মুফতি মোস্তফা ওয়াদুদ কাসেমী । ।
নামাজ জান্নাতের চাবি। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, নামাজ বেহেস্তের চাবি। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)
নামাজ মুমিনের মেরাজ। নামাজই অন্তরের প্রশান্তি। একজন সত্যিকারের মুসলমান কখনো নামাজ ছাড়তে পারেন না। মাহে রমজানসহ সারা বছরই আল্লাহর কাছে বান্দার আনুগত্য প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হলো নামাজ। কেননা নামাজ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের প্রধান নিদর্শন।
আল্লাহ তয়ালা যেসব ইবাদত ফরজ করে দিয়েছেন তন্মধ্যে নামাজ অন্যতম। পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজের কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো ও জাকাত প্রদান করো আর রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রমজান মাসে সব ফরজ ইবাদতের মধ্যে নামাজই সবচেয়ে অগ্রগণ্য। নামাজ ঈমানকে মজবুত করে। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভ। ঈমানের পরই নামাজের স্থান। নামাজ বারো মাসই আদায় করতে হয়। আর রোজা শুধু মাহে রমজানে ফরজ। একজন মুমিন বছরজুড়ে নামাজ আদায় করবেন এটাই স্বাভাবিক।
এরপর যখন পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটবে, তখন নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রমজানের রোজাগুলোও পালন করবেন। একজন রোজাদার শুধু রোজা রাখবেন, নামাজ পড়বেন না এমনটা কখনও কল্পনা করা যায় না। নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর আলোচনা রয়েছে।
তবে এরপরও দেখা যায় অনেক ভাই রমজানে নামাজের প্রতি অনেক গাফলতি করেন। কষ্ট করে রোজা রাখেন কিন্ত নামাজের সময় হলে ঠিকমতো নামাজ আদায় করেন না। তাদের এ নামাজহীন রোজা কি আদায় হবে? ইসলাম এ ব্যাপারে কী ব্যাখ্যা দেয়?
বর্ণিত বিষয়টি মতানৈক্যপূর্ণ। হাদীসে উভয় রকমের বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে ইমামগণের ইজমা হলো, নামাজ যেভাবে ফরজ বিধান । তেমনি রোজাও একটি ফরজ বিধান। কেউ যদি নামাজ না পড়ে। শুধু রোজা রাখে। তাহলে তার রোজা আদায় হবে। আর নামাজ না পড়ার গোনাহ তাকে ভোগ করতে হবে।
আবার এর বিপরীত দলের বক্তব্য হলো, নামাজ না পড়লে রোজা আদায় হবে না। কেননা রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আছরের নামাজ ত্যাগ করে তার সকল আমল বাতিল। (বুখারী-৫২০)
এ হাদিসের উপর ভিত্তি করে তারা বলেন, কেউ যদি শুধু রোজা রাখে আর নামাজ না পড়ে তাহলে রোজা কবুল হবে না। তবে ইবনুল কায়্যিম ‘নামাজ’ নামক গ্রন্থের ৬৫ পৃষ্ঠায় (যে ব্যক্তি আছরের নামাজ ত্যাগ করে তার সকল আমল বাতিল) এ হাদিসের মর্মার্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
বে-নামাজি লোক দুই ধরণের। ১. পুরোপুরিভাবে নামাজ ত্যাগ করে। কোন নামাজই পড়ে না। এ ব্যক্তির সমস্ত আমল বিফলে যাবে।, ২. বিশেষ কোন দিন বিশেষ কোন নামাজ ত্যাগ করে। এক্ষেত্রে তার বিশেষ দিনের আমল বিফলে যাবে।
সুতরাং নামাজ না পড়ে রোজা রাখলে রোজা আদায় হবে না এমনটা বলা যাবে না। (আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন)।
আর রোজা রেখে রোজা ভঙ্গকারীদের ব্যাপারে হাদিসে কঠিন শাস্তির বর্ণনা পাওয়া যায়। তাদের উদ্দেশে রাসূলুল্লাহ সা. লম্বা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একসময় ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুইজন আগন্তুক এসে আমার হাত ধরে টেনে তুলে একটি উঁচু পর্বতের কাছে নিয়ে বলল, উপরে উঠুন।
আমি বললাম, আমি উঠতে পারি না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সাহায্য করব। এরপর আমি পর্বতের চূড়ায় উঠলাম। সেখানে আমি আর্তচিৎকার শুনতে পেলাম। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা হলো জাহান্নামবাসীদের আর্তনাদ।
আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলে আমি দেখলাম। কিছু মানুষকে পায়ে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের মুখের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ওরা কারা? তারা বলল, এরা হলো তারাই, যারা রোজা রেখে সময় হওয়ার পূর্বেই রোজা ভেঙে ফেলত।’
তাহলে একবার চিন্তা করুন, সারাদিন রোজা রেখেও শুধু একটু গুরুত্ব না দেয়াতে যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে যারা মোটেও রোজা রাখে না, তাদের অবস্থা কী হবে?
আর যারা নামাজ ছাড়া শুধু রোজা রাখে, তাদের অবস্থাই বা কী হবে? তাই মাহে রমজানের পরিপূর্ণ সওয়াব পেতে হলে রোজা পালনের পাশাপাশি অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।
এমডব্লিউ/