রকিব মুহাম্মদ: পাকিস্তানের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও লস্করে তৈয়্যবা ও জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান মৌলানা হাফিজ সাইদকে গ্রেফতার করল পাক প্রশাসন। গ্রেফতারের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার লাহোর থেকে গুজরানওয়ালা যাওয়ার পথে পাঞ্জাব প্রদেশের কাউন্টার টেররিজম স্কোয়াড তাকে গ্রেফতার করে বলে পাকিস্তানের শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর দিয়েছে।
পাঞ্জাবের সন্ত্রাস দমন দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জামিন চাইতে গুজরানওয়ালার দিকে যাচ্ছিলেন হাফিজ। গুজরানওয়ালার কাছ থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
হাফিজ সাঈদের গ্রেফতারের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বললেন, ১০ বছর ধরে খোঁজাখুজির পর মুম্বাই হামলার স্বঘোষিত ‘মাস্টারমাইন্ড’কে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান। তাকে খুঁজতে গত দুই বছরে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছে”।
https://twitter.com/realDonaldTrump/status/1151495794295525378
ট্রাম্পের এই টু্ইটের জবাবে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংস্থা পাল্টা টুইটে বলে, দশ বছর ধরে তাকে খোঁজ করা হচ্ছে না। ২০০১ সালের ডিসেম্বর, ২০০২ সালের মে, ২০০২ সালের অক্টোবরে, ২০০৬ সালের আগস্টে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে, ২০০৯ সালের সেপ্টম্বর এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে গ্রেফতার করে এবং ছেড়ে দেয় পাকিস্তান।
https://twitter.com/HouseForeign/status/1151528767933886464
বিবিসি উর্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌলানা হাফিজ সাঈদের সংগঠন জামাতুদ- দাওয়া, লস্করে তৈয়্যবা, ফালাহে ইনসানিয়্যাত-এর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অপরাদ দমন শাখা (সিডিডি)।
সিডিডির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, হাফিজ সাঈদের সংগঠনগুলো সন্ত্রাসীদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করে বলে তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ জানায়, ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় পাকিস্তান সরকার বেআইনি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করছে, তারই অঙ্গ হিসাবে হাফিজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তান জঙ্গিদের অর্থের জোগান দিচ্ছে অভিযোগ করে সম্প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দেয় আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএফএম ও এফআইটিএফ। জানানো হয়, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের জোগান দেওয়া বন্ধ না করলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
এই হুঁশিয়ারির পর ইসলামাবাদের সন্ত্রাস দমন দফতর জানায়, জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য দেওয়ার অভিযোগে হাফিজসহ কয়েকজন জঙ্গি নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তারা। বুধবার (১৭ জুলাই) তাকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৮ এর মুম্বয়ের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সন্ত্রসী হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিল। ওই হামলার পর থেকে মৌলানা সাঈদ ভারত ও মার্কিন প্রশাসনের নজরে রয়েছে। ওই হামলার পরই হাফিজ সাঈদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০১২ সালে আমেরিকা তাকে ধরে সাজা দেওয়ার জন্য ভরসাযোগ্য তথ্য দিলে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
২০১৫ সালে পাকিস্তানে মৌলানা হাফিজ সাঈদের সকল সংগঠনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত তিনবার তাকে গৃহবন্দি করেছে পাক সরকার।
২০১৭ সালে হাফিজ ও তার ৪ সহযোগীকে সন্ত্রাস দমন আইনের অধীনে আটক করে পাকিস্তান সরকার। তবে পাঞ্জাবের জুডিশিয়াল রিভিউ বোর্ড বন্দিদশা বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ১১ মাস পরেই মুক্তি দেয় তাদের।
সূত্র: বিজনেস লাইন
আরএম/