সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দারিদ্র বিমোচনে প্রয়োজন যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ আরাফাত।।
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া জহীরুদ্দিন মাদরাসা ঢাকা>

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। যাকাত একটি ফরজ ইবাদাত। হিজরতের পূর্বেই যাকাতের বিধান নাযিল হয়। সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত ফরজ। সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা ঐ পরিমাণ নগদ অর্থ কিংবা বর্ধনশীল সম্পদ পূর্ণ এক বছর অতিক্রম হলে যাকাত ফরজ। ব্যবসায়িক পন্য ও গবাদি পশুরও যাকাত দিতে হয়। যাকাতের অস্বীকার করা কুফরি। অমান্য করা কবিরা গুনাহ।

যাকাত মানে পবিত্র হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া। যাকাত আত্মার ব্যাধি কৃপণতা ও সম্পদকে পবিত্র করে। বৃদ্ধিকরে সম্পদের বরকত।

যাকাত ইসলামী রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। ইসলামী রাষ্ট্র হতে দরিদ্রতা দূরকরে অর্থনৈতিকে স্থিতিশীল রাখতে যাকাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে যাকাত অসহায় ও গরীব-দুঃখী মানুষের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি ধনী-গরীবের মধ্যকার শ্রেণী বিভেদ ও বৈষম্য দূর করে। আকস্মিক বিপদগ্রস্ত ও অক্ষম শ্রেণীর কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করে। সম্পদের একচেটিয়া আগ্রাসন রোধ করে। দরিদ্রমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে যাকাত অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। বাধ্যতামূলক পরিশোধযোগ্য রাজস্ব খাত। যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা টেকসই উন্নয়নমূলক অর্থব্যবস্থা।

আল্লাহ তায়ালা নামায আদায়ের পাশাপাশি যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন কুরআনের বহু জায়গায়। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন, "তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত আদায় কর"। (সুরা হজ্ব: ৭৮) অর্থাৎ নামাযের ন্যায় যাকাত ইসলামের একটি সম্ভাব্য অবিচ্ছেদ্য অংশ।

নামায দৈহিক ইবাদত। আর যাকাত আর্থিক ইবাদত। নামায মানব আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আর যাকাত পবিত্র করে সম্পদকে। আল্লাহ তা‘আলা রাসুল সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন," আপনি তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করুন, আর এর দ্বারা (তাদের সম্পদ) পবিত্র ও পরিশোধিত হবে"।

যাকাত ধনীর সম্পদে গরীবের হক। ধনীরা তার সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ পৌছিয়ে দিবে নিঃস্ব ও হত দরিদ্র মানুষের কাছে। দিবে মুসাফির, মুজাহিদসহ কয়েক শ্রেণীর মানুষকে।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তা‘আলা যাকাত প্রাপ্যদের বিবরন দিয়ে বলেন, "নিশ্চই যাকাত নিঃস্ব, দরিদ্র ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে মুজাহিদ ও মুসাফিরদের জন্য। এটিই আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়" (সুরা তাওবা: ৬০)।

যাকাত আদায় না করলে পরিণাম ভয়াবহ। হতে হবে ইহোকালীন ক্ষতি ও পরকালীন শাস্তির সম্মুখীন। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, " যারা সোনা-রুপা গচ্ছিত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে, এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং এখনি আস্বাদন কর জমা রাখার স্বাদ"। (সুরা তাওবা: ৩৪-৩৫)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