মাহবুবুর রহমান।।
মেঘের আনাগোনায় হঠাৎ কালো হয়ে আসে শরতের রোদেলা নীলাকাশ। এই তীব্র দাবদাহ! এই বৃষ্টির বাগড়া। অধূনা এই তো চলছে প্রকৃতির খেলা। গতকাল সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। আজ নামছে আকাশ ভেঙে। কখন থামে কে জানে? গাড়ির জানালা ভেদ করে দৃষ্টি চলে যায় সবুজ পাতায় ছাওয়া জঙ্গলাকীর্ণ কমলাপুর রেলওয়ে।
বৃষ্টি নামছে রেলওয়ের দীর্ঘদেহি শিরীষ, জাম, মেহগনি বেয়ে। বৃষ্টি পড়ছে নারকেলের চিরল পাতা বেয়ে। প্রতিটি ফোঁটায় পাতাগুলো মুক্তোদানার মত কেমন চকচক করে। নীল-সবুজ পাতা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে নরম কাদায়। ডালগুলো বাতাসে একটার উপর আরেকটা পড়ে অহর্ণিশ।
বাসাবো পেরিয়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভারে গাড়ি উঠতেই দেখা মেলে সারি সারি নিম গাছের। নিমগাছ দেখতে যেমনই হোক, পাতাগুলোর দিকে চেয়ে থাকতে মন চায়। আহা কি অপার সৌন্দর্য এখানে! কী কোমল রূপ-লাবণ্য। পাতা ও ডালের আন্দোলনে মনে হয় কোনো লাস্যময়ী নারী নুপুরের তালে তালে নেচে যায়। সবুজ লুটোপুটি খায় ভেজা হাওয়ায় মিশে মিশে। সত্যি বৃষ্টিতে ভিজে প্রকৃতি রূপ নিয়েছে নববঁধুর। সেই রূপ ছলকে ছলকে উঠছে আজ। মন চায় খোদার এ মনোহারি প্রকৃতিকে ছুঁয়েছেনে দেখি বারবার, একহাজার বার।
ওদিকে আফতাব নগরের কাশফুলগুলো শাদা মেঘের মত উড়ে বেড়ায়। দখিণা বাতাসে ঢেউ খেলে যায় কুয়াশার মত এ কাশবনে। কাশফুল দেখে মন জুড়িয়ে যায়। ঢেউ খেলানো সাদা-শুভ্র ফুলগুলোকে ছুয়ে দেখতে নিশপিশ করে না কার মন বলো।
খিলগাঁও তালতলা নূর মসজিদ থেকে যে রোডটা মাটির মসজিদের দিকে গিয়েছে। সে পথেই। ভূতের আড্ডা ছাড়িয়ে একটু সামনে। দেখা মেলে রাস্তার পাশ ঘেঁষে অজস্র ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শিউলি গাছের। চিরচেনা ধবধবে সাদা ও জাফরান রঙের শিউলি। গন্ধে আমোদিত হয় আশপাশ। ইকরার মাঠেও পড়ে থাকে ইতস্তত অসংখ্য শিশিরভেজা শিউলি। তবে কি শিশিরভেজা শিউলি মানেই শরৎ?
তাই মহাদেব শাহার মত বলতে ইচ্ছে হয়- এই শরতে তোমার চোখে শিউলি ফোটা ভোর
শারদনিশির ডাকে আমি ছেড়েছি ঘরদোর।
'কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে'।
-এএ