আব্দুস সুবহান।।
দুইশ বছরের ক্রুসেড যুদ্ধে বারবার মুসলমানদের হাতে মার খেয়েছে খ্রিস্টানরা। মার খেয়ে খেয়ে মুসলমানদের শক্তির উৎসটা তারা শনাক্ত করে ফেলেছে। হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত ঈমানের বলেই যে মুসলমানরা চির অপরাজিত খ্রিস্টান শক্তি তা বুঝে গেছে নিশ্চিতভাবে। তাই মুসলমানদের ঈমান হরণের নীল নকশা তৈরি করেছে তারা।
পৃথিবীর দেশে দেশে সে নীল নকশা বাস্তবায়নে ছড়িয়ে পড়েছে মিশনারিরা। আমাদের এ দেশেও এসেছে সেই নীল নকশার বিষ ছড়াতে। নতুন নয়। প্রায় পাঁচশ বছর আগেই এসেছে। এই পাঁচ শতাব্দী ধরে অসহায় সরল মানুষদেরকে গরল গিলিয়ে চলেছে সেবার আড়ালে। বিষাক্ত নীল থাবাধারী গরল পরিবেশক এই মিশনারিদের কুটিল ষড়যন্ত্রের সহজ সরল প্রাঞ্জল তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণ 'বাংলাদেশে খ্রিস্টিন মিশনারী তৎপরতা'।
বইটিতে মোট সাতটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে। লেখক প্রবন্ধগুলোতে বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারিদের বর্তমান তৎপরতা ও এর ভবিষ্যৎ ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় যৌক্তিক উপস্থাপনায় তুলে ধরেছেন। বর্তমানকে উপলব্ধির প্রয়োজনে বলেছেন ইতিহাসের কথা। ইসলাম যে এ দেশে ইসলামেরই সমান প্রাচীন, ঐতিহাসিক প্রমাণ সমেত সে সবও বর্ণণা করেছেন।
কিন্তু সে ইসলামই আজ এ দেশে বিপণ্ন , হুমকির সম্মুখীন। এ জন্য মিশনারি ষড়যন্ত্রকে লেখক দায়ী করেছেন। তবে আমাদের উদাসীনতার দায়ও যে কোনো অংশে কম নয় সে আত্মসমালোচনা করতেও লেখক ভুলেননি। এখানেই এই বইয়ের বিশেষত্ব। শুধু কন্সপিরেসি থিওরির কচকচানি নয় আত্মসমালোচনার হৃদয় নিংড়ানো ব্যথাও এখানে বিবৃত।
সারা বাংলাদেশেই মিশনারিরা ছড়িয়ে পড়েছে জালের মতো। তবে সীমান্ত অঞ্চলে এ জালের বিস্তার আরো ভয়াবহ। পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে সে ভয়াবহতা যেন ভয়াবহতার মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। লেখক গোটা দেশের মিশনারি তৎপরতার কথা বললেও পার্বত্য চট্টগ্রামের কথাই ফুটে উঠেছে বেশি করে।
এরই প্রেক্ষিতে পাহাড়িদের অতীত বর্তমান ওঠে এসেছে। ওঠে এসেছে শান্তিচুক্তির পূর্বাপর ঘটনাপুঞ্জিও। পাহাড়িদের জীবন যাপন ও দুঃখ বেদনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পাহাড়িদের দ্বারা পাহাড়িদের নির্যাতনের গল্পও বিবৃত হয়েছে। বিবৃত হয়েছে মুষ্টিমেয় উচ্চাভিলাসী পাহাড়ি নেতার হাতে সাধারণ পাহাড়িদের জিম্মি জীবনের করুণ কাহিনীও।
এছাড়াও এ বইয়ে আরো একটা জিনিস আছে এবং আমার মনে হয় সেটাই এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়। সে হলো, পশ্চিমাদের ভিক্ষা ভোগী লেখক সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের দেশদ্রোহীতার খোলামেলা বিবরণ। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের হুমকি জেনেও কর্তাব্যক্তিদের নিস্পৃহ মৌনতার রহস্য উদঘাটন। এক্ষেত্রে লেখক যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
গোটা বইয়ে বলবার ধরন অনেকটা ড্রামাটিক মনোলগের মতো। যেন লেখক একজন শ্রোতাকে শুনিয়ে চলেছেন তার হৃদয়ের কথা আত্মার ব্যথা।। এই বাচনভঙ্গিটা পাঠককে আকর্ষণ করে প্রবলভাবে। আর লেখকের ভাষা সে তো অতুলনীয়। তার শব্দ চয়ন বাক্য বিন্যাস এক কথায় অসাধারণ। এমন খটমটে একটা বিষয়ও যে কী করে পূর্ণ সাহিত্য মান বজায় রেখে লেখা যায় লেখক সে বিস্ময়ই ছড়িয়ে রেখেছেন গোটা বই জুড়ে!
লেখক বেদনার কথা বলেছেন। যে বেদনায় কান্না আসে। কিন্তু কান্নার প্রাবল্যে যদি হেঁচকি ওঠে যায় তাহলে কান্নার সাবলীলতাই বাধাগ্রস্ত হয়। তাই লেখক সজ্ঞানে মাঝে মাঝে শব্দের আবরনে কৌতুক ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে সে কৌতুক হাসায় না। হেঁচকি আটকায়। তাতে কান্নাটা আরো বেগবান হয়।
মোটা মাথায় চিন্তা করলে এ শুধু কিছু তথ্য উপাত্তের বিন্যস্ত সংকলন। কিন্তু সূক্ষ্ম বিবেচনায় এ হলো ষড়যন্ত্রকারী মিশনারিদের রুখে দাঁড়াবার করুণ আবেদন। পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রিতি গড়ে তোলার সকরুণ নিবেদন। সবিশেষ হুমকির মুখে পড়া দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান।
ঝরঝরে গদ্যে রচিত একশো চার পৃষ্ঠার ছোট্ট বই। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এর আবেদন বিরাট বিস্তৃত ও অনস্বীকার্য। দেশকে ভালোবাসে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে ভালোবাসে এমন প্রতিটি নাগরিকের জন্য এ বই অবশ্য পাঠ্য।
বই: বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারী তৎপরতা
লেখক: ইবরাহীম জামিল
প্রকাশনী: আলবাব
পৃষ্ঠা: ১০৪
মুদ্রিত মূল্য-১৬০৳
ডিসকাউন্ট মূল্য -১২০৳
-এটি