সম্প্রতি আমেলার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর। গঠিত হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদ। আমেলা সদস্যদের গোপন ব্যালটবাক্সের মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশসেরা আলেম রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মাহমুদুল হাসান। এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে রাজধানীর বারিধারা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এবং জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মুহাম্মদপুর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক।
গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ‘বেফাকের নতুন নেতৃত্ব: আপনার প্রত্যাশা কী?’ শিরোনামে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছিলো পাঠক জরিপের। যাতে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, বেফাকের নির্বাচিত নতুন এ ভারপ্রাপ্ত কমিটির কাছে সারাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের প্রত্যাশা কী? দেশের ৪০ লাখ শিক্ষার্থী ও মাদরাসা পরিচালকগণ কেমন বেফাক দেখতে চান? সে সম্পর্কে।
পাঠক জরিপে অংশ নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের সচেতন পাঠক মহল। তারা তুলে ধরেছেন তাঁদের সুচিন্তিত প্রত্যাশা। পাঠকদের তুলে ধরা কমেন্ট থেকে নির্বাচিত কিছু কমেন্ট নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের ‘পাঠক মন্তব্য’। সাজিয়েছেন আন্দমান নওশাদ।
Hammad Asgar ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর নতুন নেতৃত্বের কাছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের আশা হলো,
যেহেতু বেফাক নেতৃত্ব পদাধিকার বলে হাইয়াতুল উলয়ারও নেতৃত্ব দিবেন ৷
সেহেতু ১, তাকমীলের সনদের আন্তর্জাতিক মান অর্জনে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। যার অধীনে দেশের সকল কওমি মাদরাসার তাকমিল এর সনদকে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ এ মাস্টার্সের সমমান বাস্তবায়িত হবে।
২, বেফাক ও হাইয়াতুল উলিয়া এর সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম সারাদেশের সকল মাদরাসা ও ছাত্রদের সেবাদান ও গ্রহণের সুবিধার্থে অনলাইন নির্ভর করা এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে মানসম্পন্ন ও কার্যকরী করার যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। পরিশেষে আওয়ার ইসলামকে অসংখ্য ধন্যবাদ পাঠকের মন্তব্য জানতে চাওয়ার জন্য।’
হারুনুর রশীদ খান ‘একটি বেফাক ভবন প্রতিষ্ঠা করা। দুর্নীতিগ্রস্তদের বহিস্কার করা ও যথা সময়ে সনদ বিতরণ করা। দেশের
৬৪ জেলা থেকে ৬৪ জন বিজ্ঞ আলেম দ্বারা মজলিসে আমেলা গঠন করা। ঢাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলো থেকে একের অধিক নেয়া যেতে পারে। মোট ৭১ জন। আট বিভাগ থেকে আটজন এবং ঢাকা থেকে ৪ জন ও মোমেনশাহী থেকে ৩ জন । মোট ১৫ জন দ্বারা খাস কমিটি গঠন করা।’
Mahmud Arabi ‘দেশের সকল কওমি মাদরাসাকে একটি বোর্ডের অধীনে অভিন্ন সিলেবাসে পরিচালিত করার কারিকুলাম তৈরী করা ৷ একটি জাতীয় বেতন স্কেল তৈরী করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরীর মাধ্যমে গণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা ৷ খেদমতে যোগদান ও অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিপক্বতা ও বয়সের বিবেচনা করা। যুগপোযোগী ও সমসাময়িক বিষয়াবলী কওমি সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা ৷ কওমি সন্তানেরা যেন, সর্বমহলে নিজেদের অধিকার আদায় করতে পারে এক্ষেত্রে মুরিব্বগণের সহযোগিতার দ্বার উম্মুক্ত করা ৷ উচ্চতর গবেষণা কর্ম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভাগ ভিত্তিক বিশিষ্ট গবেষক নিয়োগ করা।’
Nazmul Hasan ‘মহিলা মাদ্রাসাগুলো কি বেফাক বা হাইয়্যার অধীনে পরিচালিত হয়? আমাদের দেওবন্দী মানহাজের আকাবিরগণ কি মহিলা মাদ্রাসাগুলোর আবাসন ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, দৈনন্দিন ক্লাস রুটিন,স্টাফ নিয়োগ, রাত-দুপুরে জ্ঞানের পাহলু তরুণ আলেমেদ্বীন দ্বারা দরস প্রদান ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়গুলোতে নজর দিবেন? এ বিষয়ে দেওবন্দের মানহাজ কি!মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রাহিমাহুল্লাহ কী বলেছিলেন? আমাদের সত্যিকারের আকাবিরগণ কী দৃষ্টিভঙ্গি রাখতেন?
