তাবলিগ জামাতে তালিমের তালিকায় রয়েছে কয়েকটি বই। প্রতিদিন মসজিদগুলোতে কিংবা বাসাবাড়িতে লাখ-লাখ মানুষ পড়ে থাকেন বইগুলো। সম্মিলিত তালিম হয় কয়েকটি ফজর, জোহর ও এশার নামাজের পর। এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাতের প্রসিদ্ধ এমন চারটি কিতাব সম্পর্কে লিখেছেন দিদার শফিক
‘ফাজায়েলে আমল’ তাবলিগ জামাতের লোকেদের মধ্যে অধিক পরিচিত ও ব্যাপক পঠিত একটি বই। নামাজ, রোজা , হজ, জাকাত জিকির, কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত ও সাহাবিদের জীবনীর সমন্বয়ে রচিত বইটি।
তাবলিগী মেহনতে অংশগ্রহণকারীদের তালিম-তরবীয়তের জন্য তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ. উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর সমন্বয়ে একটি বই রচনার তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলে তিনি ভাতিজা শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা যাকারিয়াকে রহ. এরকম বই লেখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি ফাজায়েলে তাবলিগ, ফাজায়েলে নামাজ, ফাজায়েলে জিকির, ফাজায়েলে কুরআন ইত্যাদি বিষয়ে খন্ড খন্ড কিতাব লেখেন।
পরবর্তীতে উক্ত খণ্ড কিতাবগুলির সমন্বিতরূপই হল ‘ফাজায়েলে আমল ’। বইটিতে হাদিসের আলোকে আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হাদিসের মর্ম ও আমলের ফায়দা টীকা-টিপ্পনীর মাধ্যমে সহজ ও বোধগম্য করে পেশ করা হয়েছে বইটিতে।
তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত সকলেই নিজ নিজ বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবং মসজিদে নিয়মিত ফাজায়েলে আমল কিতাবের তালিম করেন। যারা তাবলিগে ৩ দিন, ৪০ দিন (একচিল্লা), ১২০ দিন (৩ চিল্লা) বা ১ বছরের জন্য ব্যক্তিগত খরচে জামাতে বের হন, তারাও প্রতিদিন এই কিতাব থেকে তালিম গ্রহণ করেন।
এই তালিমের কারণে ঘরের মুসলমান মহিলা ও শিশুরা নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন। এতে সমাজে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বইটি পাঠের প্রতিক্রিয়ায় আল্লাহর হুকুম মেনে চলার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
মুন্তাখাব হাদিস চয়নকৃত হাদিসের সংকলন। হাদিসের বিশাল ভান্ডার থেকে তাবলিগ জামাতের ছয় উসুলের ভিত্তিতে হাদিস সংকলন করা হয়েছে বইটিতে। উদ্দেশ্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার আদেশ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাদর্শ অনুযায়ী চলা এবং কর্মীদের মধ্যে এ সকল গুণাবলী সৃষ্টি করা।
[caption id="attachment_175956" align="aligncenter" width="300"] বই কিনতে ক্লিক করুন[/caption]
তাবলিগ জামাতের ছয়টি মূলনীতি হলো- কালিমাহ, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকারামুল মুসলিমিন, সহি নিয়ত এবং দাওয়াত ও তাবলিগ। উল্লেখ্য, এ ছয়টি উসুল সম্পর্কিত কুর’আনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস নিয়েই মুন্তাখাবে হাদিস গ্রন্থটি রচিত। এ সম্পর্কে বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ থেকে হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে।
তাবলিগ জামাতের মূল শিক্ষা বা স্লোগান হল- প্রাথমিক এ ছয়টি গুণের উপর চলতে পারলে যে কোনো লোকের জন্য পরিপূর্ণ দীন ইসলাম মেনে চলা সহজ হয়।হাদিসের আলোকে এই ছয় কাজকে আরো বেগবান ও প্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করা হযেছে মুন্তাখাবে হাদিস গ্রন্থটিতে।
‘হায়াতুস সাহাবা’ গ্রন্থটি সাহাবাদের জীবনীচরিত গ্রন্থ।সাহাবিগণ নবি সা. এর হাতে গড়া সোনার মানুষ। তাদের জীবনে রাসুলের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওটেছে। তাই প্রকৃতপক্ষে রাসুলকে অনুসরণ করতে হলে তার সাহাবিদের জীবনী জানা অতীব জরুরি একটি বিষয়। রাসুলের আদর্শ ও তার গড়া সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানবদের জীবনাচার নিয়েই রচিত হায়াতুস সাহাবা গ্রন্থটি।
‘হায়াতুস সাহাবা’ গ্রন্থটি শায়খ ইলিয়াস রহ. এর সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কন্ধালবী (রহ) এর রচিত।এ গ্রন্থটি বেশ উপকারী। তাবলিগের ভাইদের নিকট অধিক প্রিয়। গ্রন্থটিতে নবি করিম সা.এর দাওয়াতি জিন্দেগীসহ অনেক সাহাবা (রা)-এর জীবনী ও তাঁদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে,ফলে তাবলিগের সাথে জড়িত ভাইয়েরা দাওয়াতের সঠিক পথে থেকে সটিকভাবে দাওয়াতের কাজ করার অনুপ্রেরণা পান।
‘হায়াতুস সাহাবা’ গ্রন্থটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এটি মূলত উর্দু ভাষাতেই রচিত। আরবিতে গ্রন্থটি ১৯৯৯ সালে বৈরূতের মুআস্সাসাতুর রিসালা লাইব্রেরি থেকে পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থটির অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো এ গ্রন্থটিতে বিভিন্ন সাহাবীদের জীবনীগুলো সহি হাদিস যেমন: সিহাহসিত্তাহ, ইব্ন হিব্বান, মুসতাদরাক, মুসনাদে আহমাদ, বাইহাকি ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থের যেমন: ইব্ন ইসহাক, ইব্ন হিসাম, নুআইম, ইব্ন কাসির, তাবারি-এর অবলম্বনে রচিত।
যা সচরাচর অন্য গ্রন্থের মধ্যে সহজে পাওয়া যায় না। সাহাবীদের জীবনীর ওপর এ গ্রন্থটিকে একটি আকর বলা যেতে পারে। যে কোন একজন সাহাবিকে অনুসরণ করলে উম্মত সঠিক পথ পাবে বলে রাসুল বলেছেন। তাই হায়াতুস সাহাবা পাঠের গুরুত্ব অনেক বেশি।
দান সদকা করার ফজিলত সম্পর্কে রচিত এ গ্রন্থটি। লিখেছেন শায়খ জাকারিয়া রহ.। শুধু সম্পদ অর্জন ও জমানো মুমেনের গুণ নয়, উপার্জিত সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করাও মুমেনের গুণ। অর্থ -সম্পদ আল্লাহর পথে, দুঃখী মানুষের জন্য ব্যয় করলে অনেক উপকারিতা আছে। দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক কল্যাণ আছে দান-সদকা করার মধ্যে।
তাবলিগের সাথে জড়িত মুসলমানদের মাঝে বদান্য ও উদারতা সৃষ্টি করার জন্য এবং মুসলিম সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস হিসেবে গ্রন্থটি রচিত। তাবলিগ জামাতের কর্মী ও সাথীরা বইটি পাঠ ও তালিম করে থাকেন।
আরএম/