদ্দেশ্য হলো, আমার এ ক্ষুদ্র উদ্যোগ দেখে কেউ যদি নিজ এলাকা কিংবা মহল্লায় এমন কার্যক্রম শুরু করে তবেই আমাদের স্বার্থকতা। আমি আশা করি আমাদের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে ইনশাআল্লাহ।
আহমদ শফির পড়াশুনার হাতেখড়ি রাজধানীর মালিবাগ মাদরাসায়। মালিবাগের সাবেক নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আনোয়ার শাহ হলেন তাঁর বাবা। পড়াশুনার শেষটা হয় কেরানীঞ্জে। বর্তমানে সেখানেই শিক্ষকতা করছেন একটি কওমি মাদরাসায়।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের জনজীবনও করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সারাদেশ ‘লকডাউনে’ থাকায় গভীর সংকটে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। করোনভাইরাস খুলে দিয়েছে সবার চোখ। রঙ্গিণ দুনিয়ায় মিলেছে কেয়ামতের সাক্ষাত। স্ত্রী চিনেনা স্বামীকে। স্বামী থাকে না স্ত্রীর সাথে। অসহায় মৃত্যু হয় বাবার সামনে সন্তানের। কিংবা সন্তান যায় না বাবার কাছে ভয়ে করোনাভাইরাসের।
এমন বিপদের সময় আহমদ শফির এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার।
এমডব্লিউ/