তানভীর সিরাজ
অথিতি লেখক
কুরবানি একটি ওয়াজিব আমল। মর্যাদার দিক দিয়ে ফরজের পরে যার অবস্থান। এটি হজরত ইবরাহীম আ. এর সুন্নত এবং স্মৃতি। সাহাবাগণ জানতে চেয়েছেন, 'তাতে আমাদের জন্য কি কোনো সওয়াব আছে ?' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, ঐ কুরবানির পশুর প্রত্যেক লোমের পরিবর্তে এক একটি করে সওয়াব লেখা হবে, দেয়া হবে। (মিশকাত: ১২৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর প্রত্যেক বছর কুরবানি করেছেন এবং কুরবানি করতে জোর তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামি শরিয়াহ বোর্ডের সর্বোচ্চ ফিকাহ পরিষদের মতামত হচ্ছে কুরবানি একটি ওয়াজিব আমল। সামর্থ্যবান প্রত্যেক পুরুষ- মহিলা এটি অবশ্যই আদায় করবেন।
কুরবানি করতে হয় উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি জবাই করে। মানবতার ধর্ম ইসলাম নীতির মালা দিয়ে প্রতিটি আমলকে মালা গেঁথে দিয়েছে, যাতে আমল করতে সহজ হয়, এবং চক্রান্তকারী চক্রান্তে পা না বাড়াই। আসুন, এবার আমরা 'কুরবানির পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইসলামি নীতিমালা কী কী - এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার করি।
কোন পশুর কেমন বয়স প্রয়োজন: উট পাঁচ বছর বয়সের। গরু এবং মহিষ কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছর হওয়া আবশ্যক। তবে ৬/৭ মাসের ভেড়া বা দুম্বা দেখতে যদি ১ বছরি বাচ্চার মত দেখা যায় বা মনে হয়, তা দিয়ে কুরবানি শুদ্ধ হবে, এরচেয়ে কম বয়সী হলে হবে না। পক্ষান্তরে উট,গরু, মহিষ এবং বকরির ক্ষেত্রে বর্ণিত বয়সের একদিন কম হলেও কুরবানি বৈধ হবে না। প্রসঙ্গত, কুরবানির পশুর বয়স আরবী মাস ও বৎসর হিসেবে গণনা করতে হবে। (শামী, ৯/৪৬৫-৬৬, হিন্দিয়া:৫/২৯৭)
চার পায়ের পশু যদি তিন পায়ে হাটে: আপনার কেনা পশু যদি চার পায়ে হাটতে না পারে, বা এক পা মাটিতে রাখতে না পারে অথবা ভরও করতে না পারে এমন পশুর কুরবানি জায়েয হবে না।
-জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭
জীর্ণশীর্ণ পশুর কুরবানি: কুরবানির পশু এমন জীর্ণশীর্ণ ও দুর্বল হওয়া, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না- এমন পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ হবে না। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
দাঁতবিহীন পশু দিয়ে কুরবানি: দাঁতবিহীন পশু বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য খেতে পারে না, এবং চিবিয়ে খেতে পারে না। - এমন পশু নিয়েও কুরবানি করলে কুরবানি হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮
ভাঙা শিং বা ফাটা শিং এর পশু: যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানি করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭
কুরবানির পশুর কান আর লেজ: কুরবানির পশুর কান আর লেজ যদি অর্ধেক কেটে যায়, অথবা অর্ধেকের চেয়ে বেশি কেটে যায় তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানি শুদ্ধ হবে না। আর অর্ধেকের চেয়ে বেশি বিদ্যমান থাকে তা দিয়ে কুরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু জন্মগতভাবে যদি কান ছোট থাকে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।-
জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮
দৃষ্টিহীন কুরবানির পশু: কুরবানির পশুর যদি দুই চোখই অন্ধ হয়, বা একটি অন্ধ থাকে তা দিয়ে কুরবানি শুদ্ধ হবে না। - জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
যে পশুটি কুরবানি করতে হয়: যে পশু হৃষ্টপুষ্ট হবে, সুদর্শন ও অধিক মূল্যের হবে, এবং নাদুসনুদুস হবে- সেটিই কুরবানির উত্তম পশু বলে গণ্য হবে। গর্ভবতী পশু দিয়েও কুরবানি করা যায়, তবে তার প্রসবের সময় যদি ঘনিয়ে আসে তা হলে তা দিয়ে কুরবানি করা মাকরূহ বলা হয়েছে। কুরবানির পশু বন্ধ্যা হলে তা দিয়েও কুরবানী জায়েয। বরং অনেকে উত্তমও বলেছেন। -কাযীখান ৩/৩৫০ মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩, -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
আরএম/