ফরহাদ খান নাঈম ।।
ইমানবিধ্বংসী যতগুলো পাপ রয়েছে সময়মতো বিবাহের মাধ্যমে সেগুলোর অধিকাংশ থেকেই বেঁচে থাকা যায়। যৌবনের শুরুতে একজন মানুষ যৌনাচারের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়। যৌনাচারের প্রতি এ আকর্ষণ একান্ত স্বাভাবিক ও আল্লাহপ্রদত্ত একটি বিশেষ নেয়ামত। এটি বয়ো:প্রাপ্তির একটি অন্যতম লক্ষণ। তবে এ আকর্ষণ মেটাতে হবে বৈধভাবে; এর জন্য বিবাহ হলো একমাত্র শর্ত।
যৌনাচারের প্রতি এ আকর্ষণ যদি শরীয়ত নির্দেশিত পন্থা ব্যতিত অন্য কোনাভাবে মেটানো হয়, তাহলে এটি মানুষের মনুষ্যসত্ত¡াকে বিকৃত করে দিয়ে তাকে পশুতে পরিণত করে। কুপ্রবৃত্তির সাথে মানুষের লড়াইয়ে জয়ী হবার একটি মোক্ষম হাতিয়র হলো বিবাহ। তদুপরি সময়মতো বিবাহ ছাড়া মানুষের ইমান অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- বিবাহ ইমানের অর্ধেক।
কিন্তু হায়! নিজের পায়ে দাঁড়ানো ও পড়াশোনা শেষ করার খোঁড়া অজুহাতে অনেক যুবক-যুবতী শুধুমাত্র সময়মতো বিাবাহ না করার কারণে অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নিজের কুপ্রবৃত্তির কাছে পরাজয় বরণ করে নিয়েছে। ফলশ্্রুতিতে ধ্বংস হয়েছে তাদের ইহকাল ও পরকাল দুটোই।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- যারা কুকর্ম করেছে তাদের সমাপ্তি হবে অত্যন্ত কুৎসিত; কেননা তারা আল্লাহর আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তা (তাঁর আদেশ) নিয়ে ঠাট্টা করেছে। আল কুরআন ৩০:১০
অনেকে রিযিকের অভাবের কথা চিন্তা করে সময়মতো বিবাহকে অযথাই বিলম্বিত করে। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেনÑ পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণির রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর। একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, বিবাহের আগে যেই মেয়েকে আল্লাহ খাইয়েছেন, বিবাহের পরও সেই মেয়েকে আল্লাহই খাওয়াবেন।
অন্যদিকে বিলম্বে বিবাহ করার কারণে অনেকেই বিবাহের আসল মজা থেকে বি ত হন। ফলশ্রæতিতে সাংসারিক জীবন পরিণত হয় এক রসহীন নির্জীব জীবনে। প্রতিটি সংসার ভাঙার পেপথ্য কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাবে, এর পেছনে বিলম্বিত বিবাহই প্রধান কারণ।
বৈবাহিক জীবন উপভোগ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো যৌবন। এ সময়ে যে শারীরিক শক্তি ও উদ্যমতা কাজ করে, তা জীবনের অন্য কোনো সময়ে পাওয়া যায় না। যৌবনের ভালোবাসায় যে স্বাদ পাওয়া যায়, তা বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া দুষ্কর। কারণ মানুষ যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন ভালোবাসার স্থান দখল করে হতাশা, নিরাশা ও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি।
মনস্তাত্ববিদগণ বলেন, সময়মতো বিবাহ না করলে মানুষ বিভিন্ন মানসিক ও ¯স্নায়ুবিক রোগে ভোগে। ফলে অনেকেই উপযুক্ত সময়ের আগেই যৌবন হারিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা স্ত্রীদেরকে পুরুষদের মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম নিদর্শন হলো এই যে, তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গীনি বানিয়েছেন যাতে করে তোমরা তাদের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আল কুরআন ৩০:২১।
যুবকরা হলো একটি ইসলামী রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। যুগে যুগে ইসলামের বিজয় ও সকল বিপ্লব তাদের হাতে ধরেই ঘটেছে। কিন্তু আজ তারা বিবাহকে বাদ দিয়ে অবৈধ যৌনাচারের পেছনে ছুটে ছুটে নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র আজ ভারসাম্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে ধর্ষণ, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার এক অভয়ারণ্যে।
-এটি