মুফতি ফয়জুল্লাহ
মহাসচিব ইসলামী ঐক্যজোট
তথাকথিত ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এবং এর প্রধান পীযুষ বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অমুসলিমদের পক্ষ থেকেও সোচ্চার প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। মসজিদে মসজিদে যদি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আলোচনা কাম্য হয় তাহলে মন্দিরে মন্দিরে, গির্জায় গির্জায় মুসলিম জনগণের ধর্মানুভূতি এবং ধর্মীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে, মহান আল্লাহর ইবাদাতের মর্যাদা রক্ষার আলোচনাও কাম্য।
মানব সৃষ্টি নিয়ে মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (সুরা আযযারিয়াত-৫৬)।
অতএব প্রতিটি নরনারীর কর্তব্য মহান আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা। ইবাদতের ক্ষেত্রে তারা পরিপূর্ণ একাত্ম হবে কুরআনে ঘোষিত এই নীতির সাথে নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার বেঁচেথাকা ও আমার মৃত্যু মহান রাব্বুল আলামিনের জন্য।
মুসলিম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও একমাত্র আল্লাহর অধীনতা। মহান আল্লাহর প্রতিটি আদেশ নিষেধ পালন ও নিজকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় আধ্যাত্মিকতা।
আর আধ্যাত্মিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে বান্দা মহান আল্লাহ জন্য এবং তাঁর প্রেরিত দীনের হেফাজতের জন্য অর্থ,শ্রম ও মেধাসহ নিজের জীবনেরও নজরানা পেশ করে। নামাজ-রোজা,হজ-জাকাত,কুরআন তিলাওয়াত, দাঁড়ি, টুপি, হিজাব, টাখনোর উপর কাপড় পরিধান, হঠাৎ করে আল্লাহমুখী হওয়া , নীরবে ইবাদতে লিপ্ত হওয়ার ন্যায় প্রতিটি ইবাদতের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য মু’মিনের জীবনে রুহানী বা আধ্যাত্মিক বিপ্লব আনা।
ইবাদত আঘাত হানে অস্ত্রধারী শয়তানের মূল অস্ত্রগুলির উপর। আল্লাহর বিধানও আল্লাহর ইবাদাত আঘাত করে দুনিয়ার মোহ,মৃত্যুর ভয়, অশ্লীলতা, যৌনতার, লিপ্সা,অতিকথন এবং কুৎসা ও গীবত রটনারসহ সকল পাপাচারের নেশার উপর। মূলত শয়তান অধিকৃত মানুষ নামের হিংস্র প্রাণী গুলোর ভয় এখানেই।
অন্য দিকে শয়তানী চক্রের মূল এজেন্ডা হলো, মানব জাতির জন্য জান্নাতের পথে চলা, সিরাতে মুস্তাকিমের উপর অটল থাকাকে অসম্ভব করে তোলা। মানব সন্তান যাতে জান্নাতের পথে চলতে না পারে -সেটিই শয়তান ও তার অনুসারিদের সর্বদেশে এবং সর্বসময়ে মূল লক্ষ্য।
আর জান্নাতের পথ থেকে দূরে রাখার সহজতম উপায় হলো পৃথিবীর বুকে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম-পালন অসম্ভব করা। সে লক্ষ্যটি পূরণ করতেই তারা ইসলামি ইবাদত এবং ইসলামের নিদর্শনাবলী ও নিয়ম নীতির বিরোধিতা করে,করছে ও করবে।
বাংলাদেশি মুসলমানদের প্রতি ইসলাম দ্রোহীদের আচরণটা উগ্র। ইসলাম বিদ্বেষীরা অবলম্বন করেছে চরম্পন্থা ও তাদের অপতৎপরতা জঘন্য উস্কানিমূলকও। অত্যান্ত নীচু, হীন ও আক্রমনাত্ত্কক তাদের ভাষা। তারা মুসলমানের আকিদা বিশ্বাসের উপর নিষ্ঠুর বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ দিন থেকে।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ইসলামি চেতনা, ইসলামের প্রতি মানুষের সীমাহীন দরদ- ইসলাম বিদ্বেষীদের দেহ-মন পুড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আল্লাহ দ্রোহীরা ইসলামি চেতনাকে সবসময় নিজেদের নিরাত্তার জন্য হুমকী মনে করে।
ইমানি চেতনায় উজ্জীবিত মানুষগুলোকে যে দমন করা অসম্ভব -সেটি অপশক্তি খুব ভালো করেই বুঝে। তাই তারা রীতিমত যুদ্ধ শুরু করেছে দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামি ইবাদাত নির্মূলে।
পাপুয়া নিউগিনি বা আন্দামানের দ্বীপে বহু মানব সন্তান আজও পশুর ন্যায় জঙ্গলের গুহায় উলঙ্গভাবে বাঁচে মূলতঃ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সে প্রক্রিয়া পাড়ি না দেয়ার কারণে। অথচ অন্য মানুষদের থেকে দৈহিকভাবে তাদের মাঝে কোন ভিন্নতা নেই।
এমনকি যারা নিছক বাঁচার স্বার্থে বাঁচে তেমন মানুষরূপী বহু ভদ্রবেশী পশুও ইসলামি প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বুঝে না। এরাই ঘৃণা ও বিদ্বেষের অস্ত্র হাতে পেলে পশুর চেয়েও হিংস্রতর হয়ে উঠে ইসলামের বিরুদ্ধে ।
