আওয়ার ইসলাম: দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন— এমন অভিযোগের পর দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর প্রায় শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়। এ অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা করে বিপুল সম্পদ গড়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শুধু নিজের নামেই সম্পদ গড়েননি, ভাই ও ভাগ্নের নামেও সম্পদ করে দিয়েছেন ডিআইজি মিজান।
উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় গত ৪ জানুয়ারি। এরই মধ্যে তিনি অনুসন্ধান চালান। পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী এই অনুসন্ধান কার্যক্রম তদারক করেন।
মিজানের সম্পদের কিছু তথ্য:
১. সাভারে পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটিতে নিজের নামে ৫ কাঠা জমি।
২. পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ৫ কাঠা জমি।
৩. ঢাকায় পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির পুলিশ টাউনে সাড়ে ৭ কাঠার প্লট।
৪. বরিশালের মেহেদিগঞ্জ পৌরসভায় ৩২ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা ভবন।
৫. স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার নামে উত্তরা রেসিডেন্সিয়াল মডেল টাউনে ১ হাজার ৭৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
৬. রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপনের নামে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
৭. রাজধানীর কোতয়ালী থানার পাইওনিয়ার রোডে ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানের নামে ১ হাজার ৯১৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
৮. কানাডার টরন্টোতে আছে ডিআইজি মিজানের নামে একটি ফ্ল্যাট।
৯. একটি কালো পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন ডিআইজি মিজান। তবে তার প্রকৃত মালিক কে, সে বিষয়ে তথ্য জানাতে পারেনি দুদক।
এছাড়া মিজানের দুই সন্তান কানাডায় পড়াশোনা করে। তাদের জন্য মাসে খরচ ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
বরখাস্ত হওয়া দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির গত ২৩ মে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ অনুসন্ধান প্রতিবেদন সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজানের ৪ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকার সম্পদ আছে। এর মধ্যে তার নিজের নামে আছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার টাকার স্থাবর ও ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। বাকিটা আছে ডিআইজি মিজানের আত্মীয়-স্বজনের নামে আছে।
দুদক জানায়, ডিআইজি মিজান তার আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ডিআইজি মিজানের স্ত্রী রত্নার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়নি। তবে তার বিরুদ্ধে এখনও অনুসন্ধান চলছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মেহেন্দীগঞ্জের আম্বিকাপুরের আলী আকবরের দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে মিজানুর রহমান তৃতীয়। তাদের পরিবারে দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। ১৯৮০ সালে মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট পিএম স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন মিজান। ১৯৮২ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখাপড়া শেষ করে পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পর ভাগ্য ঘুরে যায় তার।
আরএম/