মুহাম্মদ জুবাইর টেকনাফ(কক্সবাজার) প্রতিনিধি: নিজ জম্মভূমি মিয়ানমারে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছে রোহিঙ্গারা। তবে নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে জমি ফিরিয়ে দেওয়া, মিয়ানমারে আটককৃতদের মুক্তি, হত্যা, গনধর্ষন ও বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগের বিচারসহ তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিলেই ফিরে যাবে এমন অভিমত রোহিঙ্গা সকলের।
আগামী ২২ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার একটি দল স্বদেশ ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে।
এজন্য কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে প্রত্যাবাসন কার্য্যক্রম এগিয়ে চলছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি, ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি), এনজিও কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা মাঝিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।
তবে প্রত্যাবাসনের তালিকায় কারা বা কে কে রয়েছেন তা এখনো প্রকাশ করেনি এবং তাদের নামও জানা যায়নি। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত প্রত্যাবাসনে আগ্রহীদের তালিকা গোপন রাখা হয়েছে। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য ক্যাম্প ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৭ থেকে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার একটি দল প্রস্তুত রয়েছে। টেকনাফ কেরুনতলী প্রত্যাবাসন ঘাট ও নয়াপাড়া শালবন রোহিঙ্গা শিবির পরির্দশন এবং সেখানকার রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে নয়াপাড়া শালবাগান ক্যাম্পে (নং- ২৬) ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) অফিসের পাশে ত্রিপলের ছাউনি ও ঘেরা দিয়ে ছোট ছোট ঘর নির্মান করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত এমন রোহিঙ্গা পরিবারকে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে এনে সেখানে রাখা হবে।
রোহিঙ্গা নেতা মোঃ জাকারিয়া জানান, সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরের আগেই তিনটি বৈঠক করেছেন ইউএনএইচসিআর, সিআইসি ও অন্যান্য এনজিওদের সাথে। ওখানে প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। তবে কারা প্রত্যাবাসনের তালিকায় রয়েছেন জানাইনি। স্বেচ্ছায় যারা মিয়ানমারে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রত্যাবাস করা হবে। জোর করে কাউকে পাঠানো হবে না বলে কর্মকর্তারা আশ্বস্থ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, তাদের পক্ষ থেকে পুনরায় তাদের ন্যায্য অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে জমি ফিরিয়ে দেওয়া, মিয়ানমারে আটককৃতদের মুক্তি, হত্যা, গনধর্ষন ও বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগের বিচারের দাবী রয়েছে। এসব দাবী পুরণ হলে স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা।
নয়াপাড়া শালবাগান ক্যাম্পের (নং-২৬) রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) সামশুল আলম বলেন, রাখাইনে সেনাদের হাতে নির্যাতিত হয়ে এদেশে আশ্রয় নিয়েছি। কোন বিচার ছাড়া ফের মিয়ানমারে ঠেলে দিলে নিশ্চিত মৃত্যু মেনে নেওয়া। তার চেয়ে এদেশেই মরবো, তবু মিয়ানমারে ফিরব না।
একই ক্যাম্পের সাধারন এক রোহিঙ্গা মোঃ লালু জানান, শুনেছি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। তবে হঠাৎ করে কারো সঙ্গে কথা না বলে এই প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা রোহিঙ্গাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে এবং এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে কানাঘুষা চলছে।
টেকনাফের জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (নং- ২৭) চেয়ারম্যান মৌলানা নুর বশর বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হউক সেটি আমরা চাই। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার ও নিজ দেশে নাগরিকত্ব দিলে ফেরত যেতে প্রস্তুত। এভাবে হঠাৎ করে প্রত্যাবাসনে আমরা উদ্বিগ্ন।
টেকনাফ নয়াপাড়া শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প (নং- ২৬) এর ইনচার্জ মোঃ খালিদ হোসেন জানান, প্রত্যাবাসনের জন্য ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের তালিকা হাতে পেয়ে অনেক রোহিঙ্গা পরিবারের কাছে বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। যাদের কাছে বার্তা পৌঁছেনি তাদেরকে মঙ্গলবারের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। এজন্য এনজিও কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা মাঝিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।
সেখানে প্রত্যাবাসনের বিষয়সহ ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোাচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো জানান, কোন রোহিঙ্গাকে জোর পূর্বক প্রত্যাবাসন করা হবে না। ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য স্ব স্ব ক্যাম্পের ইনচার্জ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যাবাসনের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে এবং প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। তবে এমুহুর্তে কতজনকে প্রত্যাবাসন করা হবে তা বলা যাচ্ছেনা।
উল্লেখ্য গত বছরের ১৫ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদে প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারেনি।
-এটি