প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, আমাদের আলেম-ওলামা অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে এবং অমুসলিমের সাথে মুসলিমের নিরাপদ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ও ইসলামের সম্পূর্ণ ইনসাফপূর্ণ ও স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ে বলে আসছেন, লিখে আসছেন। আমরা মনে করি এই অনুশীলন অমুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যেও বিস্তার লাভ করা প্রয়োজন। কোনো অমুসলিমের মাধ্যমে ইসলাম অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটলে ঐ ধর্মের ধর্মগুরু ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
তথাকথিত ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এবং এর প্রধান পীযুষ বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অমুসলিমদের পক্ষ থেকেও সোচ্চার প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। মসজিদে মসজিদে যদি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আলোচনা কাম্য হয় তাহলে মন্দিরে মন্দিরে, গির্জায় গির্জায় মুসলিম জনগণের ধর্মানুভূতি এবং ধর্মীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের, মহান আল্লাহর ইবাদাতের মর্যাদা রক্ষার আলোচনাও কাম্য।
সবাই জানেন, ইসলামি শরিয়তের ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর খলিফা রূপে প্রতিটি ইমানদারের। সে মহা মর্যাদাকর দায়িত্ব পালনে প্রকৃত মু’মিন যে প্রয়োজনে সর্বস্ব বিলিয়ে দিবে সেটিই স্বাভাবিক।
আমরা মনে করি, এখনো সময় আছে- তথাকথিত ‘ সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এবং এর প্রধান পীযুষ বন্দোপাধ্যায়রা উগ্রতা,চরম্পন্থা,সন্ত্রাস ও উসকানিমূলক তৎপরতা পরিহার করবে এবং অবিলম্বে তারা তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে মানুষের মনের ক্ষোভ , কষ্ট ও বেদনা লাঘব করবেন এবং সরকার সম্প্রীতি বাংলাদেশ" নামক উগ্রবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পীযুষ বন্দোপাধ্যায়দের গ্রেফতার করে তাদের শিকড় খুঁজে বের করবে।
যদি তা না করেন, তবে আল্লাহর খলিফাগণ আগামীতে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। উম্মতের অস্তিত্ব রক্ষা ও নবচেতনায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সুচিন্তিত পরিকল্পনার আওতায় গঠনমূলক ও দেশ জাতির জন্য কল্যাণমুখী কর্মসূচী নিয়ে তাঁরা এগিয়ে যাবে।
কে কতটা মানুষ না অমানুষ, সভ্য না অসভ্য -সেটি পোষাক-পরিচ্ছদ বা চেহরা-সুরতে বুঝা যায় না, বুঝা যায় ন্যায়-অন্যায়ের বিচারবোধ থেকে। সে বিচার বোধ পাপাচারী, আল্লাহ দ্রোহীদের থাকে না। সে বিচারবোধটি না থাকার কারণেই আল্লাহ নির্দেশিত ইবাদতের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো ভয়ানক অপরাধও তাদের কাছে অপরাধ মনে হয় না।
এটি হলো তাদের মনের অসুস্থতা ও অসভ্যতা। সভ্য সমাজে এজন্যই এসব অসুস্থ ও অসভ্য গুলো জাহেল রূপে চিহ্নিত হয়। এ জাহেলদের জবাব দেয়ার ভদ্র এবং সভ্য ভাষা ও সুন্দর করণীয় বিষয় আমাদের জানা আছে ।
শেষ কথা, জং ফারসি, অর্থ যুদ্ধ,সংগ্রাম । জঙ্গি মানে যুদ্ধপ্রিয়, শ্রেষ্ঠ, যুদ্ধা, সংগ্রামী । জঙ্গিবাদ বলতে কোন কিছু আছে কি না জানি না, তবে সন্ত্রাসবাদ তো সারা দুনিয়ার সমস্যা । সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে এ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ওলামায়ে কেরাম যতটা সচেতনতা তৈরি করেছেন এবং করছেন আর কেউ তার সিকিভাগও করতে পারেননি।
প্রচলিত সন্ত্রাস অথবা আপনাদের ভাষায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ওলামায়ে কেরাম বিভিন্নভাবে বহু বার তা স্পষ্ট করেছেন। মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসবাদ রাজনৈতিক সমস্যা, ধর্মীয় সমস্যা নয়। হাজার বছর ধরে কুরআন ও হাদিস পৃথিবীতে আছে, একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী কুরআন ও হাদিসকে মাধ্যম বানিয়ে সহিংসতা করলে এর দায় ধর্মের ওপর চাপানো যাবে না।
সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এটা না করে একশ্রেণির লোক ইসলাম ও প্র্যাক্টিসিং মুসলমানদেরকে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদী প্রমাণে সর্বদা মরিয়া হয়ে আছে। জঙ্গিবাদ-বিরোধিতার নামে এরা ইসলাম-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে আমাদের দেশে।
-এটি