মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী।।
ইসলামে সকল ইবাদতের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি। সালাত এবং যে কোনো সাওম শুদ্ধ হওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ সময়। প্রতি ওয়াক্ত সালাত নিজের দায়িত্ব থেকে আদায় হওয়ার জন্য যেভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্য আদায় করা আবশ্যক, সাওম বা রোজার বেলায়ও অনুরুপ বিধান। অর্থাৎ নিজের দায়িত্ব থেকে সাওম আদায় হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় এবং পদ্ধতির আলোকেই সিয়াম সাধনা করতে হয়।
সাওম এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'সুবহ সাদিক তথা ফজর শুরু হওয়ার পূর্বক্ষণ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা।'এতে সামান্যতম ব্যত্যয় ঘটলে সাওম বিশুদ্ধ হয় না। ধর্মপ্রাণ মুমিনগণ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ও দায়িত্বশীল থাকেন। অগত্যা কোনোও ইবাদত যদি পূর্ণ প্রশান্তির সাথে আদায় করা না যায়, তবে ভেতরে ভেতরে একটা অতৃপ্তি ও সন্দেহ থেকেই যায়।
দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, প্রতি রমজান মাসে আমরা সাহরির শেষ সময়, ফজরের শুরু ওয়াক্ত, ইফতারের সময় নিয়ে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, যা আমাদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দ্বিধা, বিরক্তি আর অতৃপ্তির মধ্যে ফেলে দেয় এবং সমাজে সমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে।
যেমন- প্রথম রমজান রাতে আমাদের বৃহত্তর সিলেটে কোনো কোনো মসজিদে সাহরির শেষ সময় বলা হয় ৩. ৫৬ টায় এবং ফজরের আজান দেওয়া হয় ৪.০০ টায়। আবার কোনো কোনো মসজিদে সাহরির শেষ সময় বলা হয় ৪.০০ টায় ফজরের আজান দেওয়া ৪.০৬ টায়। এ আলোকে এখনও চলছে। আল্লাহ না করুন, হয়তো পুরো রমজান মাস এভাবে চলবে।
এ ভিন্নতা হয়, অনুসরণীয় দু'টি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত ক্যালেন্ডার দু'টির ভিন্নতার কারণে। কোথাও অনুসরণ করা হয় ইসলামী ফাউন্ডেশনকে, আবার কোথাও অনুসরণ করা হয় দরগাহ মাদরাসাকে।
ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রণীত সময়সূচিতে সাহরির শেষ সময় এবং ফজরের ওয়াক্ত শুরুর সময় বলা হয়েছে, দরগাহ মাদরাসার সময়সূচির ৪-৬ মিনিট পূর্বের সময়কে।
প্রতিষ্ঠান দু'টিই অনুসরণযোগ্য। এ ব্যাপারে কারোও অভিযোগ-আপত্তি থাকার কথা নয়। দরগাহ মাদরাসায় রয়েছেন সচেতন, বিজ্ঞ এবং দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মুফতি ও আলেম। যুগ যুগ ধরে ইসলাম প্রিয় মানুষজন তাঁদের অনুসরণ করছেন।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনুরুপ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। বিশেষত, আমাদের সিলেটে রয়েছেন মুহতারাম মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম। যিনি দক্ষতা ও আস্থায় সকলের কাছে প্রিয় এবং গ্রহনযোগ্য। প্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণের দিক থেকে ইসলামী ফাউন্ডেশন হয়তো কিছুটা অগ্রগামী থাকবে। যেহেতু এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
কথা হলো, এ অসামঞ্জস্যতা দূর করা করা কী অসম্ভব? যদি তাই হয়, তবে তা চরম উদ্ধেগ ও হতাশার। কামনা করি- এ ধারণা ভুল হোক। কারণ- এক্ষেত্রে দু'টির যে কোনো একটি হবে সঠিক, অন্যটি হবে ভুল। তো কোনটি সঠিক এবং কোনটি ভুল, তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে মানুষজন নিজ নিজ পছন্দের আলোকে যে কোনো একটি অনুসরণ করবে। ফলে কারোও সালাত-সাওম সঠিক সময়ে আদায় হওয়ার কারণে তাদেরটি শুদ্ধ হবে। আবার কারোটি হবে এর বিপরীত।
আমাদের সকলেরই জানা কথা, অনেক মহিলা সাহরি খেয়ে জায়নামাজে চলে যান, বিশেষত বৃদ্ধারা। দু'চার রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ে ফজরের আজানের অপেক্ষায় থাকেন। আজানের শব্দ কানে ভেসে আসলেই ফজরের সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে যান। অপরদিকে ধূমপানকারীদের জন্য দু'চার মিনিট সময় অনেক গুরুত্বের। তারা হয়তো পরের সময়টাকেই গ্রহন করবেন।
আগে-পরের এ ধুম্রজালে তাদের থেকে ভুল কিছু সংঘটিত হচ্ছেনা তো? এছাড়া একই সময়ে একেক মসজিদের মাইক থেকে থেকে ভিন্ন ভিন্ন ঘোষণা বেশ শ্রুতিকটু। যেমন- এক জায়গায় বলা হয় সময় শেষ, আবার অন্য জায়গায় বলা হয় আর মাত্র ৫ মিনিট সময় আছে।
সমন্বয় সাধন কিংবা অসামঞ্জস্যতা দূর করা যদি সম্ভব হয়, তবে কেন এ পার্থক্য দূর করা হচ্ছেনা? যা ধর্মপ্রাণ মানুষজনের মাঝে বিভ্রান্তি এবং একপ্রকার অনৈক্য সৃষ্টি করছে। বিষয়টিতে সিলেটের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান দু'টির কর্তৃপক্ষের -যতো দ্রুত সম্ভব- সুদৃষ্টি কাম্য। আপনাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সময়ের অপরিহার্য দাবী।
-এটি