নবনির্বাচিত হযরতগণ কি এ বিষয়ে নজর দিবেন? নাকি বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মহিলা মাদ্রাসাগুলো যেভাবে ইচ্ছা, যে নিয়মে ইচ্ছা সেভাবে পরিচালিত হবে?’
Md Bahalul Islam Galimpury ‘কওমি শিক্ষাকে যুগপযোগী করে গড়ে তুলা। সর্বস্তরে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। দুর্নীতি, গাফলতি ও অবমূল্যায়নকে মূলসহ উপরে ফেলা।’
Mamunur Rashid ‘প্রশ্নপত্র তৈরির সময় নিজের মাদ্রাসার কথা না ভেবে বরং সমগ্র কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে করার অনুরোধ করছি। কারণ যাদের হাতে দায়িত্ব তারা তাদের মাদরাসায় সেভাবেই পড়ায় যেভাবে বেফাক পরিচালিত হয় অথচ অন্যরা হিমসিম খায় পরীক্ষার হলে। ফলে দেখা যায় বেফাক আমলাদের মাদ্রাসার মধ্যমমানের ছাত্রের রেজাল্ট অন্যান্য মাদ্রাসার উচ্চমানের ছাত্রদের রেজাল্ট এর থেকে ভালো হয়। কারণ তারা যা পড়েছে বা যেভাবে অনুশীলন করেছে সেটাই বা সেভাবেই আয়োজন করা হয় বেফাক পরীক্ষা। তাই এই বিষয়গুলো ভেবে দেখার প্রতি বিশেষ অনুরোধ করছি।’
Saidur Rahman ‘স্টুডেন্ট ভিসায় ছাত্ররা বাইরে গিয়ে আরও উচ্চ পড়াশোনা করে আসতে পারে, সে ব্যাপারে একটু খেয়াল দিলে আমার মনে হয় ভাল হবে।’
মুফীজুল ইসলাম মুহীত ‘প্রথমত বেফাককে ঢেলে সাজানো। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করন। অর্থনৈতিক লেনদেন, কেনাকাটা অবশ্যই সচ্ছ হওয়া। পরীক্ষাসহ যাবতীয় সব কাজ অনলাইন ভিত্তিক করা। শিক্ষক প্রশিক্ষণ চালু করা।’
মুহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ‘মুহতারাম সভাপতির সাথে যেহেতু সরকারের সম্পর্ক ভালো। সরকারও চেয়েছে মাহমুদুল হাসান সাহেবকে। সে হিসেবে কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা ও রাসুল সা. কে অবমাননারোধে কঠোর আইন যেনো এ সরকারের আমলে হয় সেটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।’
Rofiqul Islam Bhuya ‘প্রতিটি মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ বিয়োগের একটি নীতিমালা তৈরী করা হোক। সেই সাথে বেতনের একটা লিমিট বা স্কেল ধার্য করা হোক।’
শেখ খাইরুল কবির ‘১। কওমি মাদরাসার সিলেবাসকে স্বকীয়তা বজায় রেখে সংস্কার করা। ২। শিক্ষকদের জন্য বোর্ডের অধীনে নিয়োগ, বেতন প্রদান, প্রয়োজনে স্থানান্তর ও নির্দিষ্ট সময় শেষে পেনশনের ব্যবস্থা করা। ৩। সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কাছে বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করা।’
Sk Abu Ali ‘সবাই তো অনেক কথা বললো । আমার তিনটি কথা। এক, পুরো কওমি একই সিলেবাসে হওয়া। শরিয়া বিষয়ের পাশাপাশি যুগোপযোগী বিজ্ঞান, অংক, ইতিহাস সংযোজন করা। বিশেষত ক্লাসের নাম একই রকম হওয়া। দুই, কুরবানির চামড়া কালেকশন বন্ধ করতে না পারলে সম্মিলিত চামড়া শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া। তিন, কারিগরি ও তিব্ব (চিকিৎসা শাস্ত্র) প্রশিক্ষণ বিভাগ কেন্দ্রীয়ভাবে চালু করা।’
Manzur Ahmad ‘বেফাক বোর্ড এর মাধ্যমে ইফতা বিভাগের কারিকুলাম তৈরি করে পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
