মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া
অতিথি লেখক
আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান উমাইয়া বংশের ৫ম খলিফা। ৬৪৬ সালে মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। ৭০৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। একজন বিচক্ষণ ও দূরদর্শী শাসক ছিলেন। সে কারণে বেশকিছু রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানেও সফলতা পেয়েছিলেন।
আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের ধারণা ছিল- তিনি রমজান মাসে ইন্তেকাল করবেন। তাই রমজান মাস আসলেই তার মাঝে একধরনের আতংক কাজ করত। হযরত সালাবা বলেন, আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান বলতেন-
'আমি রমজানে জন্মগ্রহণ করেছি। রমজানে মায়ের দুধ ছেড়েছি। রমজানে কুরআন শেষ করেছি। রমজানে সাবালক হয়েছি।
রমজানে উত্তরাধিকার মনোনীত হয়েছি এবং রমজানে খেলাফত পেয়েছি। আমার মৃত্যুও হবে রমজানে । তবে তার ধারণা বাস্তবে ঘটেনি। তার মৃত্যু হয়েছিল শাওয়াল মাসে।'
আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে সিরিয়াতে একবার মারাত্মক মহামারীর প্রকোপ দেখা দেয়। মহামারীতে বহু লোক মারা যাওয়ায় তিনি মৃত্যুভয়ে অশ্বারোহী হয়ে নিজ শহর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে রওয়ানা হন। সাথে তার বিশ্বস্ত গোলাম এবং কিছু সৈন্যও ছিল। মহামারীর ভয়াবহতায় তিনি খুবই ভীতসন্ত্রস্ত ও হতাশ ছিলেন। যার ফলে ভূমিতে পা রাখতেন না। অশ্বপৃষ্ঠে নিদ্রা যেতেন। এক রাতে তার ঘুম আসছিল না। অস্থির হয়ে গোলামকে বললেন, আমাকে কোন গল্প শুনাও তো!
বুদ্ধিমান গোলাম সুবর্ণ সুযোগ মনে করে নিম্নের গল্পটি বলতে লাগলো- একটি শিয়াল নিজ প্রাণ রক্ষায় একটি বাঘের আশ্রয় নিয়েছিল। কোন হিংস্র প্রাণী বাঘের ভয়ে শিয়ালের দিকে তাকাতেও সাহস করত না। শিয়ালটি নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে আয়েশের সাথেই সময় পার করছিল। একটি বাজ পাখি এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
একদিন ঈগলটি শিকারের জন্য শিয়ালকে ধাওয়া করে। সে দৌড়ে বাঘের আশ্রয়ে চলে যায়। বাঘও তাকে ঈগলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ঈগল পুনরায় শিয়ালের উপর আক্রমণ করে। এবার সে সফল হয়। নখবিদ্ধ করে শিয়ালকে ছু মেরে উড়ে নিয়ে যায়। শিয়াল নিজেকে রক্ষার জন্য বাঘের নিকট চিৎকার করে আর্তনাদ করতে থাকে।
তখন বাঘ বলল, শিয়াল বন্ধু! আমিতো ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী হিংস্র প্রাণী থেকে তোমাকে রক্ষা করতে সক্ষম। উর্ধ্বজগতের কারো আক্রমণ থেকে তোমাকে রক্ষা করতে আমি অক্ষম।
এ গল্প শ্রবণে বাদশাহ আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান সতর্ক হয়ে যান। বিচক্ষণ বাদশাহ আবদুল মালিক উপলব্ধি করতে পারেন যে, আমার সেনাবাহিনী আমাকে কেবল ঐসব শত্রু থেকে রক্ষা করতে সক্ষম, যাদের বিচরণ শুধু ভূপৃষ্ঠেই সীমাবদ্ধ। যে সব বালা-মসিবত, মহামারী ঊর্ধ্বোজগত থেকে আসে তা থেকে আমার রাজত্ব, আমার বিত্ত-ভৈবব, আমার সেনাবাহিনী আমাকে বাঁচাতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম। ঊর্ধ্বজগতের বিপদাপদ থেকে হেফাজতের ক্ষমতা কেবল আকাশের মালিকই রাখেন।
এ গল্প শোনার পর বাদশাহ আবদুল মালিকের অন্তর থেকে মহামারীর শঙ্কা দুর হয়ে যায়। তিনি আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে নিশ্চিন্তে শাহী মহলে বাস করতে থাকেন।
এ গল্পটি থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হলো, বিপদাপদে সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করা চাই। বর্তমান বিশ্বে যে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে তাও আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরণের আজাব। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এর সাথে সাথে অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর দরবারে তওবা, ইসতিগফার করতে হবে। কিন্তু আল্লাহর রহমত থেকে কোন অবস্থাতেই হতাশ হওয়া যাবে না। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সমাজে আতংকও ছড়ানো যাবে না।
হে দয়াময়! তুমি আমাদের এ মুসিবত থেকে রক্ষা কর! আমিন!
লেখক : মুহতামিম, জামিয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসা, হরিরামপুর, মিরপুর ১, ঢাকা।
আরএম/