মুমিনুল ইসলাম।।
বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। একদিকে গোধূলিরাঙা পলাশ, অন্যদিকে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। দক্ষিণের জানালা খুললেই যেন মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের সৌরভ আর সারাদিন নরম কুসুমের মতন মিষ্টি রোদ।
বসন্ত মানেই শতরঙ বিশিষ্ট ফুলের কানন, বসন্ত মানেই বাতাসের সাথে কঁচি পাতার কাঁপন।মাতাল হাওয়া, উড়ন্ত মৌমাছিদের গুঞ্জরণ,সুললিত কন্ঠে কোকিলের কুহুডাক। রঙিন হয়ে উঠা গ্রামের মেঠোপথ, নদীরপাড়,মাঠভরা ফসলের ক্ষেত। কৃষকের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা এক টুকরো হাসির ঝিলিকে ঝলমল করে উঠা পৃথিবী।
সব মিলিয়ে অনন্য ঋতু বসন্তকে বরণ করে নিতে বিশেষভাবে প্রস্তুত হয় আমাদের দেশ, দেশের মানুষ। হয়তো এবারো প্রস্তুত হয়েছিলাম। কিন্তু, এবার এমন এক বসন্তকে আমাদের বরণ করে নিতে হয়েছে, যা বরণ করার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
এবার বসন্তেও কাননে ফুল ফুটেছে, গাছে গাছে নতুন পাতাও গজিয়েছে। কিন্তু এবার বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে ফুলের সৌরভের পরিবর্তে ভেসে আসছে এক মহা আতঙ্কের ভয়াল সংবাদ।
প্রকৃতি রঙিন সাঁজে সাঁজলেও প্রকৃতিকে কাছ থেকে উপভোগ করার মতোন তেমন কেউ নেই তার আশপাশে। পাওয়া যাবেই বা কি করে?সবাই যে আজ গৃহবন্দী। এবার বসন্তের আগমন আমাদের করে রেখেছে চারদেয়ালের নির্দোষ কয়েদি।
কারণ? এবারের বসন্ত যে একা আসেনি। সাথে নিয়ে এসেছে করোনা নামক এক প্রাণঘাতী ভাইরাস। যা কিনা সময়ের ব্যবধানে মহামারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তিন অক্ষরের ক্ষুদ্র এই নামটি বিশাল এই পৃথিবীকে করে তুলেছে আতঙ্কিত। অদৃশ্য এই করোনা ভাইরাস সদৃশ্য এই পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে কয়েকদিনের ব্যবধানে।
বিশ্বখ্যাত তথ্য-প্রযুক্তি ও ডাক্তারদেরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। সমাজের দৃশ্যপট করে দিয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত। সর্বদা জনসমাগমে গুন-গুন করা ঐতিহাসিক স্থানগুলোও এখন প্রায় জনমানবশূন্য নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
মসজিদের যেই মাইক দিয়ে দৈনিক পাঁচবার নামায দাওয়াত দেওয়া হতো আজ সেই মাইক দিয়েই মসজিদে না আসার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আহ!কী নির্রম দৃশ্য। এমন এক অদ্ভুদ বসন্তও দেখতে হলো আমাদের। মানবিকতা-অমানবিকতার অসংখ্য পরিচয় দিলো এবারের বসন্ত। সত্যি! এমন বসন্ত আগে কখনো দেখিনি।
লেখক: শিক্ষার্থী, আনন্দপুর দারুল উলূম মাদরাসা
-এটি