সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানরা কেমন আছেন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাবিবুল্লাহ বাহার।।

দক্ষিণ আফ্রিকা,আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল একটি রাষ্ট্র। ১২,২১,০৩৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫৫ মিলিয়ন। মুসলমানদের সংখ্যা দুই মিলিয়নের কিছু কম। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩%। বহুজাতিক রাষ্ট্রটির মুসলমানদের বেশীর ভাগই ভারত মহাসাগরীয় ইউরোপিয় উপনিবেশগুলো থেকে নির্বাসিত রাজবন্দী বা দাস বানিয়ে নিয়ে আসা নিরপরাধ মুসলমানদের বংশধর। অল্প সংখ্যক আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ও রয়েছেন।

ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫ এ প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সর্বস্তরের মুসলমানদের নিয়ে দারুন সংগঠিত।আল মাজলিসুল ইসলামি দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমান দের জাতীয় প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। অন্য একটি সংগঠন দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস কাউন্সিল ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলছে।সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকায় অসংখ্য হিফজ ও মক্তব জাতীয় মাদ্রাসা রয়েছে। ছয় শতাধিক অত্যাধুনিক ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মাদ্রাসা, বিশেষায়িত ইসলামী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ইসলামি স্টাডিজ বিভাগগুলো ইসলামি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলোই আবার দেশসেরা প্রতিষ্ঠান। দেশটিতে সবচেয়ে বেশী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ও জোহানেসবার্গে অবস্থিত দেওবন্দী ঘরানার দারুল উলুম যাকারিয়্যা ইসলামি মহাবিদ্যালয়। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে অসংখ্য প্রথিতযশা ইসলামি স্কলার ও একাডেমিয়ান গ্রাজুয়েশন করেন। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা ইসলামী কলেজ ও ওয়েস্টার্ন ক্যাপ ইউনিভার্সিটির আরবী বিভাগ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

ডারবান মহানগরীতে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত দায়ী শাইখ আহমাদ দিদাত কর্তৃক ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী দা'ওয়া সেন্টারের প্রধান কার্যালয়।প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্থাটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে খ্রিস্টান মিশনারীদের দাবীগুলোর অসারতা তুলে ধরে মুসলমানদের ঈমান আকিদার হেফাজত করছে।

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
তিন শতাব্দী জুড়ে মুসলমানরা দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সামাজিক সম্প্রীতি ধরে রেখেছে পূর্ণমাত্রায়।গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে মুসলমানরা ছিলেন সামনের সারিতে।সংখ্যায় মাত্র তিন শতাংশ হলে ও আন্দোলনের ১০ শতাংশ নেতৃবৃন্দ ছিলেন মুসলমান । বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক দক্ষিণ আফ্রিকার সদ্যপ্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে রোবেন দ্বীপে অনেক মুসলিম নেতৃবৃন্দ কারাবরণ করেছিলেন। ইউসুফ দা দু,আহমাদ তামুল, আযিয বাহাদ, আহমাদ কাসরাদা, ইমাম আব্দুল্লাহ হারুন ও আহমাদ তাইমুল এমন ই কিছু মহান সংগ্রামী।

শেষোক্ত দুজন বর্ণবাদী স্বৈরাচার সরকারের রাষ্ট্রীয় খুনের শিকার হয়েছেন।পরবর্তীতে বর্ণবাদ বিরোধী নেতৃত্ব সরকার গঠন করলে মুসলমানদের দারুন ভাবে মূল্যায়ন করা হয়। ১৯৯৪ সালের প্রথম জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারে চারজন মুসলমান মন্ত্রী স্থান পান, বিদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ১৫ জন মুসলমান শিক্ষানবিশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান। সংগ্রামী মুসলিম নেতাদের নামে অনেক গুলো জাতীয় সড়কের নামকরণ করা হয়। শরিয়াভিক্তিক মুসলিম পরিবার আইনকে সরকারি ভাবে স্বীকার করা হয়েছে। দেশটির সংবিধান সকল নাগরিককে নিরুপদ্রবে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সংখ্যালঘু মুসলমান বলা যায়। এরা দক্ষিণ আফ্রিকায় এতটা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন যা অনেক মুসলমান দেশে কল্পনা ও করা যায় না। মুসলমান দের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক প্রভাব আর অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা সব মিলিয়ে দেশটি ইসলামী দা'ওয়ার উর্বর ভূমি বলা চলে।

অর্থনীতি ও মিডিয়া
জোহানসবার্গ, কেপটাউন আর ডারবান নগরীতে রয়েছে মুসলিম মালিকানাধীন I TV স্যাটেলাইটের রেডিও -টেলিভিশন চ্যানেল গুলোর কার্যালয়।ডেইলি মুসলিম নিউজ ,আল কলম পত্রিকা সহ দৈনিক ডজনখানেক পত্রিকা বেরোয় মুসলমানদের সম্পাদনায়।অনলাইন মিডিয়ায় ও মুসলমানরা অনেক এগিয়ে। আল বারাকাহ, HBZ ও হাবিব ব্যাংক মুসলিম মালিকানাধীন ব্যাংক।জাতীয় আওকাফ ফাউন্ডেশন, আত তাকাফুল কোম্পানি সহ অসংখ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুসলমানদের সমৃদ্ধ করেছে।অন্য ব্যাংক গুলো ও শরীয়াহ ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

চ্যালেঞ্জ
১. পশ্চিমা মিডিয়া-সৃষ্ট ইসলামোফোবিয়া বহুদিনের সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বিনষ্ট করতে পারে বলে আশংকা দেখা দিয়েছে। ২. সরকারী ভাবে বাধা না থাকায় শিয়া ও ইসলামী সঠিক শিক্ষা বর্জিত ব্রেলবি মতবাদ বিস্তার লাভ করছে। ৩.দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের ফলশ্রুতিতে আজো অকৃষ্ণাঙদের মাঝে বর্ণবাদের কিছুটা রেশ রয়ে গেছে। সম্পূর্ণ অনৈসলামিক এ ভেদাভেদ মুসলমানদের অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।

আশা করা যায় এ চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করা গেলে দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলামের ভবিষ্যত প্রোজ্জ্বল হবে।

তথ্য: আশরাফ ঈদ,সাপ্তাহিক আল মুজতামা, ফেব্রুয়ারি ২০২০,সংখ্যা ২১৪০, আদিল জাফার, কিরাআত আফ্রিকান অনলাইন, ২৩/৩/২০১৮।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