আওয়ার ইসলাম: ভারতের ৪৯জন বিখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক, চিত্রনির্মাতা, মানবাধিকারকর্মী এক চিঠিতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন।
এসব বুদ্ধিজীবীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন বলে জানা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিম, দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধর্মীয় নির্যাতনের ঘটনায় আক্রান্তদের জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। তাছাড়া, নির্বাচনের পরে পার্লামেন্টে মুসলিম সদস্যরা যখনই শপথ গ্রহণ করছিলেন, বিজেপি সদস্যরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে পার্লামেন্ট মুখরিত করেন।
চিঠিতে মোদী সরকারের শাসনামলে ধর্মীয় নির্যাতনের হার বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে লেখা হয়, ‘ভারতে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২৫৪টি ধর্মীয় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ২০১৪ সালে আপনি(মোদী সরকার) ক্ষমতায় আসার পরে ৯০ শতাংশ ধর্মীয় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।’
‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে ক্ষমতাসীন সরকার বিজেপি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কোন সন্দেহ নেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাঠানো চিঠিতে জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) প্রতিবেদন উল্লেখ করে লেখা হয়, ২০১৬ সালে প্রায় ৮৪০ জনকে ধর্মের নামে হত্যা করা হয়।
তারা দাবি করেন,‘ভারতে বসবাসরত মুসলমান, দলিত ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিনা বিচারে হত্যা যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের পার্লামেন্টে ধর্মীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা প্রকাশ করেন। কিন্তু চিঠিতে বুদ্ধিজীবীরা দাবি করেন, মোদীর নিন্দাই যথেষ্ট না। মোদী সরকারের উচিত ধর্মীয় হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার আসামিদের জামিন বাতিল ঘোষণা করা ও জড়িতদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা।
বুদ্ধিজীবীরা প্রশ্ন করেন, হত্যার আসামিকে প্যারোলো বিহীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাহলে যারা ধর্মীয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের জামিন কেন বাতিল করা হবে না? কারণ ধর্মীয় হত্যাকাণ্ড আরো নিষ্ঠুর।
চিঠিতে অপর্ণা সেন, শ্যাম রামচন্দ্র গুহ, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, অনুরাগ কাশ্যপের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা স্বাক্ষর রয়েছে। তাছাড়া, চিঠির বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন সমাজতাত্ত্বিক আশিস নন্দী, লেখক অমিত চৌধুরী, ঐতিহাসিক রাম গুহ, পার্থ চ্যাটার্জি, সুশোভন ও তনিকা সরকার-সহ আরও অনেকে।
গত কয়েক সপ্তাহ আগে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বিজেপি সরকারের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ করেন।
তিনি দাবি করেন, জয় শ্রীরাম বাঙালির সংস্কৃতির সাথে জড়িত না। এটি বিজেপি সরকার বাংলায় আমদানি করে বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনষ্টের চেষ্টা করছে।
-এটি