সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


গাছপালা সম্পর্কে কুরআন-হাদিসের ভাষ্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

কুরআন ও সুন্নাহ'য় "গাছ" শব্দটি এটির সকল উৎপত্তিগত অর্থসহ বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়াও পবিত্র কুরআনে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফলমূল, লতাপাতা ও শেকড় নিয়ে আলোচনা এসেছে। কুরআন-হাদীসের অনেক স্থানে বিভিন্ন গাছপালা ও উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ডুমুর গাছ, জলপাই গাছ, ডালিম গাছ, আঙুর গাছ, খেজুর গাছ, লাউ গাছ, ঝাউগাছ, আদা, কর্পুর ইত্যাদি।

পবিত্র কুরআন অনেক জায়গায় উদ্ভিদবিদ্যার বিভিন্ন পরিভাষা উল্লেখ করেছে। কখনো কখনো এসব পরিভাষা আয়াতের গূঢ়ার্থ ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে বারংবার আল্লাহ তা'য়ালা মানবজাতিকে গাছপালাসহ তাঁর অন্যান্য সকল সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে বলেছেন।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।

যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। সূরা আল ইমরান: ১৯০ - ১৯১

কুরআনের যেসমস্ত আয়াতে গাছপালা, ফুলফলসহ‌ আল্লাহ তা'য়ালার অন্যান্য সৃষ্টির কথা আলোচনা করা হয়েছে, সেসব আয়াত মূলত মুমিনদেরকে আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টির নিদর্শন নিয়ে গবেষণা করতে উৎসাহিত করে। আর এতে করে আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি তাদের ঈমান আরো দৃঢ় হয়। এসব আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালা মানবজাতিকে তাঁর নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আদেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি। এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি। অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সব্জি, যয়তুন, খর্জূর, ঘন উদ্যান, ফল এবং ঘাস। তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে। সূরা আবাসা: ২৪ - ৩২

কখনো কখনো আল্লাহ তা'য়ালা সরিষার বীজের দৃষ্টান্ত দিয়ে তাঁর হিসাব-নিকাশের সূক্ষ্মতার কথা বুঝিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট। সূরা আম্বিয়া: ৪৭

একই প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা কখনো কখনো খেজুরের দানার দৃষ্টান্ত টেনেছেন। যেমন এক আয়াতে তিনি বলেন, যে লোক, পুরুষ হোক কিংবা নারী, কোন সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণ ও নষ্ট হবে না। সূরা নিসা: ১২৪

বুঝার সুবিধার্থে উক্ত আয়াতে আরবি نقير শব্দের অর্থ "তিল পরিমাণ" করা হয়েছে; তবে نقير শব্দের মূল অর্থ হলো খেজুর দানার মধ্যে থাকা বিন্দুর মতো ছিদ্র।

পবিত্র কুরআনে গাছপালার এতোটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্বকে একটি গাছের নিকটবর্তী হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।

অনন্তর শয়তান তাদের (ধোঁকা দিয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাইয়ে) উভয়কে ওখান (জান্নাত) থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা (পৃথিবীতে) নেমে যাও। সূরা বাকারা: ৩৫ - ৩৬

অনেক সময় আল্লাহ তা'য়ালা গাছপালাকে কোনো কোনো সম্প্রদায়ের ওপর তাঁর আযাব হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, অতঃপর তারা অবাধ্যতা করলো ফলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা! আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুই উদ্যানে, যাতে উদগত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ। এটা ছিল কুফরের কারণে তাদের প্রতি আমার শাস্তি। আমি অকৃতজ্ঞ ব্যতীত কাউকে শাস্তি দেই না। সূরা সাবা: ১৫ - ১৬

অনেক আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বিশেষ ধরনের বৃক্ষকে জাহান্নামীদের খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা (জাহান্নামীরা) অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে। সূরা ওয়াকিয়া: ৫২

আবার কখনো গাছপালা ও ফলমূলকে আল্লাহ তা'য়ালা বেহেশতের নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আর যারা ডানপন্থি, তারা কতই না ভাগ্যবান! তাদের জন্য থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষ, কাঁদি কাঁদি কলা, (বৃক্ষের) দীর্ঘ ছায়া, প্রবাহিত পানিতে এবং প্রচুর ফল-মূলে যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়। সূরা ওয়াকিয়া: ২৭ - ৩৩

হাদীসেও বিভিন্ন প্রসঙ্গে গাছপালার কথা এসেছে। যেমন রাসুলুল্লাহ সা. বিভিন্ন শ্রেণির লোকদেরকে বিভিন্ন গাছের সাথে তুলনা করে বলেছেন,

যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে, সে হলো উতরুজ্জা (সুগন্ধিযুক্ত লেবুজাতয়ী) ফলের মতো। তার ঘ্রাণ উত্তম। স্বাদ উত্তম। যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে হলো ‘খেজুরের মতো, ঘ্রাণ নেই তবে স্বাদটা ভাল। যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে, সে হলো রায়হানা ফুলের মতো। ঘ্রাণটা উত্তম তবে স্বাদটা তিতা। যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে হানযালা (একপ্রকার টকজাতীয়) ফলের মতো। তার কোনও ঘ্রাণও নেই স্বাদটাও বিস্বাদ। বুখারী

ইসলামে গাছপালা রোপণ করা ও যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে তাকিদ দেওয়া হয়েছে, এবং বৃক্ষরোপণকে সওয়াবের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সা. মানুষকে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, যদি পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তেও এসে যায় আর তোমার হাতে রোপণ করার মতো কোনো চারা থাকে, তাহলে তা রোপণ করে দাও।

বৃক্ষরোপণের ফযীলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. অন্যত্র বলেছেন, যদি কোনো মুসলিম একটি গাছ লাগায় আর পাখি, মানুষ অথবা কোনো প্রাণী তা থেকে আহার করে, তাহলে এর জন্য সে কেয়ামত পর্যন্ত সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পেতে থাকবে।

কুরআনিক বোটানিক গার্ডেন থেকে অনুদিত

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