আবদুল্লাহ তামিম ♦
পাকিস্তানের প্রখ্যাত দায়ি, লেখক ও বক্তা মাওলানা তারিক জামিল এক বয়ানে জর্ডান সফরের কথা বলতে গিয়ে একটি বিস্ময়কর সফরের কারগুজারি শুনান।
তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর অনেক গুলো রাষ্ট্রের মধ্যে কয়েকটি রাষ্ট্র সফর করেছি, এর মধ্যে জর্ডান সফরে আমার ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আমি আর আমার স্ত্রী যখন জর্ডানে পৌঁছলাম, স্থানীয় তাবলিগ জামায়াতের আমির সাহেব আমাদেরকে তাদের বাসায় নিয়ে গেলেন, আমরা দুজনেই ভীষণ অবাক হলাম তাদের বাসায় গিয়ে।
মাত্র দুটি কক্ষ বিশিষ্ট একটা ঘর, ঘরের মধ্যে এক পাশে কিছু থালা-বাসন, তরকারির ঝুড়ি, একটা কাঠের উপর কয়েকটি কাপড়, আর আরাম করার জন্য একটা মাদুর, ও দুই খানা ইট।
আমার স্ত্রীকে নিয়ে এক কক্ষে আর আমাকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে গেলেন, উনার মোট ছয়টি মেয়ে, তারা সবাই পরিপূর্ণ পর্দা করে, আর একটা খুব ছোট ছেলে বাচ্চা কোলে।
ছেলেটির বয়স যখন একদিন, তখন থেকেই তার মা, কালো একটা কাপড় দিয়ে বাচ্চার চোখ বেঁধে দুধ পান করায়, যেনো কোনো পর্দার খেলাপ না হয়। এখন ওর বয়স এক বছর, ওর যখন দুধ খাওয়ার নেশা চাপে, তখনই কালো কাপড়টা মায়ের হাতে তুলে দেয় সে।
বোনদের সাথে কিতাবের উপর হাত দিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। আমার স্ত্রীকে খাবার দেওয়ার পর, তিনি এইসব দৃশ্য দেখে দোয়া না পড়েই খাবার মুখে দিতে গেলেন, ৪ বছরের পিচ্চি মেয়ে আমার স্ত্রীর হাত চেপে ধরে বললেন দোয়া না পড়লে খাবার খেতে দেবো না। এ দৃশ্য আমি খুব উপভোগ করছিলাম আর জুতা পায়ে দিচ্ছিলাম, পিচ্চিটা দৌঁড়ে এসে বললো, চাচা আপনি তো বাম পায়ের জুতা আগে পায়ে দিয়ে দিয়েছেন। এখন খুলে আবার ভাল করে দোয়া পড়ে ডান জুতা আগে পায়ে দিন।
আমি চিন্তায় বিভোর হয়ে গেলাম, এটা কেমন মা যার ৪ বছরের মেয়ে আমার মতো মাওলানার ভুল ধরিয়ে দেয়।
আমি আমির সাহেবের সাথে রাস্তায় বের হয়ে একটা গাড়িতে উঠলাম, ড্রাইভার মাতাল থাকার কারনে হঠাৎই এক্সিডেন্ট করে গাড়িটি, আমার চোখের সামনেই আমির সাহেব ইন্তেকাল করেন।
সবাই মিলে ধরাধরি করে লাশটা নিয়ে এলাম, উনার স্ত্রী, কন্যা লাশ দেখে দোয়া পড়লেন। যেখানে আমারই ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কান্না করতে, সেখানে উনার পরিবারের কারোরই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম না।
আমার স্ত্রী এসে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ভাবী ভাইয়ের দাফনের ব্যবস্থা করতে বলেছে দ্রুত।
আমি সবকিছু এনে দেখি, আমার স্ত্রী একা একা কান্না করছে, আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে ভীষণ জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিলো, আমি তার মুখ চেপে ধরে আওয়াজ বন্ধ করলাম, বললাম কি হয়েছে?
আমাকে বললো ওগো আমাকে ক্ষমা করো, তোমার উপযুক্ত স্ত্রী আজও হতে পারিনি, ওই দেখ, ভাইয়ের পরিবারের সবাই নামাজে দাঁড়িয়ে কান্না করছে, আল্লাহর কাছে তার মাগফেরাত কামনা করছে।
ওগো এতো ধৈর্যশীল পরিবারও কি এখনো আছে। আমি আমার স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে বাহিরে এসে, লাশের বাকিটুকু কাজ সমাধান করলাম।
রাতের বেলায় হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেলো কান্নার শব্দে, আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে শুনি, ভাবী সাহেবা তার ছয় মেয়েকে নিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজে কান্না করছে।
কী অবাক করা বিষয় এই ৪ বছরের বাচ্চা মেয়েও মায়ের সাথে সমানে দোয়া করে যাচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা শুনতে লাগলাম, এতো দারুণ দোয়া, শুনতে শুনতে কখন যে আমার চোখের পানি দাঁড়ি ভিজে মাটিতে পড়ছিল তা নিজেও জানিনা। আল্লাহর কাছে বললেন, আমাদের মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত ছেলে যেন আল্লাহ দ্রুতই কোন ব্যবস্থা করে দেন। আরও বললেন ইয়া আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম রিজিক দান করেন।
আমি ফজরের সালাতের পরে একটু ঘুমিয়ে পড়লাম, ঘুম থেকে উঠে শুনি, শহরের নাম করা তিন জন হুজুর প্রচুর পরিমাণে মোহরানা নিয়ে, তার তিন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।
উনি রাজি হওয়ায়, দুপুরে বিয়ে। আমার খুব কান্না চলে আসলো, উনি কেমন রমনী, যে কিনা রাতের বেলায় দোয়া করতেই ভোর বেলায় ফল পায়! সুবহানআল্লাহ!
সূত্র: ইন্টারনেট
-এটি