Md Nadimul Hoque মাদরাসাগুলোতে যোগ্য উস্তাদ নিয়োগ দেওয়া। যুগপযোগী সিলেবাস তৈরি করা। ফারিগিনদের খেদমত এর ক্ষেত্র নিশ্চিত করা। বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। নিজেদের সন্দেহমুক্ত রাখতে হিসাব অডিট করে সচ্ছতার প্রমাণ দেওয়া। ছাত্রদের তারবিয়তি জিন্দেগী গঠন করার ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখা।’
Anisur Rahman ‘আসলাফদের রেখে যাওয়া আমানাত ‘বেফাক’ মাহমুদে (বেফাক সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান) প্রশংসিত, নুরে ( বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী) আলোকিত ও মাহফুজে (বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক) সংরক্ষিত হোক।’
Abdul Kahir ‘১। বেফাককে দুর্নীতিমুক্ত রাখা। ২। রাজনৈতীক প্রভাবমুক্ত রাখা। ৩। প্রশ্নফাসঁ যাতে না হয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা। ৪। বেফাকে পরিক্ষিত আমানতদার দায়িত্বশীল নিয়োগ করা।’
Jahir Khokon ‘আমি মনে করি কওমি মাদরাসার সিলেবাসে আরো বেশি বাংলা, গনিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, এসকল সাধারণ বিষয়সমুহ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় ও আলীয়া মাদরাসা যত বছরের কোর্স কওমি মাদরাসায়ও তত বছরের কোর্স করা উচিত। তাহলে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা দীনের ও দুনিয়ার সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও সমাজের কল্যাণে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে।’
Mufti Ferdausur Rahman ‘ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি করা এবং সম্মানজনক বেতনের ব্যবস্থা করা।’
Foysal Ahmed ‘১. কওমি অঙ্গনকে সরকারী প্রভাবমুক্ত রাখা। ২. সিলেবাসে আধুনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া। ৩. দাওরায়ে হাদিস দুই বছরে করা। ৪. পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠন করা। ৫. দেশের আলেম ডক্টরদের প্রথমে রাখা। ৬. কওমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ৭. ভার্সিটির শিক্ষা কমিশন থেকে হাইআতের মাস্টার্সের মান কনফার্ম করা। ৮. মাস্টার্স উত্তীর্ণদের প্রাইমারী, হাইস্কুল, কলেজে শিক্ষকতা নিশ্চিত করা। ৯. দাওরায়ে হাদিস যেহেতু মাস্টার্স, তাই মেশকাতের ছাত্ররা যাতে অনার্স পাশের যোগ্য হয়, সে হিসেবে সিলেবাস যোগ-বিয়োগ করা। ১০. শিক্ষকতার জন্য রেজাল্ট ভিত্তিক স্তর নির্ণয় করা। অনেক সময় দেখা যায়, দাওরা মেশকাতে রেজাল্ট ভাল নয়, সম্পর্কের সুবাধে তিনি দাওরা মেশকাতে নেসাব পেয়ে যান। এটা সংস্কার করা। ১১. মাস্টার্স উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্ররা যাতে ডক্টরেড করতে পারে বহির্বিশ্বের জামেয়াগুলোর সাথে মুআদালা করা। ১২. দেওবন্দিয়াতকে গুরুত্ব দেয়া। ১৩. আমানাতের খিয়ানাত না করা। ১৪. যোগ্য তরুণ আলেমদের কাজে সম্পৃক্ত করা।’
Muhammadullah Khalil ‘কওমির বেফাকের মধ্যে আলিয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে যারা চাকুরী করছে তাদেরকে এখুনি অব্যহতি দিতে হবে।’
এমডব্লিউ/