‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’। সাম্প্রতিক আত্মপ্রকাশ করা আলোচিত ও সমালোচিত সংগঠন। জঙ্গি সনাক্তের নামে ইসলাম ধর্মের অন্যতম নিদর্শন দাঁড়ি- টুপি রাখলে জঙ্গি হবে এমন বক্তব্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও বিক্ষোভের ডাক আসে। এ বিষয়ে আগামী শুক্রবার ইসলামী ঐক্যজোট বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা করে। তবে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্বের বিজ্ঞাপনের সাথে নিজেদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন আওয়ার ইসলামের রকিব মুহাম্মদ ও মোস্তফা ওয়াদুদ।
আওয়ার ইসলাম: ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামক একটি সংগঠন জঙ্গি সনাক্তকরণের নামে কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তাদের এ বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র সারাদেশের আলেম-ওলামা, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অস্বস্তি ও অস্থিতিরতা তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদ মূখর রয়েছে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। আজ (১৬ মে) সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেছে, পত্রিকায় প্রচারিত বিজ্ঞাপনের সাথে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মর্মে প্রত্রিকায় নতুন একটি বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করেছ ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’। এ দাবিকে আপনি কতটা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : প্রথম যে বিজ্ঞাপনটি পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছে, সেটির বিষয়ে দুটি কথা বলতে চাই।প্রথমত বিজ্ঞাপনে আমরা যে বাহ্যিক বিষয়গুলো দেখেছি, সেটা শুধুমাত্র বাহ্যিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং পরিপূর্ণরুপে ইসলামের বিরুদ্ধে একটি আঘাত ছিল। আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিলো। আল্লাহর একত্তবাদের উপরে চূড়ান্তভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনে সরাসরি ইসলাম ও মুসলমানকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বলে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা কোনো মুসলমান মেনে নিতে পারে না। মুসলমানদের বুকের উপর বসে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে আর তারা চুপ করে থাকবে, এটাতো হতে পারে না।
ইসলাম, রাষ্ট্রদ্রোহী, সংবিধান ও দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী হায়েনা অপশক্তি আমাদের বুকের উপর বসে আমাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করবে, মুসলমানকে গালিগালাজ করবে, ইসলামের আকীদা বিশ্বাসের উপর ঘৃণার সুনামি বয়ে দিবে, অশ্লীলতা আর বেহায়াপনাকে মার্কেটিং করবে, আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো তা হতে পারেনা। বাংলাদেশ তাদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিবে- ইনশাআল্লাহ্ ।
তাই সারাদেশের আলেম ওলামা ও সাধারণ মুসলমান এ বিজ্ঞাপনে প্রচারিত বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এবং ইসলামী ঐক্যজোটও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণাও করেছিল। অন্যদিকে এ বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে পাল্টা বিজ্ঞাপন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
আমরা মনে করি, আগের বিজ্ঞাপন প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে পীযূষ সাহেবদের মামলা করতে হবে। পীযুষদেরকেই প্রমাণ করতে হবে, বিজ্ঞাপনটি তাদের নয়। তাহলেই প্রমাণিত হবে এর সাথে তাদের সংশ্লিষ্ট নেই। সেই সাথে তাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ । তাছাড়া বাংলাদেশ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের দেশ। এখানে কোনো ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মকে আঘাত করবে বা উস্কানি দিবে এমন ক্ষমতা কারো নেই। এটা সুস্পষ্ট সংবিধান বিরোধী।
আওয়ার ইসলাম : সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক পীযুষ প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি তাদের নয় বলে দাবি করেছেন, এই দাবি ও বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : এতদিন পরে এসে অস্বীকার করার দ্বারা এক ধরণের সন্দেহ তো থেকেই যায়। কেননা প্রকৃতপক্ষেই যদি এ বিজ্ঞাপনটি তাদের না হতো, তাহলে তারা এত দেরি করে কেনো অস্বীকার করলো? আর সত্যিকারে যদি তারা এমন বিজ্ঞাপন প্রচার না করে থাকে, তবে তাদের নাম বিক্রি করে এমন জঘন্য কাজ কে করেছে সেটা তারা খুঁজে বের করুক। প্রয়োজনে মামলা করুক।
