আওয়ার ইসলাম: দুই বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি মিয়ানমারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সুরক্ষা ও মর্যাদার জন্য। সেই সাথে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিষয়ক সাম্প্রতিক খবরে তারা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন এবং নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত।
আজ বুধবার মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে কর্মরত ৬১টি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে অবস্থানকারী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ সেখানে সংঘাত বেড়েই চলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। তাই ভবিষ্যত ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সুরক্ষিত হয় না বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
চলতি সপ্তাহের মধ্যে আনুমানিক ৩,৪৫০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৬১ এনজিও।
রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে কোনো অর্থপূর্ণ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না এবং বাস্তুচ্যুত কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনার পরিসর খুবই সীমিত বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈষম্যমূলক নীতির কারণে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার অধিকারের ক্ষেত্রে আরও সীমিত করে দেয়া হয়েছে সুযোগ-সুবিধা।
২০১২ সাল থেকে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্যের শিবিরে আটকা পড়ে আছে, ফিরতে পারছে না নিজ বাড়িতে। অন্যদিকে সীমিত করে দেয়া হয়েছে মানবাধিকার সংস্থাদের প্রবেশাধিকার, যোগ করা হয় বিবৃতিতে।
তাই রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের মানবাধিকারের স্বীকৃতি দেয়া এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া এমনকি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত দেয়াসহ তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে এনজিওগুলো।
তারা মনে করে, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সব সম্প্রদায় যাতে নিরাপদে থাকতে এবং প্রাথমিক পরিষেবা ও জীবিকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে তা মিয়ানমার সরকারের নিশ্চিত করা উচিত।
বর্তমান সমস্যার সমাধানে এনজিওগুলো কিছু সুপারিশ দিয়েছে। যার মধ্যে আছে- রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারকে সম্মান করা, শিক্ষা, জীবিকা ও সুরক্ষায় রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে সহায়তা দেয়া এবং মধ্যম বা দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান বের করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুই বছর ধরে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে সহায়তা করে আসছে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো।
তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে, বর্ষার প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে ও রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এতোটুকু যথেষ্ট নয়। আরও অনেক কিছু করা দরকার বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও তহবিল বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে শরণার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।
-এটি