এর পেছনে কারা জড়িত তাঁদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক। তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রদান না করা পর্যন্ত তাওহীদবাদীদের আন্দোলন থামবে না।
আওয়ার ইসলাম : দ্বিতীয় নতুন বিজ্ঞাপনে তারা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে বক্তব্য দিয়েছে। তাদের এ বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : তারা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন, আমরাও সকল ধর্মের প্রতি সহনশীল। দেশের সকলের এটা নৈতিক দায়িত্ব। তাছাড়া পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এখনো আছে। তাদের কাছে বিজ্ঞাপন কারা পৌঁছিয়েছে? এত টাকা তাদের একাউন্টে কারা পাঠিয়েছে, এ বিষয়ে সার্বিকভাবে কারা জড়িত, এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
আমি মনে করি, এ দেশের আলেম ওলামা ও সাধারণ মানুষ তাদের ধর্মীয় উসকানিকে মোটেও পছন্দ করেনি। তারা প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেছে এবং তাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। তাই তারা এখন বাধ্য হয়ে এটা অস্বীকার করছে। এটা তারা প্রচার করেনি বলে দাবি করছে।
আমরাও মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি দুটি বিজ্ঞাপন। পূর্বের প্রচারপত্রের শেষে ছোট্ট করে 'সম্প্রীতির বাংলাদেশ' লেখা আছে। সেখানে কোনো সংগঠনের লোগো বা কারও নাম নেই। তাহলে সেই প্রচারপত্র 'সম্প্রীতির বাংলাদেশ' নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে না হওয়ারও আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এদিকে, স্পষ্ট করে অস্বীকার করাটা দেশের তাওহীদবাদী মানুষের আন্দোলন ও প্রতিবাদের প্রাথমিক ফসল বলে আমি মনে করি।
আওয়ার ইসলাম : কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদের প্রাথমিক সফলতার জন্য কিভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : এর জবাবে আমি নিজের কোনো কথা বলতে চাই না। উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ, যাত্রবাড়ী বড় মাদরাসার মুহতামিম, মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসানের কথার মাধ্যমে এর জবাব দিতে চাই। গতবছর যখন দিল্লির মাওলানা সাদের ব্যাপারে সাধারণ মুসুল্লিদের আন্দোলন চলছিলো। এক পর্যায়ে সাদ সাহেব ফিরে যাবেন মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক এরপর পরই রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নীতি নির্ধারনীএকটি বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, আন্দোলন সফল করতে দুই পথে অগ্রসর হতে হবে।
১. আন্দোলনের রাজপথ।, ২. আলোচনার খোলা টেবিল। অর্থাৎ, একদিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, আবার আলোচনাও জারি রাখতে হবে। তার এ কথাটি আমার হৃদয় ছুঁয়েছে।
আজ শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশে যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। আমি মনে করি, তারা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অতএব, দেশের শান্তি বজায় রাখতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। আবার খোলা টেবিলের আলোচনাও অব্যাহত থাকবে।
আওয়ার ইসলাম : তবে আপনি কী বলতে চাচ্ছেন যে এ বিষয়ে আন্দোলনের প্রাথমিক সফলতা আপনারা পেয়েছেন?
মুফতি ফয়জুল্লাহ : এটি আমাদের একক কোনো সফলতার বিষয় নয়। এদেশের সকল হক ও হক্কানিয়্যাতে দলগুলো মিলে যখন আন্দোলন করেছে তখনি সফলতা এসেছে। এ ব্যাপারে ইসলামী ঐক্যজোট আগামী শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল। তাদের এ বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করার কারণে আমরা আগামীকালকের কর্মসূচিকেও স্থগিত করেছি।
তবে তার মানে এই নয় যে, অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। বরং যখনি এ জাতীয় দেশদ্রোহী ও আল্লাহদ্রোহী ইসলাম বিদ্ধেষী চক্র ইসলামকে নিয়ে ভ্রান্তি ছড়াবে তখনি আমরা তাদের মোকাবেলা করবো। যেহেতু তারা অস্বীকার করছে যে, এ বিজ্ঞাপনের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই যারাই এ কাজটি করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আরএম/